বিভিন্ন প্রকার আচার-অনুষ্ঠান আলোচনা কর।

অথবা, আচার-অনুষ্ঠানের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর।
অথবা, আচার-অনুষ্ঠানের শ্রেণিবিভাগ বর্ণনা কর।
অথবা, বিভিন্ন প্রকার আচার-অনুষ্ঠান সম্পর্কে বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
মানব জীবনের বজ্রগত দিকের সাথে আচার-অনুষ্ঠানের একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। মানুষ তার কর্ম জীবনের Rites & Ritual-কে সমান গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। মানুষ বিশ্বাস করে যে, কর্মের সাথে যে দৈব শক্তির নিবিড় সম্পর্ক আছে তাকে তুষ্ট বা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে মানসিক শক্তি পাওয়া যায় না। যে ব্যক্তি দক্ষ কৃষক সে জমি
চাষ থেকে শুরু করে সার্বিক পরিচর্যায় নিয়োজিত থেকেও নানা প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা থেকে মুক্ত থাকতে পারে না। তাই আচারের প্রতি তার বিশেষ আগ্রহ থাকে। এ আগ্রহ হতে বিশ্বাস এবং বিশ্বাসের মাধ্যমে লোকায়েত সমাজে আচার অনুষ্ঠানের প্রবর্তন ঘটে।
আচার অনুষ্ঠানের শ্রেণিবিভাগ বা ধরন : Ritual-কে বিশেষজ্ঞরা নানাভাবে ভাগ করেছে। A.W. Male Fizt বর্ণনা করেছেন যে, Rituals এর দু’টি কার্যকরী রূপ থাকতে পারে :
ক. Periodic Ritual . Non-periodic Ritual.
ক. Periodic Ritual Periodic Ritual হচ্ছে Regular Rituals. এই Rituals সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময়কে ঘিরে হয়ে থাকে। সাধারণত বছরের যে কোনো সময়ে বা মাসের যে কোনো একটি সময়ে এই Rituals সংঘটিত হয়। এই Rituals এর সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক মূল্য রয়েছে। আমাদের সমাজে এই Rituals সাধারণত কৃষির উপর নির্ভরশীল। কারণ আমাদের সমাজ এবং সংস্কৃতি সবই কৃষির আবর্তে আবর্তিত। এর Communal aspect রয়েছে। আমাদের সমাজে যে Rituals Periodic তা হলো ঈদ, পূজা, নবান্ন উৎসব, ১৬ই ডিসেম্বর ২১শে ফেব্রুয়ারি, পৌষ পার্বণ, চৈত্র সংক্রান্তি ইত্যাদি। এসব Ritual-গুলোকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে এর সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় মূল্য রয়েছে।
খ. Non-periodic Ritual: Non-periodic Rituals গুলো ব্যক্তিগত ও পারিবারিকভাবে হয়ে থাকে। এই Rituals এর কোনো নির্দিষ্ট সময়াবর্ত নেই। এটা সাধারণত ব্যক্তিকে ঘিরে হয়ে থাকে। তবুও এর সামাজিক মূল্য রয়েছে যেমন- জন্মদিন, বিবাহের দিন, মৃত্যুদিন ইত্যাদি ।
নৃবিজ্ঞানী A. F. C. Wallace তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘Religion an Anthropological view’-এ ধর্মীয় বিশ্বাস ও অৰ্চনা পদ্ধতিকে cult হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। সামাজিক স্তর অনুযায়ী cult-কে চার ভাগে ভাগ করা যায় । যথা-
পূজা Individualistic cult.
Shamanastic cult.
Communal cult.
Ecclesiastical cult.
1.Individualistic cult: এ পর্যায়ে ক্রিয়ানুষ্ঠান ব্যক্তিভিত্তিক বা ব্যক্তিকে ঘিরে হয়ে থাকে। প্রত্যেক মানুষই এক ধরনের ধর্মীয় অদৃশ্য শক্তিকে উপলব্ধি করেই মানুষ ব্যক্তিগত আচার অনুষ্ঠান পালন করে। এর সামাজিক মূল্য রয়েছে অনেক। ব্যক্তিকে নিয়ে এই অনুষ্ঠানে ব্যক্তির সামাজিক মর্যাদার পরিবর্তন হয়। যেমন-‘বিবাহ’ এই অনুষ্ঠানটির মাধ্যমে বর ও কনের সামাজিক মর্যাদা বাড়ে। তাদের দায়িত্ব কর্তব্য অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়। এ ক্ষেত্রে তারা সমাজ থেকে একটি সম্মানজনক স্বীকৃতি পায় । Simple Society-তে এই Cult-গুলোর গুরুত্ব খুব ব্যাপকভাবে দেখা যায়। এই সমাজে এটা ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে প্রবাহিত হয়। অর্থাৎ, বংশপরম্পরায় এটা বয়ে চলে। যেমন- গ্রিনল্যান্ডে scevora তারা খাদ্য
সংগ্রহকারী অর্থাৎ শিকারী সম্প্রদায়। তারা তাদের নিজস্ব শিকারের কৌশল তার সন্তানকে শিখিয়ে দিয়ে যায়। এভাবে simple society-তে এই cult-গুলো পালন করা হয়।

  1. Shamanastic cult: Shamanastic cult এর মাধ্যমে ঐ সব আধ্যাত্মিক ব্যক্তিদের বুঝায় যারা মনে করে যে তাদের মধ্যে কোনো অদৃশ্য শক্তি আছে। অর্থাৎ, তারা অতিপ্রাকৃত শক্তিকেও control করতে পারে। তাই কোনো জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি হিসেবে আচার-অনুষ্ঠান পালন করে থাকে Shamon, Shamon বলতে আমরা সাধারণত Religious specialist, medicine man, ফকির ওঝা ইত্যাদি বুঝে থাকি। যেমন-আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ, ঝড়-বৃষ্টি বন্ধ হওয়া, ভাল শস্য উৎপাদন ইত্যাদি Shamon-রা করে থাকে। এরা সমাজের মডেল। বিশেষ করে Simple society-তে
    এসব ব্যক্তিরা আদর্শ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
  2. Communal cult : যখন গোষ্ঠীবদ্ধ মানুষ একত্রে যে সব ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি মনোভাব ব্যক্ত করে এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করে সেগুলো Communal cult. মূলত গোষ্ঠীর বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠে। যেমন-পূজা পার্বণ, ঈদ, নবান্ন এবং South Africa-তে দেখা যায় একটা Age group ধরে যৌবন মিলনের মাধ্যমে
    Communal ult পালন করে থাকে।
  3. Ecclesiastical cult: Ecclesiastical cult এর প্রাতিষ্ঠানিক রূপ রয়েছে যাজকীয় তন্ত্র । গীর্জা বা যাজকীয় মন্দির, মসজিদ, কা’বা শরিফ ইত্যাদিকে ঘিরে যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলো Ecclesiastical cult প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। এখানে বলা হয়েছে যে, বড় বড় ধর্মগুলো যেমনঃ হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ইত্যাদিকে ঘিরে হয়ে থাকে। পুরোহিত ধর্মীয় অনুষ্ঠান প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং পেশাকার ধর্মীয় বিশেষজ্ঞ এরা Shamon-ও নন আবার সাধারণ ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিও নন। ইসলাম ধর্মে মাজার, কা’বা শরিফ, হিন্দুদের কাশী, গয়া, মায়াপুর, বৃন্দাবন ইত্যাদি তীর্থস্থানে তারা তাদের ধর্মানুষ্ঠান পালন করে।
    উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে পরিশেষে বলা যায় যে, বিংশ শতাব্দীর শুরুতে Arnold Van Gennep এর ‘Les Rites de passage’ তত্ত্বের সর্বজনীন স্বরূপ অনস্বীকার্য। ঊনবিংশ শতাব্দীর নৃবিজ্ঞানীরা যখন মানব সমাজের বিবর্তনশীল ব্যাখ্যা দিচ্ছেন ঠিক সমসাময়িক কালে Gennep তাঁর আধুনিক মন যুক্তিবাদী সামাজিক প্রেক্ষাপটে Ritual এর সর্বজনীন ব্যাখ্যা দেন ধর্মীয় বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় Rituals এর গুরুত্ব আমাদের সমাজ এবং ব্যক্তি জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।