যোগাযোগের প্রকারভেদ আলোচনা কর।

অথবা, আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ সম্পর্কে আলোচনা কর।
উত্তরা৷ ভূমিকা : সাধারণ অর্থে সংযোজন বলতে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি বা দলের মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদানকে বুঝায়। সমাযোজনের ছোট তথা সংবেদনশীল সংজ্ঞায় বলা হয়েছে। “Communication is a two way process of exchanging ideas and information between human beings.”
যোগাযোগ/সমাযোজনের প্রকারভেদ : যোগাযোগ/সমাযোজনের প্রকৃতি অনুসারে একে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা :
১. আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ এবং ২. অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ।
নিম্নে এদের সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
আনুষ্ঠানিক সংযোজন (Formal Communication) : আনুষ্ঠানিক সাংগঠনিক সমাযোজন আনুষ্ঠানিক সাংগঠনিক চার্ট দ্বারা নির্ধারিত হয়, যেখানে কর্তৃত্ব অর্পণ এবং জবাবদিহিতা থাকে ।
M. Noorul Hossain এবং Md. Alauddin তাদের ‘Introduction of Social Work Method’ গ্রন্থে Formal Communication, “The rational and planned system of procedures and channels by which information flows through an organization roughly along the lines of authority.”
আনুষ্ঠানিক সমাযোজন বা সংযোজন প্রতিষ্ঠান হতে ভিন্ন হয়ে থাকে। কাজ করার ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগে মানসম্মত ধরন এবং প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। আকারের দিক থেকে বড় সংগঠন হলে সেখানে আনুষ্ঠানিক সমাযোজন প্রয়োজন হয়।বড় সংগঠনে তথ্য সাধারণত আনুষ্ঠানিক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়ে থাকে।যে কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সমাযোজন।আধুনিক জটিল সংগঠন বা সংস্থায় সমাযোজনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।সমাযোজন হলো সংগঠনের জীবনীশক্তি।যে প্রতিষ্ঠানের সমাযোজন ব্যবস্থা যত উন্নত সে প্রতিষ্ঠান তত দ্রুত সম্প্রসারণশীল এবং উন্নত সেবা দিতে সক্ষম।
অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ/অনানুষ্ঠানিক সংযোজন : অনানুষ্ঠানিক সমাযোজনের ক্ষেত্রে অনানুষ্ঠানিক মাধ্যম প্রত্যেক পর্যায়ে ব্যক্তি দ্বারা ব্যবহৃত হয়। সাধারণত দেখা যায় যে, কোনো সংগঠনে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও পারস্পরিক সম্পর্ক কার্যকর
সমাযোজনের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে এবং এটা কাজের একটা সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করে থাকে। অথবা দেখা যায় যে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তথ্যের জন্য একটি সংস্থার কর্মকর্তা অন্যসংস্থার কর্মকর্তার সাথে সমাযোজন করে এবং সম্পর্ক গড়ে তোলে।আনুষ্ঠানিক সমাযোজনের ক্ষেত্রে লিখিত প্রক্রিয়ায় অফিস নির্দেশ, চিঠি, রিপোর্ট, তথ্য বুলেটিন ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়।অন্যদিকে, অনানুষ্ঠানিক সমাযোজনের ক্ষেত্রে সাধারণত অলিখিত প্রক্রিয়া ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন- ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার, অনানুষ্ঠানিক আলোচনা, ব্যক্তিগত পত্র,টেলিফোন সংলাপ ইত্যাদি। এছাড়া সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, আলোচনা, ওয়ার্কসপ ইত্যাদি অনানুষ্ঠানিক সমাযোজন।
ক. মৌখিক সংযোজন : মৌখিক সমাযোজন তাড়াতাড়ি তথ্য পরিবেশন করতে সহায়তা করে থাকে। এটা ভাবের বিনিময়ের ক্ষেত্রে এবং পারস্পরিক সমাযোজতা এবং বিশ্বাস স্থাপনের ক্ষেত্রে সহায়তা করে থাকে।
খ. লিখিত পদ্ধতি : সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানে লিখিত বার্ষিক প্রতিবেদন যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর মাধ্যমে যারা সংগঠনের সাথে যুক্ত তারা অবহিত হতে পারে এবং পরবর্তীতে যারা যুক্ত হবে তারাও সংগঠন সম্পর্কে জানতে পারবে।
ক. উলম্ব সংযোজন : প্রশাসনে অধস্তন কর্মচারী হতে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নিকট তথ্য পৌছানোর যে পথ তা হলো উলম্ব সংযোজন বা সমাযোজন।এক্ষেত্রে অধস্তন কর্মচারীদের আশা, আকাঙ্ক্ষা, চাহিদা, জিজ্ঞাসা ইত্যাদি মিটিং,কনফারেন্স প্রভৃতির মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নিকট পৌছে দেওয়া হয়।
খ. সমান্তরাল সংযোজন : সমমর্যাদা সম্পন্ন দলীয় সদস্যদের মধ্যে ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে সংযোজন হয় তাকেই সমান্তরাল সংযোজন বলে। অর্থাৎ, যে সমাযোজন একই দলের মধ্যে সমমর্যাদা বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে হয়ে থাকে তাকে সমান্তরাল সমাযোজন বলে। যেমন- একই অফিসের সমমর্যাদা সম্পন্ন কর্মচারীদের মধ্যে সমাযোজন।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, কোন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সমাযোজন। আধুনিক জটিল সংগঠন বা সংস্থায় সমাযোজনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। সমাযোজন হলো সংগঠনের জীবনীশক্তি। যে প্রতিষ্ঠানের সমাযোজন ব্যবস্থা যত উন্নত সে প্রতিষ্ঠান তত দ্রুত সম্প্রসারণশীল এবং উন্নত সেবা দিতে সক্ষম।