পরীক্ষণ পদ্ধতি বলতে কী বুঝ? পরীক্ষণ পদ্ধতির বৈশিষ্ট্যগুলো লিখ।

অথবা, পরীক্ষণ পদ্ধতি কী? পরীক্ষণ পদ্ধতির বৈশিষ্ট্যসমূহ কী কী?
অথবা, পরীক্ষণ পদ্ধতির সংজ্ঞা দাও। পরীক্ষণ পদ্ধতির প্রকৃতিসমূহ লেখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : পরীক্ষণ পদ্ধতি মূলত মৌলিক বিজ্ঞানের গবেষণার ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন যাবত ব্যবহৃত হয়ে আসছে।এই পদ্ধতি বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক আবিষ্কার করতে সক্ষম। বর্তমানে এই পদ্ধতি শুধু মৌলিক বা প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় না, সামাজিক বিজ্ঞানের গবেষণায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
পরীক্ষণ পদ্ধতির সংজ্ঞা : একটি তত্ত্ব ও তার চলকের মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক আবিষ্কার করার সুশৃঙ্খল বৈজ্ঞানিক ও যুক্তি নির্ভর উত্তর দানের পদ্ধতি হলো পরীক্ষণ পদ্ধতি। এখানে পরীক্ষক তার ইচ্ছাতো চলক নিয়ে কাজ করতে পারেন
এবং একটি চলকের সাথে অন্য চলকের সম্পর্ক বা একটি চলকের সাথে অন্য চলকের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।
Best এর মতে, “Experimentation is the classic method of the science laboratory, where elements manipulated and effects observed can be controlled.” অর্থাৎ, পরীক্ষণ বৈজ্ঞানিক গবেষণাগারে ব্যবহৃত এমন একটি নিখুঁত পদ্ধতি যার দ্বারা উপাদানগুলোকে ইচ্ছামতো পরিবর্তন করা যায় এবং পর্যবেক্ষণকৃত
ফলাফলকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
Festinger এর মতে, পরীক্ষণের বস্তুকে এভাবে বর্ণনা দেওয়া যায় যে, স্বাধীন চলকের পরিবর্তনের ফলে অধীন চলকের উপর উদ্ভূত প্রতিক্রিয়ার পর্যবেক্ষণ।
Greenwood, “An experiment is the proof of an hypothesis which seeks to hook up two factors into a causal relationship through the study of contrasting situation which have been controlled on all factors except the one of interest, the latter being either the hypothecal cause on hypothetical effect.” অর্থাৎ, কোন পাথসূচক পরিস্থিতির একটি আগ্রহ উদ্দীপক উপাদান ছাড়া, যা আনুমানিক কারণ বা ফল যে কোনো একটি হতে পারে। অন্যান্য উপাদান নিয়ন্ত্রণ করে দুটি উপাদানের কারণগত সম্পর্ক নির্ণয়ের উদ্দেশ্যে কোন অনুকম্প প্রমাণে গৃহীত অনুযাপই হলো পরীক্ষণ।সবশেষে আমরা বলতে পারি পরীক্ষণ হলো এমন একটি গবেষণা পদ্ধতি, যেখানে গবেষণার জন্য চলকগুলোকে ইচ্ছাতো পরিবর্তন করা যায় এবং একটি চলকের ফলে অন্য চলকের সম্পর্ক, একটির সাথে অপরটি নির্ভরতা ইত্যাদি বুঝা যায়।
পরীক্ষণ পদ্ধতির বৈশিষ্ট্যসমূহ : নিম্নে পরীক্ষণ পদ্ধতির বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখ করা হলো :
১. সাধারণীকরণ পরীক্ষণ পদ্ধতি একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। স্বল্প সংখ্যক দৃষ্টান্ত বিশ্লেষণ করে একটি সাধারণ সত্যে উপনীত হওয়াই হলো সাধারণীকরণ। পরীক্ষণ পদ্ধতিতে পরীক্ষক এক বা একাধিক দলের উপর গবেষণা করে প্রাপ্ত
তথ্যের ভিত্তিতে সাধারণ তত্ত্ব বা সূত্র প্রণয়ন করতে পারেন।
২. পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষণ পদ্ধতির একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য। নিয়ন্ত্রণ বলতে মূলত চলকের নিয়ন্ত্রণকেই বুঝানো হয়। গবেষক গবেষণার জন্য ব্যবহৃত চলকগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন এবং একটি চলকের সাথে অন্য চলকের সম্পর্ক নির্ণয় করতে পারেন।
৩. গবেষণার আর একটি বৈশিষ্ট্য হলো পুনরাবৃত্তি। গবেষক গবেষণার বিষয়টি পুনঃপুন পরীক্ষা করে সিদ্ধান্তে উপনীত হন। এ পদ্ধতি পূর্বে পরীক্ষিত বিষয়টি পুনরায় যাচাইয়ের সুযোগ রয়েছে।
৪. পরীক্ষণ হলো একটি সুশৃঙ্খল, সুসংগঠিত জ্ঞানের আবিষ্কার ও উন্নতির সুনির্দিষ্ট গবেষণা পদ্ধতি।
৫. বস্তুনিষ্ঠতা পরীক্ষণ পদ্ধতির অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। এ পদ্ধতিতে বস্তুনিষ্ঠভাবে অনুসন্ধান কার্য পরিচালিত হয়।
উপসংহার : পরীক্ষণ পদ্ধতির মাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য পাওয়া যায়। এ তথ্য যাচাইয়েরও সুযোগ রয়েছে।এজন্য পরীক্ষণ পদ্ধতিতে প্রাপ্ত তথ্যের গ্রহণযোগ্যতা বেশি।