অথবা, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আধুনিকায়নের প্রভাব বর্ণনা কর।
থবা, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আধুনিকায়নের প্রভাব ব্যাখ্যা কর।
অথবা, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আধুনিকায়নের ভূমিকা বিশ্লেষণ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : আজকের বিশ্ব বিজ্ঞানের অবদান। আর এ বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন মূলত আধুনিকায়নেরই ফসল। আধুনিকায়ন সমগ্র বিশ্বকে মুহূর্তের মধ্যে পরিবর্তন করে দিয়েছে। মানবজীবনের সর্বস্তরে এ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। শিল্পকারখানার উন্নয়ন, চিকিৎসার ক্ষেত্রে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা, কৃষিতে উন্নত যন্ত্রপাতি ব্যবহার, এভাবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়, যা আধুনিকায়নের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। সে গুহাবাসী মানব আজ সভ্যতার চরম শিখরে অবস্থান করছে আধুনিকায়নের প্রভাবে। তবে আধুনিকায়ন এর নির্দিষ্ট কোনো সীমানা নেই ।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আধুনিকায়নের প্রভাব : আধুনিকায়নের ফলে মানুষের অর্থনৈতিক জীবন প্রভাবিত করেছে বিশেষভাবে। আধুনিকায়ন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যেসব ইতিবাচক পরিবর্তন সাধন করেছে তা হলো :
ক. কৃষি সম্প্রসারণ ও উৎপাদন পদ্ধতির পরিবর্তন : আধুনিকায়ন ও নতুন নতুন প্রযুক্তির ফলে কৃষিক্ষেত্রে সাধিত হয়েছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। যদিও আমাদের দেশের অধিকাংশ কৃষক এখনও সে মান্ধাতার আমলের পদ্ধতিতেই কৃষিকাজ করে, তথাপি আধুনিক যন্ত্রপাতি ও কৌশল ব্যবহারের মাধ্যমে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক এগিয়ে গেছে। আধুনিক পদ্ধতি ও প্রযুক্তি ব্যবহারের সুফল হচ্ছে নিম্নরূপ :
কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি (বর্তমানে বিঘা প্রতি ২৫-৩০ মণ ধান হয়। পূর্বে ছিল ৮ মণ)। যেসব কাজ শ্রমিকের মাধ্যমে করা সম্ভব নয় তা যন্ত্রের মাধ্যমে সম্ভব। অতিরিক্ত শ্রমশক্তি লাভ। শ্ৰববিভাজন । কৃষিপণ্য পরিবহন ও বিপণন সহজতর হয়েছে।
খ. শিল্পায়ন ও শহরায়ণ : আধুনিকায়ন ও নতুন নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কারের ফলে শিল্পায়ন ও শহরায়ণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়েছে। পূর্বের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের পরিবর্তে সেখানে বৃহদায়ন শিল্পের আবির্ভাব ঘটেছে। শিল্পজাত দ্রব্যে উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি অন্যদিকে মানুষ আধুনিক জীবনযাপন প্রণালির প্রতি অস্বচ্ছ হয়ে শহরমুখী হয়েছে এবং শহরায়ণের গতিকে ত্বরান্বিত করেছে। আর শহরায়ণ মানুষের অর্থনৈতিক জীবনে দিয়েছে গতিশীলতা।
গ. কর্ম বিশেষীকরণ : আধুনিকায়ন মানুষের কর্মকে বহুমুখী যেমন করেছে, তেমনি কর্মের বিশেষীকরণও করেছে। পূর্বে গ্রামীণ মানুষ যুগ যুগ ধরে একই পেশায় নিয়োজিত থাকার কারণে অন্যান্য পেশা সম্পর্কে তারা অদক্ষ ছিল। অবশ্য তখন পেশার সংখ্যাও ছিল সীমিত। কিন্তু আধুনিকায়ন বহুমুখী পেশা সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের সামনে কর্মের দুয়ার উন্মুক্ত করে এবং এসব পেশায় তাদের দক্ষ হয়ে গড়ে উঠার সুযোগ সৃষ্টি করে।
ঘ. শ্রমের গতিশীলতা : আধুনিকায়নের ফলে শ্রমের গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং শিল্পক্ষেত্রে অদক্ষ শ্রমিকের পরিবর্তে গতিশীল ও উদ্যমী শ্রমিক নিয়োগ হচ্ছে।
ঙ. জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন : আয় বৃদ্ধির কারণে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিসমাপ্তিতে বলা যায় যে, আধুনিকায়নের ফলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এসেছে অভাবনীয় পরিবর্তন । ফলে কৃষি, শিল্প, ব্যবসায় বাণিজ্যে লেগেছে আধুনিক প্রযুক্তির ছোয়া। সাথে সাথে মানুষের জীবনেও এনে দিয়েছে চরম প্রশান্তি।