দাসপ্রথা সম্পর্কে লিখ।

অথবা, দাসপ্রথা কী?
অথবা, দাসপ্রথা বলতে কী বুঝ?
অথবা, দাসপ্রথা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, দাসপ্রথা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা :
দাসপ্রথা একটি প্রাচীন সামাজিক প্রতিষ্ঠান। এটি ব্যক্তিগত পর্যায়ে আধিপত্য বশ্যতা সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে উদ্ভূত। এ সম্পর্কের মাত্রা বেশ বিস্তৃত। এর একদিকে রয়েছে প্রভুর হাতে দাসের জীবন মরণের অধিকার অন্যদিকে রয়েছে সুচিন্তিতভাবে প্রণীত পারস্পরিক দায়দায়িত্বের আইনগত বিধান। কিন্তু এসবের মূল উপাদানটি হলো, আপন স্বার্থোপযোগী কাজে দাসকে বাধ্য করার প্রভুর অধিকার।
দাসপ্রথা (Slavery) : দাসপ্রথা Social stratification-এর প্রাচীনতম রূপ। অসম সামাজিক সম্পর্কের চরম দৃষ্টান্ত Slavery। পৃথিবীর সর্বত্র প্রাচীন সভ্যতা Slavery-এ উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন সময়ে দাসপ্রথা বিক্ষিপ্ত অবস্থায় দেখা যায়। তবে দাসপ্রথার দুটি প্রধান উদাহরণ লক্ষ করা যায়। যথা-
প্রথমত, প্রাচীন সমাজ বিশেষ করে প্রাচীন গ্রিস ও রোমান সমাজের দাসব্যবস্থা।
দ্বিতীয়ত, অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীর আমেরিকার দক্ষিণাংশের রাজ্যসমূহে তৃতীয় পদ পর্যন্ত এ ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। উপর্যুক্ত দু’প্রকার দাসত্ব প্রথা অর্থনৈতিক স্বার্থে প্রতিষ্ঠিত হয়। দাসপ্রথার বিকাশের সাথে এক ধরনের অভিজাত শ্রেণির উদ্ভব ঘটে যারা দাসের শ্রমের উপর নির্ভরশীল। Maxwaber দাসপ্রথাকে Industrial system হিসেবে গণ্য
করেছেন। পাশ্চাত্য সমাজে দাসপ্রথার পূর্ণ বিকাশ ঘটেছিল ।
দাসপ্রথার বৈশিষ্ট্য : দাসপ্রথার বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ :
প্রথমত, দাসের একমাত্র পরিচয় যে তারা প্রভুর সম্পত্তি। তাদের উপর প্রভুর অবাধ কর্তৃত্ব স্বীকৃত। হব হাউজ বলেন, “দাস হচ্ছে এমন একজন মানুষ যাকে সমাজের আইন এবং প্রথা অন্যের সম্পত্তি হিসেবে বিবেচনা করে।”
দ্বিতীয়ত, সামাজিকভাবে দাসরা ছিল ঘৃণার পাত্র। সম্মান ও মর্যাদার প্রশ্নই আসে না।
তৃতীয়ত, দাসকে বাধ্যতামূলকভাবে পরিশ্রম করতে হতো। এ বিষয়ে তার কোনো ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ছিল না। দাসপ্রথা সমাজকে দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছিল :
i. Slave owners বা দাস মালিক- এরা দাসদের উৎপাদন ভোগকারী।
ii. Slave বা দাস- এরা ছিল উৎপাদনের হাতিয়ার।
দাসপ্রথার দুটি প্রধান রূপ হলো- বাণিজ্যিক ও গার্হস্থ্য। বাণিজ্যিক দাসপ্রথার উদাহরণ হলো আঠারোশত শতকের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আবাদি জমিতে নিযুক্ত আফ্রিকা থেকে আনীত দাসরা, আর গার্হস্থ্য দাসপ্রথা ভারতীয় উপমহাদেশে প্রচলিত ছিল। দাসদের জীবন-মরণের অধিকার ছিল প্রভুদের মর্জির উপর। তারা পণ্যের মতো হাট-বাজারে বিক্রি হতো। তাদের কোনো নাগরিক অধিকার ছিল না। তাদের শ্রমের ফসল দাস-মালিকেরা আত্মসাৎ করত। মূলত প্রাচীন রোম ও গ্রিক সভ্যতা গড়ে উঠেছিল দাসপ্রথার উপর ভিত্তি করে।
উপসংহার : উপসংহারে বলা যায়, দাসপ্রথা একটি আধিপত্য বশ্যতা সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে উদ্ভূত সামাজিক প্রতিষ্ঠান। অবশ্য মানবেতিহাসের শিকার, সংগ্রহ বা পশুপালন পর্বে এর অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয় না। এর কারণ হলো একটি বিশেষ মাত্রার জটিল কৃষিব্যবস্থা ব্যতীত দাসপ্রথা লাভজনক হয় না। প্রাচীন সভ্যতার প্রায় সর্বত্রই দাসপ্রথা প্রচিলত ছিল ।