সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের অপরাধের কারণ আলোচনা কর ।

অথবা, সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের অপরাধের কারণ ব্যাখ্যা কর
অথবা, অতি সম্প্রতি বাংলাদেশে সংঘটিত অপরাধের কারণসমূহ বর্ণনা কর।
অথবা, সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত অপরাধের কারণসমূহ বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে উল্লেখ কর।
Pilkউত্তর৷ ভূমিকা :
প্রতিটি সমাজেই কোনো না কোনো নীতি বা মূল্যবোধ থাকে। সে কারণে অপরাধ ও অপরাধী সম্পর্কে বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন ধারণা বিদ্যমান। এক সমাজে যা Crime অন্য সমাজে তা Crime বলে বিবেচিত নাও হতে পারে। অপরাধমূলক আচরণ সবসময় আপেক্ষিক চূড়ান্ত নয়। যেমন : আমাদের সমাজে আজ থেকে ২০/৩০ বছর পূর্বে ছেলে মেয়েদের মেলামেশা গর্হিত ব্যাপার ছিল। কিন্তু আজ তা সমাজের Rules ও Norm এর কিছুটা অন্তর্ভুক্ত হয়ে এসেছে।
BAasmin
বাংলাদেশে অপরাধ প্রবণতার কারণ : বাংলাদেশে দিনদিন অপরাধের সংখ্যা মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেসব অপরাধ reported হয়, আমরা কেবল সেসময়ের কথাই জানি। তাছাড়াও রয়েছে Unreported অপরাধ। বাংলাদেশে সংঘটিত অপরাধের কারণ বহুমুখী। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো :
১. অর্থনৈতিক কারণ : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা অপরাধ সংঘটিত হওয়ার একটি অন্যতম কারণ। নিম্নে তুলে ধরা হলো :
ক. দারিদ্র্য ও অপরাধ : বাংলাদেশে চরম দারিদ্র্যের কারণে অপরাধ সংঘটিত হয়। সাধারণত ছোটোখাটো চুরি, ছিনতাই ইত্যাদি অপরাধগুলো দারিদ্র্যের কারণেই ঘটে থাকে। বাংলাদেশের গ্রাম ও শহর এলাকার এ অপরাধ বেশি।
খ. বেকারত্ব ও অপরাধ : আমাদের সমাজে ক্রমবর্ধমান হারে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেব অনেকেই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। আর এ বেকারত্ব থেকেই অনেকে চুরি, ডাকাতি, খুনখারাবি, রাহাজ জড়িয়ে পড়ছে।
এন এর কারণে ত্যাদি অপরাধে
গ. পেশা ও অপরাধ : অপরাধ বিজ্ঞানীদের মতে, পেশার সাথে অপরাধের সম্পর্ক রয়েছে। বেশ কিছু পেশা আছে যেগুলোর অপরাধ সংঘটনের সম্ভাবনা খুবই কম। আবার এমন কিছু পেশা আছে যেগুলো পড়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি কতটুকু সঠিক তা গবেষণার অপেক্ষা রাখে । অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে
ঘ. অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও অপরাধ : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় পুঁজিবাদী এখনও বেশ প্রবল। উৎপাদন ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত মালিকানা থাকায় যে যতটা যেভাবে পারছে সম্পদ সংগ্রহ করছে।
২. সামাজিক কারণ : বাংলাদেশে সংঘটিত অপরাধের জন্য সামাজিক কারণও কম দায়ী নয়। নিম্নে বাংলাদেশের অপরাধের সামাজিক কারণগুলো আলোচনা করা হলো :
ক. সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ও অপরাধ : সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে সমাজে দিনদিন অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পূর্বে সমাজে সামাজিক স্তরবিন্যাসের ক্ষেত্রে বংশ মর্যাদাকে ও ধর্মীয় শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া হতো। কিন্তু বর্তমানে অর্থই সমাজের মর্যাদা নির্ণয়ের প্রধান নিয়ামক হওয়ায় অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
খ. যৌতুক প্রথার প্রভাব : বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় যৌতুক প্রথা মারাত্মক ব্যাধি হিসেবে দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনের পত্রিকায় এ ব্যাপারে অনেক খবর আমরা দেখতে পাই। তাই বলা যায়, যৌতুক প্রথার কারণে অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গ. উচ্চাভিলাষী জীবনের স্বপ্ন : বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় ব্যাপক বৈষম্য বিদ্যমান। একশ্রেণির লোক চরম দারিদ্র্য ও বেকারত্বের মধ্যে বাস করে। আর এক শ্রেণির লোক অনেক উন্নত জীবনধারণ করে। তাই উচ্চবিলাসী জীবনের স্বপ্নও মানুষকে অপরাধমূলক কাজে জড়িত করে।
৩. রাজনৈতিক কারণ : ব্রিটিশ ভারতে, পাক আমলে এবং বর্তমান বাংলাদেশে রাজনৈতিক কারণে অনেক অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। বর্তমান বাংলাদেশেও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে, ক্ষমতার ঘন ঘন পরিবর্তনের কারণে আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটছে। ফলে অপরাধও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৪. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানের সীমাবদ্ধতা : আধুনিককালে অপরাধীরা আগের তুলনায় জটিল ও অভিনব পন্থায় অপরাধ করছে। আমাদের দেশের ঔপনিবেশিক আমলের পুলিশ ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয় নি। তাছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানের উপর একটা রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে। সুতরাং বলা যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানের সীমাবদ্ধতার কারণে ক্রমবর্ধমান হারে অপরাধ বেড়ে চলেছে।
৫. বিচার ও শাস্তি বিধানের সীমাবদ্ধতা : বিচার ব্যবস্থার ত্রুটিপূর্ণ সংগঠন, জটিল প্রক্রিয়া ও দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে অনেক সময় নিরাপরাধ ব্যক্তিও শাস্তি পায় এবং প্রকৃত অপরাধীরা আইনকে ফাঁকি দিয়ে রেহাই পায়। বিশেষ করে, রাজনৈতিক কারণে এমনটি প্রায়ই ঘটে। ফলে স্বাভাবিকভাবে নিরাপরাধ ব্যক্তিরা আইনের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে এবং অপরাধীরা আরও উৎসাহিত হচ্ছে। বস্তুত বাংলাদেশের অপরাধ বৃদ্ধির এটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, অপরাধের নানাবিধ কারণ বর্তমান, তন্মধ্যে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণগুলোই মুখ্য। মূলত একজন অপরাধী অপরাধ সংঘটনের সময় এসব বিষয়গুলোর কথা চিন্তা করেই অপরাধে লিপ্ত হয়।