অথবা, মৃত্যুদণ্ড সম্পর্কে তোমার অবস্থান ব্যাখ্যা কর এবং মতের স্বপক্ষে যুক্তি দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা : সমাজে অপরাধের প্রতিবিধানের জন্য শাস্তির উদ্ভব হয়েছে। শাস্তি হলো মানুষের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করার একটি উপায়। সমাজে বসবাসকারী মানুষ স্বেচ্ছায় তাদের নৈতিকতা ভঙ্গ করে এমন সব কর্ম করে যার ফলে সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা কষ্টকর হয়ে পড়ে। মানুষের এসব কর্মকে অপরাধ বলা হয়। এ অপরাধমূলক কাজ হলো সমাজ বিরোধী কার্যকলাপ। এ সমাজ বিরোধী কার্যকলাপের প্রতিবিধান হিসেবে নীতিবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে শাস্তির আলোচনা হয়ে থাকে।
মৃত্যুদণ্ড সম্পর্কে মতামত : শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড সমর্থনযোগ্য কি না এ প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে চিন্তাশীল ব্যক্তিদের মধ্যে মতভেদ দেখা যায়। প্রতিরোধাত্মক মতবাদ অনুযায়ী প্রাণদণ্ড সমর্থনযোগ্য। কারণ অপরাধীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার উদ্দেশ্য অপরকে অনুরূপ ভয়ংকর অপরাধজনক কাজ থেকে বিরত করা। লঘু প্রতিশোধাত্মক মতবাদ অনুযায়ী অপরাধীকে প্রাণদণ্ড দেয়া হয় ব্যক্তি এবং পরিবেশের সাথে যুক্ত যেসব দোষ, কারণ বা অবস্থাগুলো আছে সেগুলো কেবলমাত্র তার নিজের কল্যাণের জন্য নয়, নৈতিক নিয়মের মর্যাদা ও মহিমা রক্ষা করার জন্য। এটা অপরাধীর বয়স, চরিত্র, অপরাধের সময়, তার শারীরিক, মানসিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে এবং অপরাধের গুরুত্ব বিচার করে ও তদানুসারে শাস্তি নির্ধারণের কথা বলে। তাই এ শাস্তির পশ্চাতে নিরপেক্ষতা ও ন্যায়পরায়ণতা বিদ্যমান। সুতরাং আমার মতে, শাস্তির ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থা মৃত্যুদণ্ড থেকে অধিক কার্যকরী। মৃত্যুদণ্ড সমর্থন না করার পিছনে যে কারণগুলো রয়েছে। তা নিম্নে দেয়া হলো :
ক. প্রাণদণ্ড প্রথা প্রচলিত থাকা সত্ত্বেও নরহত্যা অনুষ্ঠিত হয়।
খ.অপরকে শিক্ষা দেয়ার জন্য অপরাধীকে যন্ত্ররূপে ব্যবহার করা যুক্তিযুক্ত নয়।
গ. বিচার বিভ্রাটের জন্য বহু নিরপরাধ ব্যক্তির প্রাণদণ্ড হয়।
ঘ. প্রাণদণ্ড অপরাধীর সংশোধনের কোন পথ খোলা রাখে না।
ঙ. অপরাধমূলক সমাজবিজ্ঞানী এবং নৃতত্ত্ববিদদের মতে অপরাধীকে শাস্তি না দিয়ে চিকিৎসালয়ে বা সংশোধনাগারে পাঠানো যুক্তিযুক্ত।
চ. মানুষের জীবন দেয়ার যখন ক্ষমতা নেই, তখন তার জীবন নেয়ারও কোন অধিকার নেই। ১৯৪৯ সালে গ্রেট ব্রিটেনে প্রাণদণ্ডের প্রয়োজনীয়তা আছে কি না বিচার করে দেখার যে রাজকীয় কমিশন নিযুক্ত করা হয়, সেই রাজকীয় কমিশন প্রাণদণ্ডের বদলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়ার পক্ষে অভিমত দেন। সম্প্রতি ব্রিটেনে প্রাণদণ্ড প্রথা উচ্ছেদ করা হয়েছে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, প্রতিটি অপরাধের ক্ষেত্রেই শাস্তি প্রযোজ্য। তবে অপরাধ অনুযায়ী শাস্তির মধ্যে পদ্ধতিগত পার্থক্য বিদ্যমান। শাস্তির বিষয়ে যতই মতবিরোধ থাক না কেন সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অপরাধ দমনে শাস্তির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তাই পরিশেষে আমরা বলতে পারি, ব্যক্তি এবং পরিবেশের সাথে যুক্ত দোষ নিরসন কারণগুলো বিচার করার পর যদি দেখা যায় অপরাধীকে প্রাণদণ্ড দেয়াই যুক্তিসঙ্গত তাহলে সেক্ষেত্রে প্রাণদণ্ড দেয়া আর যদি অপরাধের মাত্রা তেমন তীব্র না হয়ে থাকে তবে তাকে লঘু শাস্তি বা সংশোধনের ব্যবস্থা করতে হবে।