শাস্তির উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোচনা কর।

অথবা, শাস্তির উদ্দেশ্য বা প্রভৃতি সম্পর্কের আলোচনা কর।
অথবা, শাস্তির উদ্দেশ্য সম্পর্কে তুমি কী জান? লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা :
সমাজে অপরাধের প্রতিবিধানের জন্য শাস্তির উদ্ভব হয়েছে। শাস্তি হলো মানুষের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করার একটি উপায়। সমাজে বসবাসকারী মানুষ স্বেচ্ছায় তাদের নৈতিকতা ভঙ্গ করে এমন সব কর্ম করে যার ফলে সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা কষ্টকর হয়ে পড়ে। মানুষের এসব কর্মকে অপরাধ বলা হয়। এ অপরাধমূলক কাজ হলো সমাজ বিরোধী কার্যকলাপ। এ সমাজ বিরোধী কার্যকলাপের প্রতিবিধান হিসেবে নীতিবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে শাস্তির আলোচনা হয়ে থাকে।
শাস্তির প্রকৃতি : সমাজবিজ্ঞানী এবং অপরাধবিজ্ঞানীরা শাস্তির প্রকৃতি বিশ্লেষণে মূলত দুপ্রকার শাস্তির কথা বলেছেন । যথা :
১. সরকারি বা আইনগত শাস্তি এবং
২. বেসরকারি বা আইন বহির্ভূত শাস্তি ।
১. সরকারি বা আইনগত শাস্তি : রাষ্ট্রের রীতিনীতি, মূল্যবোধ, শৃঙ্খলা এবং রাষ্ট্র কর্তৃক প্রচলিত আইন ভঙ্গ করলে রাষ্ট্রীয় আদালত কর্তৃক যে শাস্তির ব্যবস্থা করা হয় তাকে সরকারি বা আইনগত শাস্তি বলে। এক্ষেত্রে শাস্তিসমূহ রাষ্ট্রের প্রচলিত আইন অনুযায়ী প্রদান করা হয়।
২. বেসরকারি বা আইন বহির্ভূত শাস্তি : রাষ্ট্রীয় আইনের আওতার বাইরের শাস্তিকে বেসরকারি শাস্তি বলে। এ রকম শাস্তি নানারকম সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাগত ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
শাস্তির উদ্দেশ্য : সাধারণত শাস্তির উদ্দেশ্য হিসেবে প্রতিবাদমূলক ব্যবস্থাকেই ধরা হয়। কিন্তু এ ব্যাপারে সঠিক কারণ জানতে আমাদের প্রাচীন ধ্যানধারণা, মূল্যবোধ ও মনোভাবের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে উপলব্ধি করা প্রয়োজন। তবে আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রেক্ষাপটে শাস্তি সম্পর্কে প্রাচীন ধারণার বিরোধিতা লক্ষ্য করা যায়। তাই এ বিতর্কিত বিষয়ের সমাধান Herbert Backer এর মতামতের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠে। Herbert Backer এর মতে, শাস্তির পাঁচটি উদ্দেশ্য আছে । যথা :
১. শাস্তির মধ্যে অবশ্যই কষ্ট থাকবে, যা শাস্তিপ্রাপ্ত অপরাধীর জন্য বেদনাদায়ক হবে।
২.একমাত্র স্বীকৃত কোন প্রতিষ্ঠানই শাস্তি দেয়ার ক্ষমতা রাখে ।
৩.অপরাধীকে তার অপরাধের জন্য অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।
৪.শাস্তি অবশ্যই প্রচলিত স্বীকৃত আইনের পরিপন্থী কাজের জন্য প্রযোজ্য হবে।
৫. অপরাধ অনুযায়ী শাস্তির গভীরতা এমন হওয়া উচিত, যা অপরাধ দমনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপেক্ষিতে বলা যায় যে, সুস্থ, সুন্দর সমাজ জীবনযাপনের জন্য তৈরী হয়েছে আইন এবং উদ্ভব ঘটেছে রাষ্ট্রের যখন কোন ব্যক্তি কোন নীতিবিরোধী কাজ বা আইন ভঙ্গ করে তখন তাকে বলা হয় অপরাধী। আর এই অপরাধীর উপড় আরোপিত কোন দণ্ড বা সাজাই হলো শাস্তি। শাস্তির আবার কতকগুলো উদ্দেশ্য রয়েছে। অপরাধের মাত্রার উপর নির্ভর করে অপরাধীকে শাস্তি প্রদান করা হয়। শাস্তির ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকসমূহর উপর নির্ভর করে ব্যক্তি অপরাধ প্রবণ হয়ে উঠে। তাই নানাবিধ সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্যই শাস্তির প্রয়োজন অপরিহার্য।