বিচ্যুতিমূলক আচরণের মনস্তাত্ত্বিক কারণ আলোচনা কর।

অথবা, বিচ্যুতিমূলক আচরণেরমনস্তাত্ত্বিক কারণ উল্লেখ কর।
অথবা, বিচ্যুতির আচরণের মনস্তাত্ত্বিক কারণ বর্ণনা কর।
অথবা, বিচ্যুতির আচরণের মনস্তাত্ত্বিক কারণ সবিস্তারে লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা :
সামাজিক জীব হিসেবে মানুষকে স্ব-স্ব সমাজের প্রচলিত রীতিনীতি ও মূল্যবোধ এবং আইন মেনে চলতে হয়। আবার মানুষ তার স্বীয় অস্তিত্বের বাইরে অতি প্রাকৃত একটি শক্তির অস্তিত্বকে বিশ্বাস করে যার ভিত্তি হলো কতকগুলো Rule, অনুশাসন ও বিধিনিষেধ মেনে নেওয়া। সে ধর্মীয় বিধিনিষেধ পরিপন্থী কাজই হলো পাপ, যা
থেকে বিচ্যুতি ও অপরাধকে পার্থক্য করা যায় না। মূলত সমাজে প্রচলিত যাবতীয় সামাজিক ও ধর্মীয় বিধিভঙ্গ করাই হলো বিচ্যুতি ও অপরাধ।
মনস্তাত্ত্বিক কারণ (Psychological explanation) : আধুনিককালের সমাজবিজ্ঞানীরা বিচ্যুতিমূলক আচরণের জন্য জৈবিক কারণের পাশাপাশি মনস্তাত্ত্বিক কারণকেও দায়ী করেছেন। সাম্প্রতিক কালের সমাজচিন্তাবিদরা বিচ্যুতিমূলক আচরণের জন্য সাধারণত মানসিক গ্লানি, অধঃপতন, দুর্বলচিত্তের মনমানসিকতা ইত্যাদি কারণগুলোকে প্রাধান্য দিয়েছেন। অপরাধ বিজ্ঞানীরা এ ধরনের বৈশিষ্ট্য এবং অপরাধমূলক আচরণের মধ্যকার সম্পর্ক জানার জন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে
অনুসন্ধানের চেষ্টা করেছেন। তাই মনোবিশ্লেষকগণ বিভিন্ন প্রকার মনস্তাত্ত্বিক সমস্যাবলিকেই অপরাধমূলক আচরণের জন্য দায়ী করেছেন। প্রধানত Sigmund Freud এর মতামত উল্লেখযোগ্য। এছাড়া Jhon Dollard ও Colleagues এ বিষয়ে মতামত দেন।
Freud এর মতামত : সমাজ মনোবিজ্ঞানী Sigmund Freud ব্যক্তির বিচ্যুতিমূলক আচরণকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে দু’টি প্রত্যয় ব্যবহার করেন। যথা :

  1. Super Ego Strength.
  2. Ego Strength.
  3. Super Ego Strength: Freud মনে করেন, কোনো ব্যক্তির নীতি জ্ঞান গড়ে উঠে তার শৈশবে বড়দের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমে। কিন্তু এর ব্যতিক্রম ঘটলে তার Super Ego গড়ে উঠে না। ফলে Super Ego এর অনুপস্থিতির কারণে তার মাঝে কোনো অনুভূতি বা অপরাধবোধ জাগায় না। ফলে তার মধ্যে বিচ্যুতিমূলক আচরণের প্রকাশ ঘটে।
    ২. Ego Strength : সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, দুর্বল Ego ব্যক্তির নীতিজ্ঞানহীনতার কারণ নয় বরং ব্যক্তির কার্যকলাপকে সংঘটিত করতে ব্যর্থতার ফলে তার আচরণে বিচ্যুতি আসতে বাধ্য।
    John Dollard’s Theory : John Dollard ও Frued এর তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে Similar যে তত্ত্ব দিয়েছেন সেটি হলো Frustration Aggresion তত্ত্ব। এতে বলা হয়, যখন কোনো ব্যক্তি কোনো কাজ সম্পাদন করতে পারে না
    তখন তার মধ্যে হতাশার জন্ম নেয়, যা Deviant হতে সাহায্য করে। এ তত্ত্বে উল্লেখ করা হয় যে, The degree of aggression is related to the amount of frunstration.”
    আবার অনেক সমাজবিজ্ঞানীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, বিচ্যুতিমূলক আচরণের জন্য
    শুধুমাত্র ব্যক্তির মনস্তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যই (Psychological Traits) দায়ী নয়, তার সাথে অন্যান্য কারণও জড়িত। They found that none of the studies came up with a single trait-such as emotional immaturity, instability or disturbance that could be seen in all criminals (Seliuessler & Cressey; 1950). তবে তারা সকল প্রকার বিচ্যুতিমূলক আচরণের জন্য কোনো ব্যক্তির Personality এবং Motivation কেই দায়ী করেছেন।
    উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, বিচ্যুতিমূলক আচরণের জন্য মনস্তাত্ত্বিক কারণ অনেকাংশে দায়ী। অপরাধবিজ্ঞানীরা বিচ্যুতিমূলক আচরণের জন্য মানসিক অবসাদ, অধঃপতন, দুর্বলচিত্তের মনমানসিকতা ইত্যাদি মনস্তাত্ত্বিক কারণগুলোকে দায়ী করেছেন।