সামাজিক অসমতার ক্ষেত্রসমূহ আলোচনা কর।

অথবা, সামাজিক বৈষম্যের ক্ষেত্রগুলো আলোচনা কর।
অথবা, সামাজিক অসমতার মাত্রা সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা, সামাজিক অসমতার ক্ষেত্র বা মাত্রা বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
সামাজিক অসমতার যাত্রা বা ক্ষেত্রের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো ‘Dimension and social Inequality শব্দগত বিচারে সামাজিক অসমতা বহুমাত্রিক। Dimension শব্দটির অর্থ হচ্ছে A measurement of any sort for example breath, length, thickness, weight etc.
সামাজিক অসমতার ক্ষেত্র বা মাত্রা : দৃষ্টিভঙ্গিগত সামাজিক অসমতা প্রাকৃতিক ও সামাজিক, প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিমাপগত দিক থেকে বিচার এবং সামাজিক অসমতার ক্ষেত্র বা মাত্রাগুলো নিম্নে উপস্থাপন করা হলো :
১. অর্থনৈতিক ক্ষেত্র বা মাত্রা : সামাজিক অসমতার ব্যাখ্যায় Karl Marx সামাজিক শ্রেণিসমূহের অর্থনৈতিক ভিত্তির কথা উল্লেখ করেছেন। Max Weber ও অর্থনীতি মাত্রাগত দিকের উপর গুরুত্ব দিয়ে সামাজিক অসমতাকে ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁদের বক্তব্য হলো, যারা উৎপাদন সহায়ক শক্তিসমূহ নিয়ন্ত্রণ করে তারা অর্থনৈতিক শক্তির জোরে সমাজে অপরাপর শ্রেণিসমূহের উপর অনায়াসেই প্রভাব বিস্তার করতে পারে। কারণ হিসেবে বলেছেন যারা উৎপাদন করে তারাই বণ্টন ব্যবস্থাকেও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
২. ক্ষমতার ক্ষেত্র বা মাত্রা : সমাজে ক্ষমতা সমভাবে বণ্টন থাকে না। আবার কেউ ক্ষমতার মধ্যেই জন্মগ্রহণ করে। আবার কেউ জন্মের পর ক্ষমতা বলয়ে স্থান করে নেয়। এই মাত্রাগত পার্থক্যই সমাজে সামাজিক অসমতা সৃষ্টি করে। Weber এর মতে, “Power is the ability to control the behavior of others.” Karl Marx এর মতে, “যাদের অর্থ আছে যারা পুঁজি বিনিয়োগ করে এবং যারা তা নিয়ন্ত্রণ করে তাদেরই ক্ষমতা আছে। কোনো ব্যক্তির ক্ষমতা হচ্ছে উৎপাদন যন্ত্রের সাথে সম্পর্কের বহিঃপ্রকাশ। Marx এর অর্থনৈতিক ক্ষমতার সম্প্রসারণমূলক ব্যাখ্যার সাথে Max Weber অতিরিক্ত ক্ষমতা ও সম্মান এ দুটি মাত্রাকে অসমতার কারণ হিসেবে সংযুক্ত করেছেন।
৩. মর্যাদার ক্ষেত্র : মর্যাদা হচ্ছে কারো জন্য প্রদেয় ও শ্রদ্ধার সামাজিক স্বীকৃতি। মর্যাদার দুটি মাত্রাগত দিক রয়েছে। যথা : ১. সমাজের আদর্শ ও মূল্যবোধের নির্ভরশীলতা ২. আন্তঃসামাজিক সাংস্কৃতিক কাঠামো ও সামাজিক অনুমোদনের উপর নির্ভরশীল। Weber উল্লেখ করেন যে, যাদের জীবনযাত্রার ধরন বা ভোগের প্রকৃতি একই রকম। তারা
অভিন্ন মর্যাদা গোষ্ঠী বলে বিবেচিত হয়। সামাজিক অসমতা সৃষ্টিকারী মর্যাদা দু’উপায়ে অর্জন করা যায় । যথা : আরোপিত এবং অর্জিত।

  1. সম্পত্তির মাত্রা : সম্পত্তি সামাজিক অসমতাকে বহুমাত্রিকতা দান করেছে। সম্পত্তির ধরন, সম্পত্তির ব্যবহার, সম্পত্তির অর্জন সামাজিক অসমতা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। Karl Marx বলেছেন, সম্পত্তি ধারণার পূর্বে সমাজে সামাজিক অসমতা ছিল না। যখন সম্পত্তির ধারণা জন্ম নিয়েছে তখন সামাজিক অসমতার সৃষ্টি হয়েছে। শিকার ও সংগ্রহ অর্থনীতিতে স্বল্প পরিসরে বয়স ও লিঙ্গভেদে সামাজিক অসমতা ছিল। ব্যক্তিগত সম্পত্তির ধারণা সেই অসমতাকে বহুগুণ বৃদ্ধি করে দিয়েছে। সম্পত্তি হলো সামাজিক বিষয়।
    ৫. শ্রেণি মাত্রা : আধুনিক সমাজব্যবস্থায় শ্রেণি সামাজিক অসমতার গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত। হচ্ছে Karl Marx উৎপাদন যন্ত্রের সঙ্গে ব্যক্তির সম্পর্কের ভিত্তিতে শ্রেণিবিভাগ করতে চেয়েছেন। বুর্জোয়া শ্রেণি উৎপাদন যন্ত্রের মালিক আর সর্বহারা বা শ্রমিক শ্রেণি উৎপাদন যন্ত্রের মালিক নয়। Marx আরো উল্লেখ করেছেন যে, বুজোয়া ও শ্রমিক বা
    সর্বহারা শ্রেণি ছাড়াও সমাজের অন্তর্বর্তীকালীন শ্রেণির অস্তিত্ব রয়েছে।
    উপসংহার : উপর্যুক্ত সামাজিক অসমতার মাত্রা বা ক্ষেত্র ছাড়াও জেন্ডার, বয়স, পেশা, দক্ষতা, শ্রমের বিভাজন ও শ্রমের বিশেষীকরণ, স্বাস্থ্য, বজ্র ভোগের চাহিদা ও যোগান, স্বেচ্ছাসেবী সংঘ, Minority group, বিষয় সামাজিক অসমতার অতি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র বা মাত্রা হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
    Ethic ইত্যাদি