স্বাধীনতা সম্পর্কে আশারিয়াদের মতবাদ উল্লেখ কর।

অথবা, আশারিয়ারা ইচ্ছার স্বাধীনতা সম্পর্কে কী বলেন?
অথবা, আশারিয়াদের মতে ইচ্ছার স্বাধীনতা কেমন?
অথবা, ইচ্ছার স্বাধীনতা আছে কিনা এ বিষয়ে আশারিয়াদের বক্তব্য কী?
অথবা, আশারিয়াদের মতে কি ইচ্ছার স্বাধীনতা আছে?
উত্তর৷ ভূমিকা :
আশারিয়ারা মুতাজিলাদের বুদ্ধিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ও ধর্মতাত্ত্বিক প্রভাব একেবারে ধ্বংস করে দিতে পারে নি। হাম্বলিও গতানুগতিক মতবাদ আপাত নিজস্ব হলেও ধর্মতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে যে উদ্যম তাও নিঃশেষ হয়ে যায় নি। শুধু তাই নয়, বরং আইনবিদ ও ভাষ্যকারদের অতিমাত্রায় রক্ষণশীলতা তার শক্তি হারিয়ে ফেলে এবং এর স্থলাভিষিক্ত হয় মৃদু রক্ষণশীলতা। আর এ মৃদু রক্ষণশীলতার প্রতিভূ হলেন আশারিয়া চিন্তাবিদগণ।
ইচ্ছার স্বাধীনতা সম্পর্কে আশারিয়াদের মত : ইচ্ছার স্বাধীনতা সম্পর্কে আশারিয়াদের মতবাদ নিয়ে আলোচনা করা হলো :
১. মধ্যপন্থা অবলম্বন : ইচ্ছার স্বাধীনতা আশারিয়া সম্প্রদায় কাদারিয়া ও মুতাজিলা সম্প্রদায়ের ইচ্ছার স্বাধীনতা সম্পর্কীয় মত এবং সনাতনপন্থি মুসলমানদের ও জাবারিয়া সম্প্রদায়ের অদৃষ্টবাদ এর মধ্যপন্থি মত পোষণ করেন। সনাতনপন্থি মুসলমানরা ও জাবারিয়ারা বিশুদ্ধ অদৃষ্টবাদী মত পোষণ করেন।
২. খালক ও কাসব এর মধ্যে পার্থক্যকরণ : আশারিয়া খালক বা সৃষ্টি এবং অর্জন বা কাসব এর মধ্যে পার্থক্য দেখান। তাদের মতে, মানুষের কর্মের স্রষ্টা আল্লাহ্ এবং মানুষ হচ্ছে অর্জনকারী বা মুকতাসিব। মানুষের শক্তি আল্লাহ্ কর্তৃত্ব প্রদত্ত এবং সে অনুসারে এটা অর্জিত বা কোন কিছুর মাধ্যমে প্রাপ্ত।
৩. নির্বাচন বা ইখতিয়ার : মানুষ কোন কিছু সৃষ্টি বা ধ্বংস করতে পারে না বলে আশারিয়ারা মনে করেন। তাদের মতে, সৃষ্টি একমাত্র আল্লাহই করতে পারে। তিনি কর্ম সম্পন্ন করার জন্য মানুষের মধ্যে শক্তি ও সামর্থ সৃষ্টি করেন। তিনি ভালো-মন্দের মধ্যে মুক্ত নির্বাচনের ইখতিয়ার মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করেন।ু
৪. অদৃষ্টবাদী মত পরিহার : আশারিয়াদের আল্লাহ্ কর্ম সৃষ্টি সম্পর্কিত মত দ্বারা মনে হতে পারে যে, তারা পরিণামে অদৃষ্টবাদী মতবাদে পৌছেছেন, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা নয়। তারা অদৃষ্টবাদকে পরিহার করে অর্জনবাদ প্রবর্তন করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আশারিয়ারা মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতা সম্পর্কে স্বীকৃতি দেন। তাদের মতে, মানুষ কাজকে সৃষ্টি করতে পারে না, আল্লাহ কাজকে সৃষ্টি করেন। ভালো-মন্দের মধ্যে ব্যক্তি কোন কাজটি করবে তা নির্ধারণের ক্ষমতা আল্লাহ্ মানুষকে দিয়েছেন। সুতরাং মানুষ তার কাজের জন্য নিজেই দায়ী।