বস্তুগত ও অবস্তুগত সংস্কৃতি বলতে কী বুঝ?

অথবা, বস্তুগত ও অবস্তুগত সংস্কৃতি কী?
অথবা, বস্তুগত ও অবস্তুগত সংস্কৃতি কাকে বলে?
অথবা, বস্তুগত ও অবস্তুগত সংস্কৃতির সংজ্ঞা দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা :
মানুষ সামাজিক জীব। আর এ সামাজিক জীবের অন্যতম বড় পরিচয় হলো তার সংস্কৃতি, যার মাধ্যমে মানুষের জীবনযাপন সুন্দর, মার্জিত ও বৈচিত্র্যময় হয়। এ সংস্কৃতি হচ্ছে মানুষের স্বকীয় বৈশিষ্ট্য। তবে সমাজ, জাতি বা দেশভেদে সংস্কৃতির ধরন ও বৈশিষ্ট্যে স্বাতন্ত্র্য পরিলক্ষিত হয়।
বস্তুগত ও অবস্তুগত সংস্কৃতি : সামজবিজ্ঞানী গিলিন ও গিলিনের মতে, “সংস্কৃতি বলতে একদিকে যেমন বস্তুগত আবিষ্কারকে বুঝায়, তেমনি অন্যদিকে ঐ বস্তুগত আবিষ্কারের পিছনে ক্রিয়াশীল চিন্তাভাবনা কৌশল বা জ্ঞানকে বুঝায়।”
সমাজবিজ্ঞানী W.F.Ogburn তাঁদের সাথে তাল মিলিয়ে বলেছেন, “সমাজব্যবস্থায় প্রচলিত সংস্কৃতির দুটি দিক আছে। একটি হলো বস্তুগত দিক অন্যটি হলো অবস্তুগত দিক।”
বস্তুগত সংস্কৃতি : আমরা সহজভাবে বলতে পারি যে, সামাজিক মানুষের জীবনধারণের জন্য বস্তুগত যা কিছু সংগ্রহ তৈরি করে তাকে বস্তুগত সংস্কৃতি বলে। বস্তুগত সংস্কৃতি হলো বাস্তব বস্তু যেমন-ঘরবাড়ি, কাপড়চোপড়, বাসন বা তৈজসপত্র, হাতিয়ার যন্ত্রপাতি ইত্যাদি বুঝায়। কেবল তাই নয়, বিজ্ঞান ধ্যানধারণা প্রকাশের জন্য যেসব বস্তু ব্যবহার করা হয় সেটাও বস্তুগত সংস্কৃতির পর্যায়ে পড়ে।
উদাহরণ : একটি গ্রন্থ বা একটি ছবি বা চিত্র বস্তুগত সংস্কৃতি, যদিও গ্রন্থ রচনা ও চিত্রাঙ্কনের মাধ্যমে মানুষ তার চিন্তাভাবনা জ্ঞানের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে চায়।
অবস্তুগত সংস্কৃতি : অবস্তুগত সংস্কৃতি বলতে মানুষের ধ্যানধারণা, চিন্তাভাবনা, চলনবলন, কথন, রীতিনীতি তথা মূল্যবোধ, আবেগ উচ্ছ্বাস ইত্যাদিকে বুঝায়। অধিকন্তু মানুষের সব বিমূর্ত সৃষ্টি, যেমন ভাষা ও সাহিত্য, বিজ্ঞান, আইন, নীতি, আদর্শ, ইত্যাদিকেও অবস্তুগত সংস্কৃতির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কেবল তাই নয়, অবস্তুগত সংস্কৃতি বলতে বস্তুগত সংস্কৃতির পিছনে ক্রিয়াশীল চিন্তাভাবনা, জ্ঞান এবং কলাকৌশলকে বুঝানো হয়ে থাকে।
উদাহরণ : একটি বাড়ি বস্তুগত সংস্কৃতি, কিন্তু বাড়িটি তৈরির প্রাক্কালে যে চিন্তাভাবনা এবং পরিকল্পনা করা হয় সেটা অবস্তুগত সংস্কৃতি।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মানুষের সামগ্রিক জীবন ধারাই হলো সংস্কৃতি। এ সংস্কৃতির দ্বারা মানুষ বক্তজগতের বা প্রাণিকুলের মধ্যে স্বতন্ত্র বা স্বকীয় বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হিসেবে চিহ্নিত। এজন্য সংস্কৃতি ছাড়া মানুষ কোনো কিছু কল্পনা করতে পারে না। সংস্কৃতি হলো মানুষের পরিচয়পত্র। এ সংস্কৃতির দুটি রূপ একটি বস্তুগত অন্যটি অবস্তুগত।