অপরাধ দমনে শিক্ষার ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা, অপরাধ দমনে শিক্ষার ভূমিকা সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
অথবা, অপরাধ দমনে শিক্ষা কী ভূমিকা পালন করে সংক্ষেপে উল্লেখ কর।
অথবা, অপরাধ দমনে শিক্ষার ভূমিকা সংক্ষেপে লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা :
প্রতিটি সমাজেই কোনো না কোনো নীতি বা মূল্যবোধ থাকে। সে কারণে অপরাধ ও অপরাধী সম্পর্কে বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন ধারণা বিদ্যমান। এক সমাজে যা Crime অন্য সমাজে তা Crime বলে
বিবেচিত নাও হতে পারে। অপরাধমূলক আচরণ সবসময় আপেক্ষিক চূড়ান্ত নয়। যেমন : আমাদের সমাজে আজ থেকে ২০/৩০ বছর পূর্বে ছেলে মেয়েদের মেলামেশা গর্হিত ব্যাপার ছিল। কিন্তু আজ তা সমাজের Rules ও Norm এর কিছুটা অন্তর্ভুক্ত হয়ে এসেছে।
অপরাধ দমনে শিক্ষার ভূমিকা : আমরা জানি ‘Education is the backbone of a nation’ ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড’। বটোমোর (Bottornore) বলেছেন, “ব্যাপক অর্থে শিক্ষা শৈশব থেকে প্রাপ্তবয়স্ক পর্যন্ত সামাজিক নিয়ন্ত্রণের একটি প্রাণবন্ত মাধ্যম।” অপরাধ দমনে শিক্ষার ভূমিকা নিম্নে তুলে ধরা হলো :
১. জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া : শিক্ষা হলো এমন এক প্রক্রিয়া যা মানুষের সমস্ত জীবন ধরে চলতে থাকে এবং জীবনের সব অভিজ্ঞতাই এ শিক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে সহায়তা করে।
২. ব্যক্তিত্বের বিকাশ : শিক্ষা এমন এক প্রক্রিয়া যার দ্বারা ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকশিত হয় এবং যার দ্বারা মানুষ তাদের পারস্পরিক সম্পর্ককে এবং যে বিশ্বে তারা বসবাস করছে তার সাথে তাদের সম্পর্ককে উপলব্ধি করতে।
৩. সামাজিক নিয়ন্ত্রণে সহায়তা : শিক্ষা অপরাধ দমন করে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের পথকে সুগম করে। কারণ শিক্ষা ব্যক্তিকে প্রত্যেকটা বিষয় বিচার বিশ্লেষণ করে দেখার জন্য তার যুক্তিকে সঠিক পথে চালিত করতে শেখায় এবং আবেগবশত ব্যক্তি যাতে কোনো প্রকার সিদ্ধান্তে উপনীত না হয় সে ব্যাপারে শিক্ষা দেয়।
৪. হৃদ্যতার সম্পর্ক : শিক্ষা মানুষের সাথে মানুষের হৃদয়ের সম্পর্ক গড়ে তোলে যা চিরন্তন সত্যের দিকে ধাবিত।
৫. শৃঙ্খলিত জীবন আনয়নে : উচ্ছৃঙ্খল জীবনকে শৃঙ্খলার সাথে ফিরিয়ে আনার বাহন হিসেবে শিক্ষা কাজ করে থাকে। শিক্ষার দ্বারা ব্যক্তি নিজেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
৬. কুসংস্কার থেকে মুক্তি : শিক্ষা সামাজিক মানুষকে নানারকম কুসংস্কার থেকে মুক্ত হওয়ার সুযোগ দান করে এবং যুক্তিসংগতভাবে সুনির্দিষ্ট পথে চালনা করতে সহায়তা করে।
৭. মূল্যবোধ ও ধর্মীয় বিষয়ে শিক্ষাদান : শিক্ষা ব্যক্তিকে মূল্যবোধ ও ধর্মীয় বিষয়ে শিক্ষাদান করে থাকে। উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তির পক্ষে নৈতিক অবক্ষয়ের সম্ভাবনা কমে যায়। প্রকারান্তরে তা অপরাধ দমনের সহায়ক।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, শিক্ষার লক্ষ্য আদর্শ ও কর্মঠ নাগরিক বাহিনী গঠন করা। প্রকৃতপক্ষে, শিক্ষার লক্ষ্য একটি পূর্ণাঙ্গ, সৎ ও আদর্শ জীবনের প্রস্তুতি গ্রহণে শিক্ষার্থীকে সাহায্য করা। বস্তুত মানুষের আচার আচরণ যাতে সমাজ ইন্সিত গথে গড়ে উঠে সেদিকে লক্ষ্য রেখে একটি আদর্শ ও সুসংহত সভ্য সমাজ গড়ে তোলা শিক্ষার উদ্দেশ্য।