লিপিবদ্ধকরণের নীতিমালা সম্পর্কে আলোচনা কর।

অথবা, কেস রেকর্ডিং-এর নীতিমালা বর্ণনা কর।
অথবা, লিপিবদ্ধকরণের নীতিমালাগুলো কী কী?
অথবা, কেইস রেকডিং এর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত নীতিগুলো লেখ।
অথবা, কেইস লিপিবদ্ধকরণের মূলনীতিসমূহ লিখ।
অথবা, কেস রেকডিং এর মূল দর্শনসমূহ লিখ।
উত্তরা৷ ভূমিকা : সমাজকর্ম অনুশীলনের ক্ষেত্রে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি, তার জীবন ইতিহাস, আর্থসামাজিক অবস্থা,পারিবারিক অবস্থা, তার সমগ্র সমস্যার কারণ, সমস্যার প্রকৃতি, সমাজকর্মীর নিকট ব্যক্তির সুবিধার প্রাপ্যতা, তার বর্তমান ও পূর্ববর্তী অবস্থা, বিশেষ ঘটনা ইত্যাদি ধারাবাহিকভাবে লেখাকে লিপিবদ্ধকরণ বা কেস রেকর্ডিং বলে।
লিপিবদ্ধকরণের নীতিমালা : লিপিবদ্ধকরণের ক্ষেত্রে কতকগুলো নীতিমালা অনুসরণ করতে হয়। এসব নীতিমালা অনুসরণ না করলে লিপিবদ্ধকরণ প্রক্রিয়ার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব Anne W. Lindsay তাঁর ‘Group Work Recording : Principle and Practice’ গ্রন্থে লিপিবদ্ধকরণের পাঁচটি নীতির কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলো হলো :
১. নমনীয়তার নীতি (Principle of flexibility),
২. নির্দিষ্টকরণ নীতি (Principle of selection),
৩. পাঠযোগ্যতার নীতি (Principle of readability),
৪. গোপনীয়তার নীতি (Principle of confidentiality) এবং
৫. সমাজকর্মীর গ্রহণ নীতি (Principle of workers acceptance)।
১. নমনীয়তার নীতি (Principle of flexibility) : লিপিবদ্ধকরণের ক্ষেত্রে নমনীয়তার নীতি অনুসরণ করা হয়।
কারণ সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে ব্যক্তির সমস্যার প্রকৃতিও change হতে পারে। তাছাড়া সময়ের সাথে সাথে নতুন তথ্য পাওয়া যেতে পারে এবং পুরাতন তথ্য অসার প্রমাণিত হতে পারে। এ কারণে লিপিবদ্ধকরণের ক্ষেত্রে নমনীয়তার নীতি অনুসৃত হয়।
২. নির্দিষ্টকরণ নীতি (Principle of selection) : সমাজকর্মী যা কিছু দেখবেন ও জানবেন তার সবকিছুই লিপিবদ্ধ করবেন না। কারণ সবকিছু লিপিবদ্ধকরণের প্রয়োজনীয়তা নেই। ব্যক্তি ও তার সমস্যা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোই কেবল তিনি লিপিবদ্ধ করবেন। এক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট বিষয় আছে যা ব্যক্তিকে লিপিবদ্ধ করতে হয়। যেমন-
ক. ব্যক্তির ব্যক্তিগত পরিচয় :
খ. পারিবারিক তথ্য :
i. নাম;
ii. মাতার নাম;
iii. পিতার নাম;
iv. ধর্ম;
V. পেশা;
vi. জাতীয়তা;
vii. তার সমস্যা;
viii. মাসিক আয়;
ix. মাসিক ব্যয়;
X. শিক্ষাগত যোগ্যতা;
xi. সমস্যার প্রকৃতি;
xii. সামাজিক ভূমিকা পালন ক্ষমতা;
xiii. রাজনৈতিক অংশগ্রহণ;
xiv. সংগীত ও সাহিত্যচর্চা;
xv. বন্ধুবান্ধবের সংখ্যা;
xvi. ধর্মের প্রতি মনোভাব;
xvii. বিবিধ।
i. পরিবারের সদস্য সংখ্যা,
ii. বয়স;
iii. লিঙ্গ বিভাজন;
iv. উপার্জনমূলক সদস্য সংখ্যা;
v. নির্ভরশীল সদস্য সংখ্যা
vi. সদস্যদের পেশা;
vii. মাসিক আয় ও ব্যয়;
viii. সঞ্চয়;
ix. সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতা;
x. সদস্যদের সামাজিক মর্যাদা;
xi. সদস্যদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ;
xii. পারিবারিক বিনোদন;
xiii. পরিবার ভগ্ন না স্বাভাবিক;
xiv. পরিবারে প্রতিবন্ধী আছে কি না;
xv. অপরাধী আছে কি না;
xvi. পিতা কিংবা মাতা ডিভোর্সি কি না;
xvii. বিবিধ।
এছাড়া সাহায্যার্থীর সামাজিক মর্যাদা, মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি, পছন্দের বিষয়, বিনোদনের ধরন, সমস্যা সমাধানে তার আগ্রহ, কি ধরনের সাহায্য পেতে সে আগ্রহী, তার ভাবভঙ্গি ইত্যাদি বিষয় লিপিবদ্ধ করার আবশ্যকতা রয়েছে। তবে কোন বিষয় লিপিবদ্ধ করতে হবে তা নির্ভর করবে সাহায্যার্থী ও তার সমস্যার উপর
৩. পাঠযোগ্যতার নীতি (Principle of readability) : লিপিবদ্ধকৃত বিষয়াবলি যাতে সহজভাবে পাঠযোগ্য ও বোধগম্য হয় সেভাবেই লিপিবদ্ধ করতে হবে। এ নীতি অনুযায়ী লিপিবদ্ধকৃত বিষয়াবলি অবশ্যই পাঠকের কাছে সহজ,বোধগম্য, সংক্ষিপ্ত ও সুস্পষ্ট হতে হবে।
৪. গোপনীয়তার নীতি (Principle of confidentiality) : সমাজকর্মের একটি উল্লেখযোগ্য নীতি হলো গোপনীয়তার নীতি। এ কারণে লিপিবদ্ধকরণের ক্ষেত্রেও এ নীতি মেনে চলতে হয়। একজন সমাজকর্মী যেসব বিষয় লিপিবদ্ধ করেন তা দলিলস্বরূপ রয়ে যায়; তাই এগুলো এমনভাবে সংরক্ষণ করতে হবে যাতে সাধারণ মানুষের কাছে তা গোপন থাকে।
৫. সমাজকর্মীর গ্রহণ নীতি (Principle of workers acceptance) : সমাজকর্মীকে লিপিবদ্ধকরণের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। লিপিবদ্ধকরণের ক্ষেত্রে সমাজকর্মীকে অনীহা প্রকাশ করা যাবে না এবং দায়িত্ব এড়িয়েও চলা যাবে না।
উপর্যুক্ত বিষয়গুলো ছাড়াও লিপিবদ্ধকরণের ক্ষেত্রে সমাজকর্মীকে আরো কিছু নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে।
যেমন-
ক. পক্ষপাতিত্বহীনতার নীতি;
খ. সঠিক তথ্য লিপিবদ্ধকরণ নীতি;
গ. অর্থবহ ও কার্যকর তথ্য লিপিবদ্ধকরণ নীতি এবং
ঘ. বিবিধ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার শেষে আমরা বলতে পারি যে, একজন সমাজকর্মীকে লিপিবদ্ধকরণের ক্ষেত্রে অবশ্যই উক্ত নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। উক্ত নীতিমালা অনুসরণ না করলে লিপিবদ্ধকরণের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কখনো
সার্থক হবে না। তাই লিপিবদ্ধকরণের উদ্দেশ্যকে সার্থক করে তুলতে হলে এবং ব্যক্তির সমস্যার স্বরূপ নির্ণয়পূর্বক সমস্যার সঠিক সমাধানের লক্ষ্যে অগ্রসর হওয়ার জন্য ব্যক্তিকে অবশ্যই উক্ত নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে।