অথবা, লোকসংস্কৃতির সুবিধা ও অসুবিধা আলোচনা কর।
অথবা, লোকসংস্কৃতির ভালো দিক ও মন্দ দিক সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা, লোকসংস্কৃতির ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক সম্পর্কে বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : লোকসংস্কৃতি হলো, গ্রামীণ জীবনের দৈনন্দিন কার্যকলাপ আচার অনুষ্ঠান ও বিশ্বাস, যা কেবল গ্রামীণ জনসাধারণের দৈনন্দিন জীবনে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। লোকসংস্কৃতির দ্বারা বুঝায়, গ্রামের জনগণের ব্যবহার ও চর্চার মাধ্যমে গড়ে উঠা একটি নিজস্ব জীবনধারা, যাতে তাদের আপন বৈশিষ্ট্যসমূহ ফুটে উঠে। বহুকাল ধরে চলে আসা রীতিনীতি, মূল্যবোধ, বিশ্বাস, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান, আচার অনুষ্ঠান যেগুলো গ্রামীণ জনগণের জীবনযাত্রার সাথে মিশে আছে। লোকসংস্কৃতি এমন এক ধরনের সংস্কৃতি যা গ্রামের সহজ সরল মানুষের জীবনের প্রতিচ্ছবি। তাদের মাঝ থেকেই উদ্ভব এবং তাদের মাঝেই আগ্রহ ভরে গ্রহণযোগ্য। শহরের পরিবর্তনশীল সংস্কৃতি যাতে খুব একটা প্রভাব বিস্তার করতে পারে না।
লোকসংস্কৃতির ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব : বাংলাদেশের সমাজে লোকসংস্কৃতির ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় ধরনের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। তাই লোকসংস্কৃতিকে অবিমিশ্র আশীর্বাদ বলা যায় না। বাংলাদেশের
সমাজে লোকসংস্কৃতির ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব নিম্নরূপ :
১. ইতিবাচক প্রভাব : লোকসংস্কৃতির প্রভাবে গ্রামাঞ্চলের জনগণ উন্নয়নের প্রভাব থেকে বঞ্চিত বিধায় স্বল্পোন্নত বাংলাদেশে অধিক জনগণ কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। বাংলাদেশের ৭৮ ভাগ লোক গ্রামে বাস করে। গ্রামের প্রধান পেশা কৃষি। এ কৃষিকাজে এখন পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক উন্নতির ফলে পুরোপুরি প্রয়োগ করা যায়নি। ফলে বাংলাদেশের সকল লোক কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। এ অবস্থায় গ্রামের লোকজন যদি পাশ্চাত্য সভ্যতার ও সংস্কৃতির অনুসারী হয়ে পড়ে তবে বিপুল লোকজন বেকার হয়ে পড়বে, যা বাংলাদেশের সমাজ জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ। সুতরাং, লোকসংস্কৃতি কিছু কিছু দিক দিয়ে উপকারী। লোকসংস্কৃতির কার্যপ্রণালিতে খরচ ও ব্যয় কম হয়। গ্রামের লোকের মাথাপিছু আয় কম বিধায় তাদের আয়ের সাথে ব্যয় সংগতিপূর্ণ। লোকসংস্কৃতি গ্রামের লোকের সংস্কৃতি হওয়ার মানুষের জীবনে তা সুফল বয়ে আনে। কাজেই বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগণের মনে লোকসংস্কৃতি অত্যন্ত ফলপ্রসূ ভূমিকা পালন করে আসছে। লোকসংস্কৃতিও বিতর্কিত। কেননা, এর ইতিবাচক প্রভাবের সাথে সাথে নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে।
২. নেতিবাচক প্রভাব : লোকসংস্কৃতি গ্রামের জনগণের জীবনে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। ফলে এর মধ্যে কোনো পরিবর্তন সূচিত হয়নি। সংস্কৃতি যদি পরিবর্তনশীল না হয়, তবে তা জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করতে পারে না। ফলে তারা চিরদিন অনুন্নতই থেকে যায়। এ কারণে গ্রামীণ জনগণ অন্ধকারের তিমিরেই রয়ে গেছে। আমরা জানি, সংস্কৃতি গতিশীল।
লোকসংস্কৃতির গতিশীলতা নেই, ফলে তা মানুষের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনে না। বাংলার গ্রামীণ জনগণের জীবনে লোকসংস্কৃতিতে চিত্তবিনোদনের সুযোগ কম। ফলে তা সমাজ জীবনে নানা সমস্যার সৃষ্টি করে। গ্রামের জনগণ অশিক্ষিত হওয়ায় তারা তাদের জীবনের মান সম্পর্কে অজ্ঞ। এক্ষেত্রে লোকসংস্কৃতি তাদের পরিবর্তন সহায়ক নয়। জীবন সম্পর্কে তারা উদাসীন। খেয়ালের বশবর্তী হয়ে তারা অধিক সন্তান জন্ম দিয়ে থাকে, যা কি না বাংলাদেশের এক নম্বর জাতীয় সমস্যা।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, লোকসংস্কৃতির ইতিবাচক ও নেতিবাচক দু’টি প্রভাবই রয়েছে। ফলে এর দ্বারা মানুষ উপকৃত ও ক্ষতিগ্রস্ত দু’টিই হচ্ছে, কিন্তু এর ভালো দিকটা গ্রহণ করে খারাপ দিকটা বর্জনের মধ্যেই গ্রাম বাংলার আপামর জনগণের উন্নতি নিহীত।