স্বাধীনতা বিরোধী কারা? সংক্ষেপে লিখ ।

অথবা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির পরিচয় দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা :
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ বাঙালি জাতির গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় দীর্ঘ নয় মাসের ত্যাগতিতিক্ষা ও সংগ্রামের মাধ্যমে বাঙালি জাতি পাকিস্তানি দখলদার হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে স্বাধীনতা অর্জন
করে। কিন্তু এ দেশীয় কিছু বিপথগামী দল ও সংগঠন পাকিস্তান রক্ষার নামে স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকবাহিনী সর্বতোভাবে সহায়তা করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে এবং বাংলার শান্তিপ্রিয় নিরীহ, নিরস্ত্র মানুষের উপর গণহত্যা ও নির্যাতন চালায়। বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বাধীনতার বিরোধিতাকারীদের পাকিস্তানি বাহিনীর সাহায্যকারী হিসেবে অভিহিত করা হয়।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা বিরোধীরা : ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে যে সকল সংগঠন সরাসরি পাকিস্তানিদের পক্ষ অবলম্বন করে পাকবাহিনীদের সহায়তা করেছিল তারাই স্বাধীনতা বিরোধী। যেমন-
১. শান্তি কমিটি : বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী সংগঠনের মধ্যে অন্যতম ছিল শান্তি কমিটি। পাকিস্তানে প্রশাসকদের সহযোগিতার জন্য ১০ এপ্রিল ১৯৭১ সালে ঢাকায় শান্তি কমিটি গঠিত হয়। এ কমিটি সকল জেলা,
মহকুমা, থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে শাখা প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরা মূলত পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তা করত। দেশকে বিচ্ছিন্ন করা থেকে রক্ষা করে পাকিস্তানি হুকুমত বজায় রাখা, মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা, নির্যাতন করা ছিল এ স্বাধীনতা বিরোধী সংগঠনের কাজ।
২. রাজাকার বাহিনী : বাংলাদেশের বহুল পরিচিত স্বাধীনতা বিরোধী সংগঠন হলো রাজাকার বাহিনী। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রধান সহযোগী ছিল রাজাকার বাহিনী। এ আধাসামরিক বাহিনীর ৫০ হাজার সদস্য মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা, নির্যাতন, নারীদের ধর্ষণ, সম্পদ লুট, শরণার্থীদের বাড়িঘর লুণ্ঠন করেছিল।
৩. আল-বদর বাহিনী : আল-বদর ছিল অন্যতম স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি। আল-বদর বাহিনী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সর্বাপেক্ষা ঘৃণ্য কর্মে লিপ্ত হয় এবং তারা গণহত্যা চালায়। বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা ছিল এ বাহিনীর
অন্যতম কাজ। মিরপুরের বধ্যভূমি, কচুক্ষেতসহ বিভিন্ন জায়গায় এ মানবতা বিরোধী ঘৃণ্য বাহিনী জঘন্যভাবে হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়ন করেছিল।
৪. আল-শামস্ বাহিনী : ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আল-শামস্ বাহিনী ছিল অন্যতম সংগঠন। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী এ সংগঠন পাকবাহিনীকে সর্বতোভাবে সাহায্য করে। ধর্মান্ধ এ বাহিনী সুপরিকল্পিতভাবে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করতে ও প্রগতিশীল চেতনা ধ্বংস করতে হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত হয়। বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, পরিবারের সম্পত্তি লুটের পাশাপাশি গণহত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণমূলক গর্হিত কাজে লিপ্ত হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত জঘন্য ও ঘৃণ্য। তারা ধর্মের নামে এবং পাকিস্তান রক্ষার নামে মানবতাবিরোধী সকল কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। এ সকল বাহিনীর কর্মকাণ্ড ছিল মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধপরাধের শামিল। স্বাধীনতা বিরোধী এ সকল সংগঠনকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচার করা হচ্ছে বাংলার মাটিতে। বাঙালি জাতি এ সকল সংগঠনকে ঘৃণাভরে স্মরণ করে।