জরিমানা ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত সম্পর্কে লিখ ।

অথবা, জরিমানা ও সম্পত্তি রাজেয়াপ্ত সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দাও।
অথবা, জরিমানা ও সম্পত্তি রাজেয়াপ্ত সম্পর্কে যা জান উল্লেখ কর।
উত্তরা৷ ভূমিকা :
সমাজ বা রাষ্ট্রের মধ্যে যেমন অপরাধ সংঘটিত হয় তেমনি সমাজ বা রাষ্ট্রই অপরাধীর আচরণ সংশোধনের বিধানকল্পে শাস্তির ব্যবস্থা করে থাকে। আর এর জন্য দেশে বিদ্যমান বিচারব্যবস্থাও সক্রিয়। গ্রাম পঞ্চায়েত, সালিস কেন্দ্র, আদালত প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান অপরাধীর শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা ও শাস্তি কার্যকর করে থাকে। এ সকল প্রতিষ্ঠান
বিভিন্ন পদ্ধতিতে শাস্তি প্রদান করে থাকে।
জরিমানা ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত : ব্রিটিশ আইন অনুসারে বাংলাদেশে সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণ বিধান চালু আছে। অবশ্য ১৯২১ সালের আইন (XVI) ইহা বাতিল করে শুধুমাত্র নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে বাজেয়াপ্তকরণ নীতি বহাল রাখা হয়।
১২১ ধারা অনুসারে হামলা বা লুটতরাজ হতে প্রাপ্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা যাবে।
১২৭ ধারা মোতাবিক যুদ্ধ বা হামলা বা লুটতরাজ হতে প্রাপ্ত সম্পত্তি গ্রহণ করলে তা বাজেয়াপ্ত করা যাবে।
১৬৯ ধারা অনুসারে সরকারি কর্মচারী কর্তৃক বেআইনীভাবে সম্পত্তি ক্রয় করলে তা বাজেয়াপ্ত করা যাবে। Criminal procedure code
৫১৭ ধারা মোতাবেক বিচারক যদি মনে করেন যে, সম্পত্তি বা দলিল সম্পর্কে কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সে ক্ষেত্রে যে কোনো রায় দেওয়া যাবে। অবশ্য এই ধারার যে কোনো সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা যাবে না। কারণ, শুধুমাত্র যে ক্ষেত্রে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সেক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য হবে। জরিমানা অর্থাৎ অর্থ জরিমানাও এক ধরনের বাজেয়াপ্ত। কারণ, আইন প্রয়োগ করে টাকা বাজেয়াপ্ত করাই জরিমানা। বাংলাদেশের দণ্ডবিধিতে-
১৩৭ ধারা অনুসারে বাংলাদেশ সেনা, নৌ, বিমানবাহিনীর কোনো সদস্য কোনো বাণিজ্যিক জাহাজে লুকিয়ে থাকলে উক্ত জাহাজের ৫০০ (পাঁচশ) টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা যাবে।
২৫৪ ধারা মোতাবেক যে জমি বা জমির উপর বেআইনী সভা সমিতি অনুষ্ঠিত হয় তার মালিক বা দখলদারের অনধিক ১০০০ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড করা যাবে। যে ব্যক্তির স্বার্থে দাঙ্গা সংঘটিত হয় তার দায়িত্ব অবহেলার জন্য জরিমানা করা যাবে।
জরিমানা সম্পর্কে আইন প্রণেতাদের বক্তব্য : আইন প্রণেতাদের অভিমত হলো, জরিমানা যাতে অত্যধিক না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। এ বিষয়ে চারটি মূলনীতির উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। যথা :
ক. অপরাধ করে অপরাধীর কতটুকু মুনাফা হলো,
খ. অপরাধের বাস্তব মূল্য কতটুকু,
গ. কতটুকু ক্ষতিসাধন করা হলো,
ঘ. অপরাধী ব্যক্তির মূলধন কত। এ চারটি মূলনীতির উপর ভিত্তি করে জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা বাংলাদেশের অপরাধের শাস্তিবিধানের বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত হলাম। কিন্তু প্রশ্ন হলো এ সকল পদ্ধতি বাস্তবে কতটুকু কার্যকরী হচ্ছে তাই বিবেচ্য। যদি এ সকল
পদ্ধতি যথাযথভাবে প্রয়োগ করা যায় তাহলে অপরাধ নিবারণে এ সকল পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি আশাবাদী। আর যদি এ সকল পদ্ধতি শুধু খাতাকলমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে তাহলে অপরাধ নিবারণ তো দূরের কথা বরং বৃদ্ধি পাবে।