বিচ্যুতির ফলে যে উপসংস্কৃতির উদ্ভব ঘটে সে সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর ।

অথবা, বিচ্যুতিমূলক উপসংস্কৃতি তত্ত্ব সম্পর্কে যা জান সংক্ষেপে লিখ।
অথবা, বিচ্যুতিমূলক উপসংস্কৃতি তত্ত্ব সংক্ষেপে উল্লেখ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
সামাজিক বিষয় সংক্রান্ত আলোচনায় বিচ্যুতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রচলিত নিয়মনীতির প্রতি অবহেলা, সমাজে বিদ্যমান স্তরবিন্যাসে সৃষ্ট পার্থক্য প্রভৃতি নানা বিষয়ের প্রেক্ষাপটে বিচ্যুতি ঘটে থাকে ।
বিচ্যুতিমূলক উপসংস্কৃতি তত্ত্ব : বিচ্যুতিমূলক আচরণের জন্য সাংস্কৃতিক কারণ বিরাট ভূমিকা পালন করে। প্রতিটি সমাজেই নির্দিষ্ট কিছু সংস্কৃতি রয়েছে। পরিবর্তনের ফলে যা নতুন কোনো ধারায় আসক্ত হওয়ার ফলে দেখা দেয় নতুন সংস্কৃতি। এ নতুন উদ্ভাবিত সংস্কৃতিগুলোই উপসংস্কৃতি। সামাজিক বিচ্যুতির জন্য উপসংস্কৃতিকে দায়ী মনে করে বিচ্যুতি সংক্রান্ত যে তত্ত্ব প্রদান করা হয় তাকে Subculture theory বলে। এ মতবাদের অন্যতম প্রবক্তা হলেন Albert Cohen. পরবর্তীতে রিচার্ড ক্লোওয়ার্ড এবং লয়েড ওলিন এ তত্ত্ব সম্পর্কে আরো বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। এ তাত্ত্বিকদের মতে Subculture বা উপসংস্কৃতি অপরাধের বিস্তার ঘটায়। সমাজে প্রচলিত নিয়মকানুন অমান্য করায় উপসংস্কৃতির প্রভাব রয়েছে। আর এ প্রভাবে প্রভাবিত ব্যক্তি সমাজে বিচ্যুতি অপরাধ সংগঠিত করে। বর্তমান সময়ে সাংস্কৃতিক যোগাযোগ বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন সংস্কৃতির মিশ্রণ হচ্ছে। মানুষ অন্য সংস্কৃতিকে অনুসরণ করার ফলে তার নিজস্ব সংস্কৃতির অবনতি হচ্ছে। অনুকরণ করার এ মানসিকতাই Subculture এর জন্ম দিচ্ছে। নিজের সংস্কৃতি থেকে অপর সংস্কৃতির প্রতি অনুরাগই Subculture এর সৃষ্টি করে। এ নতুন উপসংস্কৃতি গড়ে উঠার ফলে ব্যক্তির নতুন নতুন চাহিদা পূরণে সমাজ ব্যর্থ হয়। ব্যক্তি চাহিদামতো জীবনযাপন করতে না পেরে স্বাভাবিক জীবন থেকে সরে গিয়ে Deviant হয়ে যায়। নিজস্ব সংস্কৃতিকে ঠিকভাবে লালন না করার ফলেই ব্যক্তির বিচ্যুতি বৃদ্ধি পায় বলে তাত্ত্বিকরা মত প্রকাশ করেছেন।
উপসংহার : উপসংস্কৃতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু কোনো জাতিই উন্নতির শিখরে আরোহণ করতে পারে না যদি না সে তার নিজস্ব সংস্কৃতিকে অন্তরে গভীর মমতায় লালন করে। যে দৃষ্টিকোণের প্রেক্ষাপটে উপসংস্কৃতি উদ্ভব তা সত্য হলেও সমাজ বা রাষ্ট্রের জন্য তা কোনো ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে না।