ব্র্যাক কী? ব্র্যাকের ঐতিহাসিক পটভূমি লিখ।

অথবা, ব্র্যাক বলতে কী বুঝ? ব্র্যাকের ঐতিহাসিক পটভূমি আলোচনা কর।
অথবা, ব্র্যাক কী? ব্র্যাকের ঐতিহাসিক বর্ণনা দাও।
উত্তর।৷ ভূমিকা :
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১১ অনুসারে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বেসরকারি ক্ষুদ্রঋণদানকারী সংস্থা হলো ব্র্যাক (BRAC)। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্র্যাক ক্ষুদ্রঋণ ও দারিদ্র বিমোচনমূলক কাজ করে।সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রেও ব্র্যাক কাজ করে। সামাজিকভাবে বঞ্চিত ও বিভিন্ন ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর মানুষ যেমন অতি দরিদ্র চরবাসী, দুঃস্থ নারী, অবসরপ্রাপ্ত ও ছাঁটাইকৃত সরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের এ প্রতিষ্ঠানটি ক্ষুদ্রঋণ ও প্রশিক্ষণ প্রদান করে।
ব্র্যাক (BRAC) : স্যার ফজলে হাসান আবেদ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের বৃহৎ ক্ষুদ্রঋণদানকারী এনজিও হলো ব্র্যাক। বর্তমানে এটি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বহির্বিশ্বেও বহুমুখী উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। বাংলাদেশের মানুষের উন্নয়নে এটি ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছে। ডিসেম্বর ২০১০ পর্যন্ত ব্র্যাক সর্বমোট ৫০,৪৪৬.৬৫ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে বিতরণ করে এবং ৪৬,০৮২.৫৮ কোটি টাকা আদায় করে। ব্র্যাকের বিতরণকৃত ঋণের সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৮০,৫৪,৪১৫ জন। সুবিধাভোগীর মধ্যে মহিলার সংখ্যা ৭৬,১৪,৩২৬ জন। ব্র্যাকের কর্মসূচি গোটা বিশ্বে প্রশংসিত।
ব্র্যাকের ঐতিহাসিক পটভূমি : ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা জনাব স্যার ফজলে হাসান আবেদ। ১৯৭০ সালে বাংলাদেশে এক প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় হয় । ঘূর্ণিঝড়ে লক্ষ লক্ষ লোকের প্রাণহানী ঘটে; কয়েক লক্ষ লোকের ঘরবাড়ি বিনষ্ট হয় এবং তারা সর্বস্ব হারায়। এ অবস্থায় কতিপয় বিদেশি সংস্থা ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্তদের জন্য ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মসূচি পরিচালনা করে।জনাব স্যার ফজলে হাসান আবেদ তখন দুর্গতের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে বিদেশি দাতা সংস্থার পক্ষে কাজ করেন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয় এবং লক্ষ লক্ষ লোক ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে। এসব আশ্রয় গ্রহণকারী বা শরণার্থীদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের লক্ষ্যে জনাব স্যার ফজলে হাসান আবেদ “Save Bangladesh” নামে একটি বেসরকারি সংগঠন গড়ে তোলেন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ শত্রুমুক্ত হলে, ক্ষতিগ্রস্ত লক্ষ লক্ষ মানুষের পুনর্বাসনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এ প্রেক্ষিতে ‘Save Bangladesh’ নামক সংগঠনের পক্ষে সংগৃহীত উদ্বৃত্ত অর্থ দিয়ে ১৯৭২ সালে সিলেটের শান্না গ্রামে “Bangladesh Rehabilitation Assistant Committee” নামক একটি
নতুন সংস্থা গড়ে তোলেন জনাব আবেদ। সময়ের পরিক্রমায় দেশের মানুষের অধিকতর কল্যাণের লক্ষ্যে সংস্থাটির কর্মপরিধি বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। এর অংশ হিসেবে ১৯৭৫ সালে জামালপুরের ৩০টি গ্রামের দরিদ্রদের জন্য কর্মসূচি গৃহীত হয় ৷ ১৯৭৬ সালে মানিকগঞ্জের ২৫০টি গ্রামের দরিদ্র মানুষের কল্যাণে সংস্থাটি সমন্বিত কর্মসূচি চালু করে।পরবর্তীতে ত্রাণ ও পুনর্বাসন ছাড়াও দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন ও কল্যাণ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ১৯৭৬ সালে পূর্বোক্ত সংস্থাটির নাম পরিবর্তন করে নতুনভাবে নামকরণ করা হয়, “Bangladesh Rural Advancement Committee.” সংক্ষেপে BRAC (ব্র্যাক)। বর্তমানে ব্র্যাক বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার ৪৮০টি উপজেলায় বহুমুখী কর্মসূচি পরিচালনা করছে।সংস্থাটির সোসাইটি নিবন্ধন আইন ১৮৬০ এবং The Foreign Donations (Voluntary Activities) Regulation Ordinance 1978 এর অধীনে নিবন্ধিত। উল্লেখ্য বর্তমানে BRAC শুধু পল্লি (Rural) জনগোষ্ঠীর নয় বরং দেশের আপামর জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করে যাচ্ছে। (শওকতুজ্জামান সৈয়দ : ২০০৪)
উপসংহার : উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, দারিদ্র্য বিমোচন, গ্রামীণ মানুষের ও নারীর ক্ষমতায়ন, বহুমুখী উন্নয়ন, জীবনধারার ইতিবাচক পরিবর্তন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, সম্পদের সুসম বণ্টন, সক্ষমতা অর্জন, মানুষের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ, কর্মসংস্থান ও আ য়ের সুযোগ সৃষ্টি, মানুষকে অধিকার সচেতন করে গড়ে তোলা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টির উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্র্যাক কাজ করে চলেছে। ব্র্যাকের সবচেয়ে বড় কাজ হলো দারিদ্র বিমোচনে মানুষকে সাহায্য করা।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a4%e0%a7%83%e0%a6%a4%e0%a7%80%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%ad%e0%a6%bf%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a8-%e0%a6%95/