রাজাকার বাহিনী সম্পর্কে কী জান?

অথবা, রাজাকার বাহিনী কারা?
অথবা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে রাজাকার বাহিনীর কার্যক্রম সংক্ষেপে লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা :
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যে সকল সংগঠন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল রাজাকার বাহিনী। বাঙালি হত্যা, মুক্তিযোদ্ধা হত্যা, লুটপাট, ধর্ষণ, প্রতিশোধ, সম্পদ লুট, ভীতি প্রদর্শন ছিল এ রাজাকার বাহিনীর অন্যতম কাজ।
রাজাকার বাহিনী : রাজাকার শব্দের শুদ্ধ উচ্চারণ হলো ‘রেজাকার’ রেজাকার একটি ফারসি শব্দ, ‘রেজা’ হলো স্বেচ্ছাসেবী, যার অর্থ কর্মী। এককথায় স্বেচ্ছাসেবী। মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াত নেতা এ. কে. এম. ইউসুফ শব্দটি ধার করেন এবং খুলনায় রেজাকার বাহিনীর সূত্রপাত করেন। ৯৬ জন জামায়াত কর্মী নিয়ে এ বাহিনীর সূত্রপাত যা পরে সমগ্র
বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৭১ এর মধ্যসময়ে অর্থাৎ জুন মাস থেকে রাজাকার বাহিনী একটি আধাসামরিক বাহিনীতে পরিণত হয়। ক্রমান্বয়ে এটি একটি প্রভাবশালী বাহিনীতে পরিণত হয় এবং ২৩ নভেম্বর ১৯৭১ সালে রাজাকারদের বেতন ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়। পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালায়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহায়তা করা, রসদ সরবরাহ করা, মুক্তিবাহিনীর খোঁজখবর দেওয়া, সংখ্যালঘুদের নির্যাতন ও উৎখাত করা, পাকিস্তানি বাহিনীকে পথ দেখিয়ে নেওয়া, লুটপাট, সম্পত্তি দখল, জোর করে ধর্মান্তরিত করা প্রভৃতি কাজে লিপ্ত ছিল। বাংলাদেশের গ্রামে গঞ্জে বাহিনীটি ছড়িয়ে পড়ে এবং এ কারণে রাজাকার নামটি জাতির কাছে অধিকতর পরিচিত। রাজাকার বাহিনীতে নানা শ্রেণির লোক ভর্তি হলেও এর মূল নেতৃত্ব ছিল জামায়াতের হাতে, ইসলামি ছাত্রসংঘের জেলা প্রধানরা ছিল স্ব-স্ব জেলার রাজাকার প্রধান।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, রাজাকার বাহিনী সরাসরি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা করে এবং পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষা তৎপরতা চালায়। যার ফলে তারা মুক্তিযোদ্ধাসহ দেশপ্রেমিক নাগরিকদের হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, লুটপাট করে ১৯৭১ সালে ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টি করে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকবাহিনী আত্মসমর্পণের সঙ্গে সঙ্গে রাজাকার বাহিনীর বিলুপ্তি ঘটে।