এ্যাথনোগ্রাফিক পদ্ধতির সুবিধা ও সীমাবদ্ধতাগুলো কী?

অথবা, এ্যাথনোগ্রাফিক পদ্ধতির ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো লিখ।
অথবা, এ্যাথনোগ্রাফিক পদ্ধতির উপকারিতা ও সমস্যাগুলো আলোচনা কর।
অথবা, এ্যাথনোগ্রাফিক পদ্ধতির সুবিধাও অনুবিধাসমূহ লিখ।
উত্তর।। ভূমিকা : এ্যাথনোগ্রাফিক পদ্ধতি সামাজিক গবেষণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। সামাজিক গবেষণায় মানুষ, সমাজকাঠামো, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি মানুষের জীবন ধারা এবং সামাজিক সমস্যা বিভিন্ন দিক সম্পর্কে অনুসন্ধান
কার্যক্রম পরিচালনা করে।
এ্যাথনোগ্রাফিক পদ্ধতির সুবিধা : সামাজিক গবেষণায় এ্যাথনোগ্রাফিক পদ্ধতির কিছু সুযোগ সুবিধা রয়েছে। নিম্নে এই সুবিধা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. এ্যাথনোগ্রাফিক পদ্ধতিতে আদিম সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে তথ্যানুসন্ধান করা হয়।এই পদ্ধতি সমাজ ও সংস্কৃতি কিভাবে মানুষের আচার আচরণ ও নিয়মকানুন নিয়ন্ত্রণ করে এবং কিভাবে সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি হয় তা বিচারবিশ্লেষণ করা হয় এ সকল সমস্যা দূর করার জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
২. এই পদ্ধতিতে কাঠামোবদ্ধ প্রশ্নমালায় উত্তর গ্রহণ ও সাক্ষাৎকারের মতো কোন ঝামেলা নেই।
৩. এ্যাথনোগ্রাফিক পদ্ধতি বিশৃঙ্খল ও অসংগঠিতভাবে সংগৃহীত তথ্যাবলিকে সংগঠিত ও ব্যবহার উপযোগী করে তুলতে সাহায্য করে।
৪. সামাজিক গবেষণায় এই পদ্ধতিতে মানুষের ইশারা ও আকার ইঙ্গিত সম্পর্কেও অনুসন্ধান চালানো হয়। বিশেষ সমষ্টির মানুষ কোন শব্দ কি অর্থে ব্যবহার করে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার পরিপূর্ণ বিবরণ পাওয়া যায়।
৫. এই পদ্ধতিতে সামাজিক পরিবর্তনের ধারা ও গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে অনুসন্ধান করা হয় এবং এই পরিবর্তনের ফলে সমাজজীবনে সেসব ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় সেগুলো সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে ধারণা লাভ করা যায়।
৬. সামাজিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়াকে একটি চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে ধরে অনুসন্ধান কার্য পরিচালনা করা হয়।
৭. এই গবেষণার পদ্ধতির আর একটি বিশেষ সুবিধা হলো এর মাধ্যমে বিশেষ জনগোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্যগত কাঠামো সম্পর্কে জানা। ফলে একজাতি গোষ্ঠীর সাথে অন্য জাতিগোষ্ঠীর মিল বা অমিল সম্পর্কে জানা যায়।
৮. এই গবেষণা হতে জাতি, উপজাতি ও জ্ঞাতিগোষ্ঠীর গঠন-কাঠামো এবং সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়।
এ্যাথনোগ্রাফিক পদ্ধতিতে আদিম সমাজ ও সংস্কৃতি এবং নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠী সম্পর্কে বিজ্ঞানসম্মতভাবে তথাগংগ্রহ করা যায়। নৃতাত্ত্বিক গবেষণায় এই পদ্ধতি বিশেষ উপযোগী।
এ্যাথনোগ্রাফিক পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা নিম্নে এই পদ্ধতির সীমাবদ্ধতাগুলো উল্লেখ করা হলো :
১. এ্যাথনোগ্রাফিক পদ্ধতিতে সংগৃহীত তথ্য পক্ষপাত দুষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
২. এই পদ্ধতিতে দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণ করতে হয়। ফলে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন পড়ে।
৩. এই পদ্ধতিতে প্রাপ্ত তথ্য পেলেও অনেক ক্ষেত্রে বাস্তবে সেটা প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না।
৪. এই পদ্ধতিতে নানা ধরনের ইঙ্গিতকে অনুমানের ভিত্তিতে অর্থ নির্ণয় করতে হয় যা অনেক সময় সঠিক হয় না।ফলে গবেষণার গুণগতমান বজায় থাকে না।
৫. এ্যাথনোগ্রাফিক পদ্ধতিতে তথ্যসংগ্রহকারীকে অধিক ও দক্ষতাসম্পন্ন হতে হয়।
৬. এই পদ্ধতিতে মূল অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তথ্যসংগ্রহ করতে হয়। ফলে যাদের সম্পর্কে তথ্যসংগ্রহ করা হয় তাদের সাথে সুসম্পর্ক তথ্য সম্পর্ক গড়ে তুলতে হয়। তা না হলে ঐ জাতি বা উপজাতি আর সঠিক তথ্য প্রদান করবে না।
৭. এই সামাজিক গবেষণায় খুব সীমিত আকারে অনুসন্ধান চালানো হয়। যার কারণে অনেক সময় সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় তা সমগ্র জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে না।
উপসংহার : এ্যাথনোগ্রাফিক পদ্ধতি সামাজিক গবেষণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হলেও এ পদ্ধতি পক্ষপাত দুষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এতে অনেক সময় প্রাপ্ত তথ্য সঠিক নাও হতে পারে।