সমাযোজনের উপায়গুলো লিখ। সমায়োজনের গুরুত্ব বর্ণনা কর।

অথবা, যোগাযোগের উপায়গুলো কী কী? যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা কর।
অথবা, যোগাযোগের উপায়গুলো লিখ। যোগাযোগের তাৎপর্য/ গুরুত্ব লিখ।
অথবা, সমাযোজনের উপায়গুলো কী কী? সমাযোজনের প্রয়োজনীয়তাসমূহ আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : বর্তমান আনুষ্ঠানিক সংগঠনে সবকিছুই তথ্যের উপর নির্ভর করে থাকে। আর এ তথ্যের যথাযথ আদান-প্রদান দক্ষ সংযোজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্ভব হয়ে থাকে। সাধারণত সমাযোজনের মূল দায়িত্ব নির্বাহীর।সমাযোজনকে বলা হয় তথ্য আদান-প্রদান প্রক্রিয়া। সংযোজন কাজের গতি সৃষ্টি করে। সংগঠনে সমাযোজনকে বলা হয় জীবনীশক্তি।প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলি দক্ষতার সাথে পরিচালনার জন্যসংযোজন প্রয়োজন।
যোগাযোগ/ সমাযোজনের উপায় বা পদ্ধতি : নিম্নে যোগাযোগ/সমাযোজনের পদ্ধতি বা মাধ্যমগুলো আলোচনা করা হলো :
১. মৌখিক সংযোজন : মৌখিক সমাযোজন প্রক্রিয়া দ্রুত তথ্য পরিবেশন করতে সহায়তা করে।এটা ভাব বিনিময়ের ক্ষেত্রে এবং একে অপরের সমাযোজতা এবং বিশ্বাস প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সার্বিক সহায়তা করে থাকে।
২. লিখিত পদ্ধতি : সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানে লিখিত বার্ষিক প্রতিবেদন যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর মাধ্যমে যারা সংগঠনের সাথে যুক্ত তারা অবগত হতে পারে এবং পরবর্তী সময় যারা যোগ দিবে তারাও সংগঠন সম্পর্কে সুন্দরভাবে পরিচিত হতে পারবে।
৩. মুখোমুখি সংযোজন : সমাজকল্যাণ সংস্থায় মুখোমুখি সম্পর্ক স্থাপন করতে উৎসাহিত করা হয়। এটা নির্বাহী এবং প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মধ্যে সহানুভূতি ও ভাবের আদান প্রদানের ক্ষেত্রেও সহায়তা করে থাকে।
৪. রিপোর্ট : সমাযোজনের সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত ও বহুল প্রচলিত পদ্ধতি হলো রিপোর্ট।প্রতিষ্ঠানসমূহের নির্বাহী কর্মসূচির মাসিক রেকর্ড এ রিপোর্টের মাধ্যমে সবাইকে জ্ঞাত করতে পারেন এবং সবার সাথে সমাযোজন বজায় রাখতে
সক্ষম হন। সংগঠনের কাজের গতির ধারা রেকর্ডের মাধ্যমে অবগত হওয়া যায়। মোটকথা, সমাযোজনের মাধ্যম হিসেবে রেকর্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৫. বুলেটিন ও সাময়িকী : অনেক সমাজকল্যাণমূলক সংস্থা জার্নাল বা সাময়িকী এবং বিশেষ বুলেটিন প্রকাশ করতে সক্ষম হয়। এতে গোটা সংগঠন সম্পর্কিত সুন্দর সুন্দর তথ্য থাকে। এটা সমাযোজনের মাধ্যম হিসেবে বিশেষভাবে কাজ করে থাকে।
৬. মিটিং ও কনফারেন্স : সমাজকল্যাণ সমাযোজনের একটি মাধ্যম হলো মিটিং এবং কনফারেন্স। কিন্তু মিটিং এবং কনফারেন্স কমসংখ্যক বা ছোট ছোট দল নিয়ে গঠিত হওয়া একান্ত উচিত। এর কারণ খুবই সুস্পষ্ট। কেননা, ছোট দল গ্রহণকারী সবার সাথে সুন্দরভাবে সমাযোজন করতে সক্ষম হয়।
৭. ইশতেহার ও নির্দেশপত্র :সমাযোজনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হলো ইশতেহার এবং নির্দেশপত্র। কর্মপরিবর্তন ও কর্ম বিন্যাস করতে এ প্রক্রিয়া বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৮. নিজস্ব ম্যানুয়্যাল : প্রত্যেক সমাজকল্যাণ সংস্থার নিজেদের ম্যানুয়্যাল রয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনকে নির্দেশনা প্রদানকারী হিসেবে কাজ করতে বিশেষভাবে বদ্ধপরিকর। সংগঠনের বিভিন্ন কার্যদানের মধ্যে সংযোজন নীতি ও প্রক্রিয়ার মাধ্যম হিসেবে ম্যানুয়্যাল সহায়তা করতে সক্ষম হয়। সংগঠনের বর্তমান সমস্যা বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে Memorandam সহায়তা করে।
৯. সভার কার্যবিবরণী : সামাজিক প্রতিষ্ঠানে সমাযোজনের মাধ্যম হিসেবে সভা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সভা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন- বোর্ড মিটিং, স্টাফ মিটিং। সভা আবার বার্ষিক এবং নিয়মিতও হতে পারে। তবে ধারাবাহিক
স্টাফ মিটিং প্রয়োজন। কারণ, স্টাফ মিটিং এর মাধ্যমে নীতিনির্ধারণ, ভাবের লেনদেন তথ্যের বিন্যাস এবং কাজের গতি আলোচনা পর্যালোচনা করা হয়। শুধু তাই নয়, পরিকল্পনা অনুযায়ী নিয়মিত কাজ হচ্ছে কি না তা দেখা এবং সমস্যা
মোকাবিলার জন্য সভা অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়ে।
যোগাযোগ/ সমাযোজনের গুরুত্ব : নিম্নে সমাযোজনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরা হলো :
১. পরামর্শ আদান-প্রদান সংযোজন একটি দ্বিমুখী প্রক্রিয়া।সামাজিক প্রশাসনে সমাযোজনে শুধুমাত্র ঊর্ধ্বমুখী হাতিয়ার হিসেবে তথ্য আদান-প্রদান হয় না অর্থাৎ, শুধুমাত্র উপর থেকে তথ্য নিচে যায় না। বরং নিচ থেকে উপরে তথ্য পাঠানো হয়।
২. তথ্য আদান-প্রদান : সংস্থার কার্যাবলিকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় তথ্য সবার মধ্যে বিনিময় করা দরকার। এজন্য সংযোজন দরকার।
৩. পারস্পরিক সংযোজন ও সহযোগিতা : প্রতিটি সমাজকল্যাণ প্রতিষ্ঠানে সাধারণ উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি কাজ করে থাকে।সেখানে সবার মধ্যে একটি একাত্মবোধ ধারণা জাগরিত হওয়া উচিত, যা সমাযোজনের মাধ্যমে জানা সম্ভব।
৪. সমন্বয় : সমাজকল্যাণমূলক সংস্থায় প্রত্যেকের সাথে প্রত্যেকের সংযোজন না হলে অর্থাৎ, তথ্যের আদান-প্রদান না হলে সংগঠন গতিশীল হবে না। সমাযোজনকে বলা হয় সংগঠনের গতি। যদি সংযোজন না হয় তাহলে সমন্বয় সম্ভব হবে না।
৫. সিদ্ধান্ত গ্রহণ : কোন প্রতিষ্ঠানে এককভাবে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে তা অনেক সময় সঠিক হয় না।অধীনস্থদের মতামত, পরামর্শ ও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে তা অধিক ফলপ্রসূ হয়। এ ফলপ্রসূ
সিদ্ধান্তের জন্যসংযোজন প্রয়োজনীয়।
৬. জবাবদিহিতা : জবাবদিহিতা বা Accountability এর জন্য সংযোজন প্রয়োজনীয়। প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি সদস্যকে
জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। জনগণকে তথ্য জানানোর জন্য প্রতিষ্ঠান দায়বদ্ধ। এর জন্য সমাযোজনের গুরুত্ব রয়েছে।
৭. কর্মসূচি বাস্তবায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর সংযোজন প্রয়োজন। এটা ছাড়াও ব্যবস্থাপনা ক্ষেত্রে সমাযোজনের গুরুত্ব রয়েছে।
উপসংহার : যে কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সমাযোজন। আধুনিক জটিল সংগঠন বা সংস্থায় সমাযোজনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। সংযোজন হলো সংগঠনের জীবনীশক্তি। যে প্রতিষ্ঠানের সংযোজন ব্যবস্থা যত উন্নত সে প্রতিষ্ঠান তত দ্রুত সম্প্রসারণশীল এবং উন্নত সেবা দিতে সক্ষম।