অপরাধের ধরন সম্পর্কে আলোচনা কর।

অথবা, বিভিন্ন প্রকার অপরাধ আলোচনা কর।
অথবা, অপরাধের ধরন সম্পর্কে তুমি যা জান লিখ।
অথবা, অপরাধের ধরন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা কর।
অথবা, অপরাধের ধরন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
প্রতিটি সমাজেই কোনো না কোনো নীতি বা মূল্যবোধ থাকে। সে কারণে অপরাধ ও অপরাধী সম্পর্কে বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন ধারণা বিদ্যমান। এক সমাজে যা Crime অন্য সমাজে তা Crime বলে বিবেচিত নাও হতে পারে। অপরাধমূলক আচরণ সবসময় আপেক্ষিক চূড়ান্ত নয়। যেমন : আমাদের সমাজে আজ থেকে ২০/৩০ বছর পূর্বে ছেলে মেয়েদের মেলামেশা গর্হিত ব্যাপার ছিল। কিন্তু আজ তা সমাজের Rules ও Norm এর কিছুটা অন্তর্ভুক্ত হয়ে এসেছে।
অপরাধের ধরন (Types of crime) : বিচ্যুতি বা অপরাধ আজ বিশ্বের উন্নত-অনুন্নত, শিল্পায়িত- আধাশিল্পায়িত, ছোট-বড়, সব সমাজেরই মাথাব্যথার কারণ। বিজ্ঞানের আবির্ভাবে মানবসমাজের জীবনযাত্রা যত গতিশীল হয়েছে ততই হয়েছে জটিল। ফলে ভেঙে পড়েছে সামাজিক সংহতি ও নিয়ন্ত্রণ। বিশেষ করে পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ হ্রাস
পাওয়ায় তা পুরো সমাজে প্রভাব ফেলেছে। আর পারিবারিকভাবে প্রভূত পরিবর্তনের ফলে নিয়ন্ত্রণ যতই শিথিল হয়েছে, অপরাধের মাত্রা, জনসংখ্যা, ভয়াবহতাও তত জোরালো হয়েছে। ফলে সারা বিশ্বে অপরাধ নিরসনের জন্য অত্যাধুনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং হয়েছে। প্রযুক্তির অবদানে অপরাধ এখন প্রকট আকারে দেখা দিচ্ছে। যে কারণে গ্রাম, নগর, রাষ্ট্র বা মহাদেশ নয় বরং আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বিচারব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এ প্রেক্ষিতে দেখা যায়, বিভিন্ন মাত্রা বা কারণে
Crime এর ধরন ভিন্ন। তবে, অপরাধ সংঘটিত হবার পিছনে যে কারণই থাকুক না কেন মূলত অপরাধ তিন শ্রেণিতে বিভক্ত । যথা :
১. ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধ (Crimes against persons) : ব্যক্তি বিশেষ বা ব্যক্তি সমষ্টির বিরুদ্ধে সরাসরি যে অপরাধ সংঘটিত হয়, তাই Crimes against persons. এ ধরনের অপরাধকে জনগণ সবচেয়ে বেশি ভয় করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, সাধারণত দৃষ্টির অন্তরালে, সন্ধ্যার পর অন্ধকারে এ ধরনের অপরাধ ঘটে থাকে। বস্তুত এ
ধরনের অপরাধ অন্যান্য অপরাধের মত Common নয়। FBI এর Report মতে, Persons এর বিরুদ্ধে যত অপরাধ
সংঘটিত হয় তার ১০% Murder, robbery, rape ইত্যাদি। (FBI-Uniform Crime Report Washington D.C-A (U.S) Govt; Printing Office, P-11)
২. সম্পত্তির বিরুদ্ধে অপরাধ (Crimes against property) : সাধারণত যে সমস্ত অপরাধ সম্পদ বা সম্পত্তির সাথে সম্পৃক্ত সেগুলো হলো Crimes against property. মূলত অর্থকে কেন্দ্র করেই মানুষ বেশি অপরাধী হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের সুযোগ বেশি বলে এ ধরনের অপরাধও বেশি। আধুনিক Computer Tecnology এ ধরনের অপরাধ সংঘটনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করার ফলে বিগত ২০ বছরে বিভিন্ন অপরাধের পাশাপাশি Banking ক্ষেত্রে এ অপরাধ বহুমাত্রায় বেড়েছে। যেমন- Bank Accounts, credit card, inventory and sales reward, pay rolis, welfare cheeks, fand payment ইত্যাদির ক্ষেত্রে অপরাধের মাত্রা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মূলত এ ধরনের অপরাধের পেছনে প্রযুক্তির বিশেষত Computer এর অবদান বেশি।
mx ৩. নৈতিকতার বিরুদ্ধে অপরাধ (Crimes against morality) : যেসব অপরাধ ব্যক্তি বা সমষ্টির নৈতিকতাকে নিয়ে আবর্তিত তা Crimes Against Morality. এ ধরনের অপরাধ হচ্ছে Criminal Law এর সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয় । যা নৈতিক আচরণের মাত্রার রীতিগতভাবে প্রয়োগ বা গঠন করা হয়। সাধারণত জুয়াখেলা, অশ্লীলতা, পতিতা এবং মাদকাসক্তি ইত্যাদি এ অপরাধ এর অন্তর্ভুক্ত। এ ধরনের অপরাধ ব্যক্তি স্বেচ্ছায় করে আর ব্যক্তির ইচ্ছাই কার্যকর তবুও Crime সম্পাদনে সহযোগীরাও এ ধরনের Criminal হিসেবে চিহ্নিত হবে। এ ধরনের Criminal Activities যা সমাজকে বা সমাজের Norms কে Violate করে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য।

উপর্যুক্ত তিন প্রকারের অপরাধ এর ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ রয়েছে। যেমন-
১. পেশাদার অপরাধ (Professional crime) : মানুষ যখন কোনো অপরাধমূলক কাজকে তার জীবনের একমাত্রঅবলম্বন বা পেশা হিসেবে নেয় তখন তাকে Professional বলে। সমাজবিজ্ঞানী Sutherland তাঁর, “The Professional theif” গ্রন্থে Professional Criminal সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করে দেখিয়েছেন যে, Professional Criminal ও অন্যান্যCriminal এর মধ্যে বেশ পার্থক্য রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সিধেল চুরি, ঘর চুরি, দোকান চুরি, হাইজ্যাকিং, পকেট মারা ইত্যাদি ।
২. সংগঠিত অপরাধ (Organized crime) : কোনো প্রতিষ্ঠিত, শক্তিশালী সংগঠনের উদ্যোগে ও পরিচালনায় “গ্যাংগ” ভিত্তিক যে Crime হয়ে থাকে তাকে বলা হয় Organized Crime. এগুলো হলো : পাচার, চোরাচালান, জুয়া, পতিতাবৃত্তি, মাদক ব্যবসা ইত্যাদি, এগুলো দলীয়ভাবে সংঘটিত হয়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ জাতীয় Crime এর ক্ষেত্রে Mafia, Mob, Lacosa, Nastra ইত্যাদি চক্রগুলো প্রসিদ্ধ। পৃথিবীতে এ অপরাধগুলো সবচেয়ে ভয়াবহ আর এর স্বার্থে আন্তর্জাতিক চক্রের বিভিন্ন রাঘব বোয়াল জড়িত থাকে বলে তা নির্মূল বা প্রতিরোধ করা দুরূহ।
৩. মানসিক অপরাধ (White colour crime) : অপরাধ বিজ্ঞানী সাদারল্যান্ডের মতে, এ ধরনের অপরাধ হচ্ছে, যেমন— বিশ্বাস ভঙ্গ, বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য প্রচার, অপরের স্বার্থে হস্তক্ষেপ করা, Trade mark নকল করা, জাল টাকা বের করা, কর্পোরেশনের বিবৃতিতে মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া ইত্যাদি। Herbert Edelhertz এ ধরনের অপরাধের উদাহরণে সাদারল্যান্ডের চেয়ে ভিন্নচিত্র দেখিয়েছেন। যেমন : মিথ্যা আয়কর, বিবৃতি দান, সামরিক নিরাপত্তা ভাতার জন্য— মিথ্যা দাবি, টাকা জমা না রেখে Credit Card দেখিয়ে লেনদেন করা ইত্যাদি।
৪. রাজনৈতিক অপরাধ (Political crime) : বর্তমানে এক কথায় বলা হয়, রাজনীতি মানে মিথ্যা-নীতি, সকল অপকর্মের মূল । রাজনীতির ছত্রছায়ায় যেসব অপরাধ ঘটিত হয় তাকে Political Crime বলে। যেমন— Anti Political Party এর নেতাকর্মীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা, প্রতিপক্ষের অফিস, বাসস্থান, মিছিলে হামলা ইত্যাদি।
৫. সম্মিলিত বা যৌথ অপরাধ (Corporate crime) : যৌথ মালিকানা বিষয়ক কাজকর্মে অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে ব্যক্তি বিশেষ বা সম্মিলিতভাবে যে অপরাধ করে তা হলো Corporate Crime। যেমন : শেয়ারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কেউ তা আত্যসাৎ করা।
৬. কিশোর অপরাধ (Juvenile delequency) : অল্প বয়স্ক বা তরুণ ছেলেমেয়েরা সাম্প্রতিক বিশ্বে বিচিত্রঅপরাধে জড়িয়ে পড়েছে তা হলো Juvenile delequency। উন্নত বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশেও এ অপরাধ প্রচুর।
যেমন : সাম্প্রতিক আমেরিকার এক স্কুলে মর্মান্তিকভাবে ২৫ জন ছাত্রীর হত্যাকাণ্ডের মূল নায়ক ২ জন কিশোর।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, অপরাধ হলো একটি সামাজিক ব্যাধি। এ অপরাধকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা যায়। তবে সমাজের সার্বিক দৃষ্টিতে যা ঘৃণাত্মক তাই অপরাধ। বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে অপরাধকে ব্যাখ্যা করেছেন । অতএব, সামাজিক মূল্যবোধহীন কাজই অপরাধ।