সামাজিক পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে ধর্মের ভূমিকা থালোচনা কর।

অথবা, সামাজিক পরিবর্তনে ধর্মের ভূমিকা আলোচনা কর।
অথবা, সামাজিক পরিবর্তনে ধর্মের প্রভাব আলোচনা কর।
অথবা, সামাজিক পরিবর্তনের ধর্ম কি ভূমিকা পালন করে?
অথবা, সামাজিক পরিবর্তনে ধর্মের অবদান বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
ধর্ম একটি মৌল ও সার্বজনীন মানবীয় প্রতিষ্ঠান। এটি মানবসমাজের সর্বাপেক্ষা প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান। ধর্মের অস্তিত্ব নেই কিংবা ছিল না এমন কোনো মানবসমাজের কথা সমাজবিজ্ঞানী বা নৃবিজ্ঞানীদের জানা নেই। মানবসমাজের বিভিন্ন পর্বে বিভিন্ন স্থানে ধর্মের বিচিত্র রূপ লক্ষ্য করা যায়। ধর্ম একাধিক এবং তাদের রূপ প্রকৃতিও ভিন্ন। কোনো ধর্ম একেশ্বরবাদী কোনোটি বহু ঈশ্বরবাদী আবার কোনোটিতে বা ঈশ্বর বিশ্বাস অনুপস্থিত। ধর্মের সাথে হৃদয় ও বিশ্বাসের যোগসূত্র নিবিড়। অনেকে নিজের ধর্মকে ধর্ম ছাড়া অন্য ধর্মকে ধর্ম বলে স্বীকার করতে চায় না। কিন্তু ধর্মের বিজ্ঞান সম্মত আলোচনায় আবেগকে পরিহার করতে হবে।
সামাজিক পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে ধর্মের ভূমিকা : Max Weber সমাজ পরিবর্তনে ধর্মের প্রভাব সম্পর্কে ব্যাপক গবেষণা করেন। তাঁর মতে, পাশ্চাত্যে পুঁজিবাদী অনুপ্রেরণা এবং তার বিকাশের জন্য প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মের অর্থনৈতিক নীতিই দায়ী। ক্যালভিন খ্রিস্টধর্মের এক বৈপ্লবিক ব্যাখ্যা দান করেন যেখানে সৎপথে পুঁজি গঠনকে ধর্মীয় পুণ্যের কাজ বলে গণ্য করা হয়। সততা ও নিষ্ঠার সাথে স্ব-স্ব পেশায় নিরলস কাজ করা ধর্মীয় কর্তব্য হিসেবে বিবেচিত হয়। শুধু তাই নয়, Protestant বিশ্বাসে এটাও বলা হয় যে, পারলৌকিক জীবনে মুক্তি সে পাবে যে সৎপথে অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে ইহলৌকিক জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। Weber এর মতে, পাশ্চাত্যে ধর্মের এহেন ব্যাখ্যা মানুষকে পুঁজি গঠনে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল যা পুঁজিবাদের উদ্ভব ও বিকাশে সুদূর প্রসারী ও তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিনি এভাবে দেখাতে চান যে, সমাজ পরিবর্তনে আদর্শ বিশেষ করে ধর্মীয় আদর্শ মুখ্য ভূমিকা পালন করে। তাঁর মতে, ভারতীয় ও চীনা সমাজে পুঁজিবাদের বিকাশ না হওয়ার জন্য এ অঞ্চলের ধর্মীয় অবস্থাই দায়ী। কেননা, এখানকার ধর্ম ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ পুঁজি গঠনে তেমন ইতিবাচক ভূমিকা তো পালন করেই নি বরং নেতিবাচক ভূমিকাই পালন করে। আদর্শবাদী নিয়ন্ত্রণবাদ বিশেষ করে ধর্মীয় নিয়ন্ত্রণবাদকে অনেক সমাজবিজ্ঞানী সমালোচনা করেছেন। Sorokin প্রশ্ন করেছেন যে, ধর্মের মধ্যকার পরিবর্তন যদি অন্য সব অনুষ্ঠানকে প্রভাবিত করে তাহলে ধর্ম কিভাবে, কখন এবং কেন পরিবর্তিত হয়? কিসের প্রভাবে ধর্ম প্রভাবিত হয়? বস্তুত সামাজিক পরিবর্তনে বস্তুবাদী অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণবাদ অত্যন্ত সুস্পষ্ট বক্তব্য রাখে। কেননা, মানুষ তার বস্তুগত প্রয়োজন মিটাতে প্রযুক্তির ব্যবহার করে। ফলে উৎপাদন বেড়ে যায়। জীবনযাত্রার মানে আসে পরিবর্তন। গোটা সমাজকাঠামোতে তাই
দেখা দেয় পরিমাণগত এবং ক্রমে গুণগত পরিবর্তন। পাশাপাশি এটাও বলা যায়, আদর্শ ও সমাজ পরিবর্তনে বা সামাজিক আন্দোলনে কম ভূমিকা পালন করে না।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, সামাজিক পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে ধর্মের ভূমিকা অনস্বীকার্য। মানুষের অভ্যন্তরীণ চিন্তাচেতনা যখন কলুষিত হয় তখন একমাত্র ধর্মই পারে মুক্তি দিতে। আর এ মুক্তির বার্তাই মানুষকে এমনকি সামাজিক পরিবর্তনের তাগিদ দেয়।