সংশোধন ক্ষেত্রে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের সমস্যা উল্লেখ কর।

অথবা, সংশোধন ক্ষেত্রে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের সীমাবদ্ধতাগুলো লিখ।
অথবা, সংশোধন ক্ষেত্রে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের দুর্বল দিকগুলো তুলে ধর।
অথবা, সংশোধন ক্ষেত্রে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের সমস্যাগুলো কি কি?
উত্তর৷। ভূমিকা :
মাঠকর্ম অনুশীলনের জন্য সমাজকর্ম ছাত্র-ছাত্রীদের সংশোধন প্রতিষ্ঠানে প্রেরণ করা হয়।মাঠকর্ম সম্পন্ন করতে গিয়ে অথবা ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা এসব সংস্থায় নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বাংলাদেশে মাঠকর্মের পরিধি অনেক থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন সমস্যার কারণে সমাজকর্মীরা দক্ষ হতে পারছে না।
মাঠকর্ম/ব্যবহারিক প্রশিক্ষণে অনুশীলনের সমস্যা : নিম্নে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণে অনুশীলনের সমস্যাসমূহ তুলে ধরা হলো :
১. দক্ষ জনবলের অভাব : সংশোধন কেন্দ্রগুলোর অন্যতম সমস্যা হলো দক্ষ জনবলের অভাব। মাঠকর্মীরা এজন্য নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়। তারা অপরাধ বা মাদকাসক্তদের সংশোধন সংস্থায় কাজ করতে এসে সমন্বয়হীনতার সম্মুখীন হয়। নিয়মিত পেশাগত দিক প্রভৃতি সব দিকেই সমস্যা থাকায় মাঠকর্মীদের পক্ষে মাঠকর্ম অনুশীলন জটিল হয়ে দাঁড়ায় ।
২. পেশাগত স্বীকৃতির অভাব : আমাদের দেশে সমাজকর্ম এখনো পেশাগত স্বীকৃতি পায়নি। এর ফলে সংশোধন ব্যবস্থায় চাকুরীর ব্যক্তিদেরও এর উপর তেমন ধারণা নেই। এ সমস্যার কারণে শিক্ষার্থীদের মাঠকর্ম সম্পাদনে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়।
৩. তথ্য সংগ্রহে বাধা : তথ্য সংগ্রহের জটিলতার কারণে মাঠকর্ম সম্পাদন শিক্ষার্থীদের নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হয়। এজন্য সংস্থা ও সংস্থার উদাসীনতা দায়ী।
৪. প্রতিকূল পরিবেশ : সংশোধন ব্যবস্থার পরিবেশ প্রায়ই মাঠকর্ম অনুশীলনের প্রতিকূল থাকে। অথচ মাঠকর্ম সম্পাদনের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ অত্যাবশ্যক। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব পালনে বাধার সৃষ্টি হয়।
৫. গবেষণা ও প্রযুক্তিগত সমস্যা : সংশোধন ব্যবস্থায় মাঠকর্ম অনুশীলনের আর একটি বাধা হলো গবেষণা ও প্রযুক্তিগত সমস্যা। সংশোধন প্রতিষ্ঠানগুলোতে গবেষণা নেই বললেই চলে। এছাড়া রয়েছে প্রযুক্তিগত বিভিন্ন বাধা। ফলে মাঠকর্ম অনুশীলন কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
৬. পুনর্বাসনের স্বল্পতা : সংশোধন সংস্থাগুলোতে অপরাধী বা মাদকাসক্তদের সংশোধন ও সুস্থ হওয়ার পর তাদের পুনর্বাসনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এদেশে তাদের জন্য পুনর্বাসনমূলক কর্মসূচি খুবই কম। ফলে মাঠকর্মীরা একাজে সফল হতে পারছে না।
৭. প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের অভাব : সংশোধনী প্রতিষ্ঠান থেকে সুস্থ হবার পর পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় এ ধরনের প্রতিষ্ঠান খুবই কম। ফলে পুনর্বাসন কার্যক্রম বাধার সম্মুখীন হয়। এতে করে শিক্ষানবিশ সমাজকর্মীদের কাজ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
৮. সুষ্ঠু নীতিমালার অভাব : সুষ্ঠু নীতিমালা ব্যতীত কোনো কাজই ঠিকভাবে করা সম্ভব হয় না। সংশোধনমূলক সংস্থাগুলোর কার্যক্রম পরিচালনার দীর্ঘমেয়াদি সুষ্ঠু নীতিমালা না থাকায় এর কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে শিক্ষার্থীরা মাঠকর্ম অনুশীলনে বাধার সম্মুখীন হয়।
৯. কিশোরদের শ্রেণিবিভাজন সমস্যা : কিশোর সংশোধনী প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মাঠকর্ম সম্পাদনের জন্য সংস্থাপন করা হয়। কিন্তু এ ধরনের সংশোধনী প্রতিষ্ঠানে কিশোর অপরাধীদের সংশোধনের জন্য কোনো শ্রেণিবিভাজনের ব্যবস্থা নেই।ফলে মাঠকর্মীরা নানা বাঁধার সম্মুখীন হয়।
১০. পিতামাতার অনীহা : সংশোধন সংস্থায় কিশোরদের নির্দিষ্ট সময় শেষে তার পিতামাতা নেয়ার কথা থাকলেও তাদের অনেকেই নিতে অস্বীকৃতি জানায়। এর বাইরে অন্য কারো নিকট দিলে কিশোরদের সংশোধন ব্ যবস্থা আর ধরে রাখা যায় না।
১১. তহবিলের সমস্যা : সংশোধন প্রতিষ্ঠানের মাঠকর্ম অনুশীলনের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হলো তহবিলের স্বল্পতা।সংস্থার কর্মসূচির তুলনায় তহবিল সংকট প্রায়ই লেগে থাকে। এতে করে শিক্ষার্থীরা মাঠকর্ম সম্পাদন করতে কর্মসূচি বাস্তবায়নে নানাবিধ প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়। এ অবস্থায় মাঠকর্ম অনুশীলন করতে অনেক বেগ পেতে হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, উপর্যুক্ত সমস্যাসমূহ ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের অনুশীলনের সময় সংশোধনসংস্থায় লক্ষ করা যায়। এসব সমস্যার কারণে একদিকে যেমন প্রতিষ্ঠানের গতিশীলতা হ্রাস পায়, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করাও কঠিন হয়ে পড়ে। এ অবস্থা প্রতিষ্ঠান ও মাঠকর্মের লক্ষ্য অর্জন বাধার সম্মুখীন হয়।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a4%e0%a7%83%e0%a6%a4%e0%a7%80%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%ad%e0%a6%bf%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a8-%e0%a6%95/