আশারিয়াদের অবদানসমূহ আলোচনা কর।

অথবা, আশারিয়া সম্প্রদায়ের অবদানসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, আশারিয়াদের অবদানসমূহ বর্ণনা কর।
অথবা, আশারিয়া সম্প্রদায়ের অবদানসমূহ ব্যাখ্যা কর।
অথবা, আশারিয়া সম্প্রদায়ের অবদানসমূহের বিস্তারিত ধারণা দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা :
ইসলামের প্রাথমিক পর্যায়ে উদ্ভূত দলগুলোর একটি হলো আশারিয়া সম্প্রদায়। এ সম্প্রদায় ধর্মতাত্ত্বিক বিষয়ের সাথে সাথে দার্শনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করে ধর্মের বৌদ্ধিক ভিত্তি রচনা করার প্রয়াস পান। মুতাজিলা সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ এ সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে। এ সম্প্রদায় বুদ্ধি বা প্রজ্ঞার আলোচনাকে সন্তোষজনক বলে মনে করে। এ সম্প্রদায় ধর্মতত্ত্বের ব্যাখ্যা ও সমর্থনে কুরআন প্রয়োগ করে মুতাজিলা ও প্রতিক্রিয়াশীল দলের মধ্যে সমন্বয় সাধনের প্রচেষ্টা চালান।
আশারিয়া সম্প্রদায়ের অবদান : আশারিয়া সম্প্রদায়ের প্রধান অবদান তাদের মতবাদে। তাঁরা ধর্মতাত্ত্বিক বিষয়ের সাথে সাথে দার্শনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। যখন প্রচলিত মতবাদ ও মুতাজিলা মতবাদের পরস্পর বিরোধী ধারণা মুসলিম চিন্তাধারায় বিশৃঙ্খলা ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে প্রাচীন ধারণা ও প্রচলিত বিশ্বাসের মূলভিত্তিকে গভীরভাবে নাড়া তখন মধ্যপন্থি ও সহনশীল দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের মাধ্যমে সেগুলোর সমন্বয় সাধন ও সমস্যা সমাধানের প্রয়োজন অনভূত

য়। আর ইসলামি ভাবধারার এই ক্রান্তিলগ্নে এ মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা আবুল হাসান আল আশারিয় এগিয়ে আসেন। তার মতবাদ একদিকে বুদ্ধি বা প্রজ্ঞায় নিরিখে সন্তোষজনক অন্যদিকে কুরআন ও হাদিসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। দেন, আশারিয়া চিন্তাবিদগণ তাঁদের নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে আল্লাহর গুণাবলি, কুরআনের নিত্যতা, আল্লাহর দর্শন, ইচ্ছার।স্বাধীনতা, বস্তুর প্রকৃতি ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করেন। এক্ষেত্রে তারা প্রত্যাদেশের অধীনে বুদ্ধিকে গ্রহণ করে প্রচলিত বিশ্বাস ও মতের বিশুদ্ধতা রক্ষা করার প্রয়াস পান। তাদের মতে, শুধু বুদ্ধির সাহায্যে জগতের সবকিছুর ব্যাখ্যা দেয়া যায় না। এক্ষেত্রে প্রত্যাদেশের যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে। তাঁদের মতে, মুতাজিলারা প্রত্যাদেশের চেয়ে বুদ্ধিকে উচ্চতর অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করে ভুল করেছেন। দার্শনিক পদ্ধতি মুতাজিলাদের উচ্চতর সত্যের কাছাকাছি পৌছতে নিছক একটি স্তর মাত্র। মুতাজিলাদের এ মতবাদকে তাঁরা খণ্ডন করেন। তাঁদের মতে, কোন ধর্মতাত্ত্বিক সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানে বুদ্ধি বা প্রজ্ঞা ও প্রত্যাদেশের মধ্যে কোন বিরোধ বাধলে বুদ্ধিকে নয়, বরং প্রত্যাদেশকে সমর্থন করাই সঠিক পথ। আশারিয়া মতবাদ বিশেষভাবে শাফিই সমাজে গৃহীত হয় এবং তাঁর বহু সংখ্যক ছাত্র জুটিয়ে যায়। এদের মধ্যে হতে অনেক বিখ্যাত মুতাকাল্লিমের অভ্যুদয় ঘটে। তাঁরা আশারির আকাইদের সম্প্রসারণ ও বিস্তার সাধন করেন। এসব প্রাচীনতম আশারিয়া মতবাদীদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সুপরিচিত হলেন, আল বাকিল্লানী, ইবন ফুরাক, আল ইসকারাঈলী, আল কুশায়রী, আল জুওয়ায়নী ও বিশেষভাবে আল-গাযালী। আল বাকিল্লানীর ‘পরমাণুবাদ’ মুসলিম এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। আল গাযালী সুফিবাদের সাথে সমন্বয় সাধনের লক্ষ্যে আশারি পদ্ধতি ও মতের পরিমার্জন ও উৎকর্ষ সাধন করেন। পরবর্তী ফখরুদ্দিন আল রাজিও এর উৎকর্ষ সাধনে যথেষ্ট অবদান রাখেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, কোন ধর্মতাত্ত্বিক সম্প্রদায়ের মধ্যে সমস্যা দেখা দিলে তা সমাধানের জন্য।আশারিয়া বুদ্ধিকে নয়, প্রত্যাদেশের উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব আরোপ করা হয়। তারা বলেন, আল্লাহ্ পূণ্যবানদেরকে শাস্তি বা পুরস্কার যেকোন একটি দিতে পারেন। তারা কুরআনের আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন। “আল্লাহ যাকে ইচ্ছা মাফ করতে পারেন এবং যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করতে পারেন।” (সূরা ইমরান)। সুত

রাং মুসলিম দর্শনে আশারিয়াদের অবদান অনস্বীকার্য।