পরীক্ষণ পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ লিখ।

অথবা, পরীক্ষণ পদ্ধতির ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো বর্ণনা কর।
অথবা, পরীক্ষণ পদ্ধতির ভালো ও খারাপ দিকগুলো উল্লেখ কর।
অথবা, পরীক্ষণ পদ্ধতির সবল ও দুর্বল দিকগুলো উল্লেখ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : সমাজকর্ম গবেষণায় ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলোর মধ্যে একটি বস্তুনিষ্ঠ পদ্ধতি হলো পরীক্ষণ পদ্ধতি।এই পদ্ধতিতে বৈজ্ঞানিক উপায়ে তথ্যসংগ্রহ করা হয় এবং সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করা যায়।
পরীক্ষণের সুবিধা : নিম্নে পরীক্ষণ পদ্ধতির কিছু সুবিধা উল্লেখ করা হলো :
১. কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয় : পরীক্ষণ পদ্ধতিতে দুটি চলকের উপস্থাপন করে তাদের মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক খুঁজে বের করা হয়। ফলে সঠিক তত্ত্ব গঠন ও সত্য আবিষ্কার করা সম্ভব হয়।
২. অনুকল্প যাচাই : একজন গবেষক যে বিষয় গবেষণা করতে চান গবেষণার জন্য সে বিষয় উপস্থাপিত অনুকল্পের যথার্থ প্রমাণের ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই পদ্ধতিতে দুটি বিষয়ের মধ্যে শুধু সম্পর্ক নির্ণয় করে,বরং সম্পর্কহীনতা সম্পর্কেও প্রমাণ উপস্থাপন করে থাকে।
৩. নিয়ন্ত্রণ : পরীক্ষণ পদ্ধতির সব চেয়ে ইতিবাচক দিক হলো গবেষণার পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ।গবেষক তার গবেষণা কাজের সকল পর্যায়ে গবেষণার পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। ফলে বাইরের কোন প্রভাব থেকে এটি সাধারণত মুক্ত থাকে।
৪. দীর্ঘমেয়াদি বিশ্লেষণ : গবেষক এই গবেষণা পদ্ধতি দ্বারা কোন সামাজিক ঘটনা বা অবস্থাকে দীর্ঘমেয়াদিভাবে বিশ্লেষণ করতে পারেন।
৫. পুনরাবৃত্তি : পরীক্ষণ পদ্ধতির অপর একটি সুবিধা হলো এর পুনরাবৃত্তি। এ পদ্ধতি কোন বিষয়ের উপর বার বার পরীক্ষা চালানো সম্ভব নয়।
৬. নির্ভুল তথ্য : পরীক্ষণ পদ্ধতিতে প্রাপ্ত তথ্য সাধারণত নির্ভুল, যথার্থ ও সংক্ষিপ্ত হয়।
৭. পক্ষপাত দোষে দুষ্ট নয়: পরীক্ষণ পদ্ধতিতে প্রাপ্ত তথ্য পক্ষপাত দোষে দুষ্ট নয়।তাই এর ফলাফল সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য।
৮. বৈজ্ঞানিক নিয়মনীতি : পরীক্ষণ পদ্ধতিতে বৈজ্ঞানিক নিয়মনীতি সবচেয়ে বেশি মেনে চলা হয়।পরীক্ষণ পদ্ধতির মাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য পাওয়া যায়। এ তথ্য যাচাইয়েরও সুযোগ রয়েছে। এজন্য পরীক্ষণ পদ্ধতিতে প্রাপ্ত তথ্যের গ্রহণযোগ্যতা বেশি।
পরীক্ষণের পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা : নিম্নে পরীক্ষণের পদ্ধতির সীমাবদ্ধতাগুলো বর্ণনা করা হলো :
১. পরিবেশের নিয়ন্ত্রণহীনতা : সামাজিক গবেষণা পদ্ধতিতে পরীক্ষণ পদ্ধতির সবচেয়ে বড় বাধা হলো নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ।তাছাড়া মানুষের আচার আচরণ, যেসব ঘটনা গবেষণার সৃষ্টি করা যায় না; যেমন- মিছিলের ঘটনা, উচ্ছৃঙ্খল জনতার আকস্মিক ঘটানো কর্মকাণ্ড ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। আবার অনেক বিষয় সমাজবিজ্ঞানী আংশিক পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করে পরীক্ষণ করার চেষ্টা করেন। যেটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভালো ফল দেয় না।
২. সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট ঘটনা : সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট ঘটনা; যেমন- জনমত, মনোভাব,বিশ্বাস ইত্যাদি ক্ষেত্রে পরীক্ষণ পদ্ধতির ব্যবহার খুবই কঠিন।
৩. অসহযোগিতা : এই পদ্ধতির একটি অন্যতম অসুবিধা হলো পরীক্ষণ পাত্র পরীক্ষককে সহযোগিতা নাও করতে পারেন।
৪. কৃত্রিম পরিবেশ : পরীক্ষণ পদ্ধতিতে মূলত কৃত্রিম পরিবেশ সৃষ্টি করে গবেষক তার পরীক্ষণ কার্য চালান।কিন্তু নিয়ন্ত্রিত বা কৃত্রিম পরিবেশে যা সামাজিক বিভিন্ন মানুষের আচরণও কৃত্রিম হতে পারে। এতে ফলাফল সঠিক বা নির্ভুল নাও হতে পারে।
৫. নমুনায়নের আকার : সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে পরীক্ষণ পদ্ধতিতে সামাজিক আচার আচরণ বিশ্লেষণে ক্ষুদ্র দল সম্পর্কে সঠিকভাবে তথ্যসংগ্রহ করা যায়, কিন্তু বড় এলাকা ও বড় দলের নমুনায়ন করে জরিপ কাজ পরিচালনা সম্ভব নয়।
৬. সাধারণীকরণে সমস্যা : গবেষক গবেষণা কাজে সংগৃহীত তথ্যাবলির সাধারণীকরণ করে থাকেন। সামাজিক গবেষণার পরীক্ষণ পদ্ধতিতে একাধিক বৈশিষ্ট্য ধারা সাধারণীকরণ ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করে।
উপসংহার : সব সময় বা সকল ক্ষেত্রে পরীক্ষণ পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায় না। পরীক্ষণ পদ্ধতি প্রয়োগের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশের প্রয়োজন হয়।