সামন্তপ্রথা সম্পর্কে লিখ ।

অথবা, সামন্তপ্রথা কী?
অথবা, সামন্তপ্রথা সম্পর্কে সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
অথবা, সামন্তপ্রথা বলতে কী বুঝ?
উত্তর৷ ভূমিকা :
এস্টেট বা সামন্তপ্রথা সামাজিক স্তরবিন্যাসের একটি প্রকরণ। মধ্যযুগের ইউরোপীয় সমাজের স্তরবিন্যাসের ক্ষেত্রে পদটি ব্যবহৃত হয়েছে। ইউরোপীয় সমাজে ভূম্যাধিকারী এবং যাজকদের চিহ্নিত করতে ১ম ও ২য় এস্টেট কথাটির প্রচলন শুরু হয়। পরবর্তীতে সাধারণদের বুঝানোর জন্য তৃতীয় এস্টেট এর ব্যবহার শুরু হয়।
সামন্তপ্রথা : মধ্যযুগের ইউরোপীয় সামন্ত সমাজের স্তরবিন্যাস এস্টেট প্রথার মধ্যেই প্রতিফলিত। Estate বলতে কখনো ভূসম্পত্তি বা খামার, কখনো সামাজিক শ্রেণি, কখনো-বা অধিকার বা কর্তব্য বুঝায়। উল্লেখ্য Estate প্রত্যয়টি ফরাসি বিপ্লব পূর্ব ও পরবর্তী সামাজিক স্তরকে বুঝাতে ব্যবহৃত হতো।
উদ্ভব ও বিকাশ : Estate-এর উদ্ভব ঘটে মধ্যযুগে তথা অষ্টম ও নবম শতাব্দী হতে এবং এর চরম বিকাশ সাধিত হয় ১৪৪৩ সালের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত ।
সামন্তপ্রথার শ্রেণিবিভাগ : মধ্যযুগীয় ইউরোপীয় সমাজব্যবস্থা তিনটি Estate-এ বিভক্ত ছিল। যথা :
প্রথম এস্টেট : পুরোহিত শ্রেণি।
দ্বিতীয় এস্টেট : অভিজাত শ্রেণি।
তৃতীয় এস্টেট : সাধারণ শ্রেণি।
সামন্তপ্রথার বৈশিষ্ট্যসমূহ : সামন্তপ্রথার বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ :
১. প্রত্যেক শ্রেণির পদমর্যাদা আইনের দ্বারা সুনিয়ন্ত্রিত ও সুনির্দিষ্ট করা ছিল। ‘আইনের চোখে সবাই সমান’ এ নীতি কখনো বলবৎ ছিল না। একই অপরাধে অভিজাত ও সাধারণ লোককে ভিন্ন শাস্তি পেতে হতো।
২.Estate-গুলোর ব্যাপক শ্রম বিভাগ ছিল ।
৩. মধ্যযুগে ইউরোপীয় সমাজে জন্মই ব্যক্তির সামাজিক মর্যাদা নিরূপণ করতো।
৪. ইচ্ছানুযায়ী কেউ Estate পরিবর্তন করতে পারতো না।
৫. মধ্যযুগে ইউরোপ ছাড়া ভারতীয় সমাজেও এক ভিন্নধর্মী সমান্তপ্রথা বিরাজ করতো। যেমন- রাজা, মধ্যস্বত্বভোগী, খাজনা আদায়কারী, কৃষকশ্রেণি ইত্যাদি।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, মধ্যযুগের ইউরোপীয় সমাজব্যবস্থায় এস্টেট বা সামন্তপ্রথা চরম বিকাশ লাভ করে। এ সময় সমাজে জন্মই ব্যক্তির সামাজিক মর্যাদা নিরূপণ করতো। অর্থাৎ যে ব্যক্তি এস্টেটে জন্মগ্রহণ করবে, সে ব্যক্তি ঐ এস্টেটের অন্তর্ভুক্ত থাকবে এবং ঐ বিশেষ এস্টেটের মর্যাদা লাভ করবে। তবে প্রত্যেক এস্টেটের সদস্যদের দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্দিষ্ট ছিল ।