জনগণের সাথে পুলিশের সম্পর্ক ভাল করতে হলে কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে?

অথবা, জনগণের সাথে পুলিশর সম্পর্ক ভাল করতে হলে কোন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে?
উত্তর৷ ভূমিকা :
যে কোনো সমাজ বা রাষ্ট্র ব্যবস্থায় পুলিশ বাহিনী একটি অত্যাবশ্যকীয় প্রতিষ্ঠান। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে পুলিশ বাহিনীর মৌলিক দায়িত্ব হলো, মোটামুটিভাবে সেবামূলক মানুষের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা করা, মানুষের শাসনতান্ত্রিক অধিকার তথা স্বাধীনতা, সাম্য ও ন্যায় বিচারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা।
স্বাভাবিকভাবেই পুলিশ ও জনগণের মধ্যে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক গড়ে করণীয় ব্যবস্থাবলি : জনগণের সাথে পুলিশের সম্পর্ক খুব ভালো একথা বলা ঠিক হবে না। তবে জনগণের সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন করতে হলে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। কারণ প্রায় ২০০ বছরের ইংরেজদের ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার ফলে পুলিশের প্রতি দেশের সাধারণ মানুষের পূর্বের ধারণা এখনও বদলায় নি। আজও সাধারণ লোক পুলিশকে ভীতি অথবা ঘৃণার চোখে দেখে থাকে। জনগণের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে পারলে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করা সহজ হবে। জনগণের দৈনন্দিন জীবনের সাথে পুলিশের কর্তব্য ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কাজেই প্রতিটি ক্ষেত্রেই পুলিশ ও জনগণের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করা অত্যাবশ্যক। পরস্পরের মধ্যে অবস্থা ও সহযোগিতা স্থাপনে পুলিশকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে যাতে জনগণ পুলিশকে তাদের বিপদের বন্ধু হিসেবে নির্ভর করতে পারে। জনগণের সাথে পুলিশের সম্পর্ক উন্নয়ন করে তাদের মধ্যে একটি প্রীতি ও মৈত্রীর সেতুবন্ধন রচনা করতে হলে, নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর উপর গুরুত্ব দিতে হবে :
১. অতি উৎসাহী ও দুর্নীতিবাজ অফিসারদের কার্যকলাপের উপর কর্তৃপক্ষের তীক্ষ্মদৃষ্টি রাখতে হবে যাতে তাদের অন্যায় ও অবৈধ কাজে কিংবা অসৌজন্যমূলক আচরণে জনগণের সাথে পুলিশের সম্পর্কের অবনতি না ঘটতে পারে। এরূপ কোনো অফিসার বা পুলিশ বাহিনীর কোনো সদস্যর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে অতি দ্রুত তার সত্যতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তবে মিথ্যা বা ভিত্তিহীন অভিযোগের ফলে কেউ যেন অযথা হয়রানি না হয়, সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে।
২.পুলিশ বাহিনীর কোনো সদস্য কখনই কারও সাথে প্রকাশ্যভাবে অশালীন আচরণ করবে না, অকথ্য ভাষায় গালি দিবে না।
৩. পুলিশের পোশাক, চালচলন, কথাবার্তা এমন হবে যেন জনগণের নিকট তা দৃষ্টিকটু, নিন্দনীয় বা অস্বাভাবিক মনে না হয়।
৪. থানা, পুলিশ ফাড়ি, পুলিশের কোনো অফিসে কর্মস্থলে আগন্তকের সাথে অত্যন্ত ভদ্র ও নম্র ব্যবহার করবে এবং আগন্তকের অভিযোগ কিংবা কোনো সমস্যা ধৈর্য্য ও মনোযোগ সহকারে শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বা উপদেশ দিবে।
৫. থানা, ফাড়ি, পুলিশ লাইন, ব্যারাক, পুলিশ অফিস ইত্যাদি সদা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
৬. টেলিফোনে কথা বলার সময়, অত্যন্ত ভদ্র ও নম্রভাবে অপর পক্ষের কথা শুনে তৎক্ষণাৎ জবাব দিতে হবে অথবা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে হবে। ডিউটি কনস্টেবল নিজে তার সঠিক জবাব দিতে না পারলে তার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে বিষয়টি সাথে সাথে জানাবেন কিংবা জানানোর আশ্বাস দিবেন এবং বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে ডায়েরিতে নোট করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন।
৭. গ্রামাঞ্চলে চৌকিদার, দফাদার, রক্ষিবাহিনীর সদস্য, ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদ সদস্য ও চেয়ারম্যানগণের তথা উপজেলা পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রক্ষা করে এলাকার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করবে এবং অপরাধ দমনকল্পে এলাকার জনপ্রতিনিধিদের অপরাধ বিরোধী সহযোগিত া সভা অনুষ্ঠান করবে।
৮. জনগণকে পুলিশের দায়িত্ব কর্তব্য ও বিভিন্ন কার্যকলাপ সম্বন্ধে অবহিত করার জন্য পুলিশ বাহিনী সাংবাদিকদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করবে যাতে পুলিশের ভূমিকা সম্পর্কে অথবা বিরূপ সমালোচনার শিকার হতে না হয়। সাংবাদিকগণকে পুলিশের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানালে এ সম্পর্ক আরও আন্তরিক ও গভীর হবে। তবে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের পূর্ব অনুমতি ছাড়া কখনও সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্য কোনো বিষয়ে বিবৃতি দেওয়া চলবে না যা কোনো ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত বা কোনো মামলার বিচার্য বিষয়ে প্রভাবিত করতে পারে। অনুরূপভাবে, রেডিও বা টেলিভিশনের কোনো প্রতিনিধির নিকট সাক্ষাৎকার দেওয়া চলবে না। কোনভাবেই যাতে পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট বা ক্ষুণ্ন না হয়, সে বিষয়ে দৃষ্টি রেখে কর্তব্য পালন করতে হবে।
৯.পুলিশ বাহিনীর প্রত্যেক সদস্য দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে তাদের বিধিবদ্ধ দায়িত্ব কর্তব্য ছাড়াও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারে। তাছাড়া দুর্ঘটনা, সংক্রামক ব্যাধি, ঝড় তুফান, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, ভূমিকম্প ইত্যাদি দুর্যোগের সময় পুলিশ বাহিনীর সদস্যগণ দুর্গত জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে জরুরি কাজে সাহায্য সহযোগিতা দানের মাধ্যমে তাদের বন্ধুত্ব ও মৈত্রীর বন্ধন দৃঢ় করতে পারে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, পুলিশ ও জনসাধারণের মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। বর্তমানকালে বিভিন্ন অপরাধে পুলিশ বাহিনীকে দায়ী করা হয়। যে সামাজিক পরিবেশে পুলিশ বাহিনী দায়িত্ব পালন করে সেখানে প্রাপ্ত সুযোগ.সুবিধা, শাসনতান্ত্রিক ও আইনগত সীমাবদ্ধতা ইত্যাদির প্রেক্ষিত প্রশ্ন উঠে যে, পুলিশের নামে যে দুর্নাম করা হয়, তার জন্য তারা এককভাবে দায়ী কি না অথবা তাদের অপকর্মকে বাড়িয়ে বলা হয় কি না।