শাস্তি প্রদানের পদ্ধতি হিসেবে দৈহিক শাস্তি সম্পর্কে লিখ।

অথবা, শাস্তি প্রদানের পদ্ধতি হিসেবে দৈহিক শাস্তির বর্ণনা কর।
অথবা, শাস্তি প্রদানের পদ্ধতি হিসেবে দৈহিক শাস্তির বিবরণ দাও।
অথবা, শাস্তি প্রদানের পদ্ধতি হিসেবে দৈহিক শাস্তি সম্পর্কে আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে সমাজ কিভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে সে বিষয়ে দার্শনিকরা চিন্তাভাবনা করেন। তারা বলেন, রাষ্ট্র আইনের মাধ্যমে, শাস্তি প্রয়োগের মাধ্যমে সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করবে। সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে মানুষের বুদ্ধিসত্তারও বিকাশ ঘটে। ফলে মানবসমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অপরাধীকে শাস্তি প্রদানের বিভিন্ন পদ্ধতি আবিষ্কার করে।
দৈহিক শাস্তি : দৈহিক শাস্তির মধ্যে পড়ে বেত্রাঘাত, অঙ্গহানী ইত্যাদি শারীরিক নির্যাতন। কিন্তু এসকল শাস্তির বিধান বাংলাদেশের দণ্ডবিধিতে নেই। ১৮৩৪ সালে ফোর্ট উইলিয়াম বিভাগে বেত্রাঘাত উঠিয়ে দেওয়া হয় এবং ১৮৪৪ সালে মেজিস্ট্রেটকে কিশোর অপরাধীর বেলায় বেত্রাঘাতের বিধান রাখা হয়। ১৮৪৫ সালের XVIII নম্বর আইনে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত ব্যক্তির ক্ষেত্রে বেত্রাঘাত প্রযোজ্য ছিল। ১৮৬৪ সালে কিছু অপরাধের ক্ষেত্রে বেত্রাঘাত অনুমোদন করা হয়। কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে ১৯০৯ সালে উক্ত আইন বাতিল করা হয়। তবে এখনো আমাদের বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে থেকে বেত্রাঘাত উঠে যায় নি বরং প্রচলিত রয়েছে। কারণ, এখনও গ্রামীণ বাংলাদেশের অন্যায় ও অপরাধের বিচার আইন আদালতের মাধ্যমে না হয়ে গ্রাম্য পঞ্চায়েত, – মুরুব্বি, মাতব্বর, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বারের সালিশির মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়। এ সকল সালিশি বিচারের ক্ষেত্রে মারাত্মক অপরাধের জন্য অপরাধীকে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে বেত্রাঘাত করা হয়। যদিও এই বেত্রাঘাত প্রথা আইন অনুমোদিত নয়।
সমালোচনা : বেত্রাঘাতের মূল উদ্দেশ্য হলো জনমনে ভীতি প্রদর্শন করা, যাতে তারা অপরাধ করা থেকে বিরত থাকে কিন্তু বেত্রাঘাতের মাধ্যমে অনেক সময় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল নাও পাওয়া যেতে পারে। তাছাড়া বেত্রাঘাত আসামীর মনে সাময়িক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। সুতরাং এ পদ্ধতি অপরাধ দমনে সহায়ক নয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, শাস্তির প্রদানের পদ্ধতি অনেক প্রকারের হতে পারে। তন্মধ্যে দৈহিক শাস্তি অন্যতম। দৈহিক শাস্তিরও বিভিন্ন ধরন রয়েছে। এগুলো অপরাধভেদে প্রদান করা হয়। সাধারণত গ্রামীণ সমাজকাঠামোতে এ ধরনের শাস্তির প্রয়োগ বেশি লক্ষ্য করা যায়।