মুতাজিলা ও আশারিয়াদের মধ্যে পার্থক্য লেখ।

অথবা, মুতাজিলা ও আশারিয়াদের মধ্যে বৈসাদৃশ্য লেখ।
অথবা, মুতাজিলা ও আশারিয়াদের মধ্যে পার্থক্য কী?
অথবা, মুতাজিলা ও আশারিয়াদের মধ্যে যেসব পার্থক্য আছে তা সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, মুতাজিলা ও আশারিয়াদের মধ্যে পার্থক্য সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
মুসলিম দর্শনের ইতিহাসে মুতাজিলা ও আশারিয়া সম্প্রদায়ের উদ্ভব একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। মতাজিলারা বুদ্ধিবাদী। কেননা তারা বুদ্ধিকে বেশি গুরুত্ব দেন। অন্যদিকে আশারিয়ারা মনে করেন, বুদ্ধির সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আর সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলেই আমরা বুদ্ধির মাধ্যমে ধর্মতাত্ত্বিক সব ব্যাপার সমাধান করতে পারি না। তাই মুতাজিলা ও আশারিয়াদের মধ্যে মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
মুতাজিলা ও আশারিয়াদের মধ্যে পার্থক্য : মুতাজিলা ও আশারিয়াদের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে, যা নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. আল্লাহর গুণাবলি : মুতাজিলারা আল্লাহর গুণাবলির নিত্যতাকে স্বীকার করেন না। আল্লাহর গুণাবলির নিত্যতাকে স্বীকার করলে আল্লাহর একত্বে ধ্বংস সাধন এবং বহুত্ববাদের বিকাশ ঘটে। অন্যদিকে আশারিয়া আল্লাহর গুণাবলিতে বিশ্বাস করেন। তাদের মতে, আল্লাহ যথার্থই প্রকৃত গুণের অধিকারী।
২. মানুষের স্বাধীনতা : মুতাজিলারা ইচ্ছার স্বাধীনতাকে স্বীকার করে। তাদের মতে, মানুষ তার কার্যকলাপের নিয়ন্ত্রণকর্তা। তাই ভালোমন্দের জন্য মানুষ দায়ী। কিন্তু আশারিয়ারা ইচ্ছার স্বাধীনতাকে সীমিত স্বীকার করেন। আল্লাহ্ সকল শক্তির নিয়ন্ত্রণকর্তা। তিনি মানুষের মধ্যে ক্ষমতা জাগ্রত করে তার দ্বারা কাজ করিয়ে নেন।
৩. কুরআনের নিত্যতা : মুতাজিলারা কুরআনকে নিত্য বলে স্বীকার করেন না। তাদের মতে, এটি সৃষ্ট। অন্যদিকে আশারিয়ারা কুরআনকে সৃষ্ট বলতে নারাজ। তাদের মতে, কুরআনের অস্তিত্ব অনন্তকাল ধরেই ছিল।
৪. দিব্যদর্শন : মুতাজিলাদের মতে, আল্লাহ্ নিরাকার। তাই তার দিব্যদর্শন সম্ভব নয়। কিন্তু আশারিয়ারা দিব্যদর্শনে বিশ্বাসী। তাদের মতে, কেয়ামতে মুমিন বান্দাগণ দিব্য চক্ষু দ্বারা আল্লাহকে দেখবে।
৫. সৎ-অসৎ কর্ম : মুতাজিলারা মনে করেন, আল্লাহ মানুষকে সৎ কর্মের জন্য পুরস্কার।এবং অসৎ কর্মের জন্য শাস্তি দিবেন। কিন্তু আশারিয়াদের মতে, মানুষকে পুরস্কৃত করা বা শাস্তি দেয়া আল্লাহ্র ইচ্ছাধীন। কেননা তিনি কুরআনে তিনি যাকে ইচ্ছা শাক্তি দিতে পারেন, যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করতে পারেন। বলেছেন,
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মুতাজিলারা প্রধানত পাশ্চাত্য যুক্তিশাস্ত্র বা।গ্রিক লজিকের ভিত্তিতে তাদের।মতাদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। অন্যদিকে আশারিয়ারা কুরআন ও রাসূলের হাদিস হতে তাদের যুক্তি সংগ্রহের চেষ্টা।করেন। উভয় সম্প্রদায়ের যুক্তির দ্বন্দ্বে মুসলিম চিন্তার ইতিহাসে চিন্তার বিভিন্ন গতিধারার সৃষ্টি হয়।