ব্যবহারিক প্রশিক্ষণে প্রতিবেদন লেখার নিয়মাবলি বর্ণনা কর।

অথবা, ব্যবহারিক প্রশিক্ষণে প্রতিবেদন লেখার নিয়মাবলি ব্যাখ্যা কর।
অথবা, মাঠকর্ম প্রশিক্ষণে প্রতিবেদন লেখার নিয়মাবলিসমুহ বিশ্লেষণ কর।
অথবা, মাঠকর্ম প্রশিক্ষণে প্রতিবেদন লেখার নিয়মাবলি সমূহ আলোচনা কর।
উত্তর।। ভূমিকা : মাঠকর্ম অনুশীলনের চূড়ান্ত পর্যায় হলো প্রতিবেদন লিখন। শিক্ষার্থীরা ৬০ কর্ম দিবসের মাঠকর্ম শেষে তাদের কাজ বিশেষ করে কেসগুলোতে বিস্তারিতভাবে প্রতিবেদন উল্লেখ করে। প্রতিবেদন হতে হয় ব্যাপক ও বিস্তৃত। একে মাঠকর্মের মূল্যায়ন প্রতিবেদনও বলা হয়। প্রতিবেদন লেখার সময় সংস্থা ও শিক্ষার্থীর সমাজকর্ম বিভাগের লক্ষ্যের দিকে খেয়াল রাখতে হয়, যেন প্রতিবেদন থেকে তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারে।
ব্যবহারিক প্রশিক্ষণে প্রতিবেদন লেখার নিয়মাবলি : নিম্নে একটি সাধারণ মাঠকর্মের প্রতিবেদন লেখার নিয়ম তুলে ধরা হলো:
ক. শিক্ষার্থীরা যে সংস্থায় সংস্থাপিত হয়েছে এর নাম।
খ. শিক্ষার্থীর নাম।
গ. কলেজ তত্ত্বাবধায়ক ও মাঠকর্ম তত্ত্বাবধায়কের নাম।
ঘ. মাঠকর্ম প্রতিবেদনের মেয়াদ কাল।
১. প্রতিবেদনের মধ্যবর্তী অংশ (The inner part of the report) :
সংস্থার পটভূমি : i. মাঠকর্ম যে এলাকায় সম্পাদিত হয়েছে সে এলাকার নাম; ii. কখন কিভাবে শুরু হয়েছিল; iii.
সংস্থার প্রকৃতি; সংস্থাটি সরকারি বা বেসরকারি ব্যক্তি সমাজকর্ম বা দল সমাজকর্ম সংশ্লিষ্ট; iv. যেখানে কার্যক্রম সম্পাদিত হয়েছে সেখানকার অবস্থা; v. সংস্থার উদ্দেশ্য; vi. সংস্থার প্রশাসনিক কাঠামো।
২. সমষ্টির ক্ষেত্র : i. সমষ্টির ক্ষেত্র বর্ণনা করা, ক্ষেত্রগুলোর সামাজিক শ্রেণি, জনসংখ্যার কাঠামো, পুরুষ ও মহিলার অনুপাত, শিক্ষাগত ও সাংস্কৃতিক পটভূমি, সামাজিক শ্রেণি, ii. সমষ্টির সমস্যাসমূহ যেগুলোকে উৎসাহ হিসাবে আনা হয়েছে।
৩. যেসব ক্ষেত্রকে কেস হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে : i. সাহায্যার্থীর বর্ণনা, পটভূমি, সমস্যার প্রকৃতি প্রভৃতি, ii. ৩/৪ টি কোর্সের সারাংশ।
৪. শিক্ষার্থীদের দায়িত্বের প্রকৃতি : i. শিক্ষার্থীদের অর্জন ও ব্যর্থতা, (ii) কর্মসূচি মূল্যায়ন ও সংস্থার সেবা, (iii) সুপারিশ ও উপসংহার। এসব আলোচনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের আলোকে একটি মাঠকর্ম প্রতিবেদনের কাঠামো নিম্নে উপস্থাপন করা হলো :
১. কভার পৃষ্ঠা (Cover page) : মাঠকর্ম প্রতিবেদন মাত্রই কভার পৃষ্ঠা থাকা অত্যাবশ্যক। কভার পৃষ্ঠায় যা যা থাকবে তা হলো :
i. এজেন্সীর নাম, ii. এজেন্সীর ঠিকানা, iii. মোট কর্ম দিবস (৬০’ কর্ম দিবস), iv. মাঠকর্ম সম্পাদনের সময়সূচি (আরম্ভ ও সমাপ্ত) কভার পৃষ্ঠার মাঝখানে থাকবে দু’জন তত্ত্বাবধায়কের নাম ও পদবী। বামপাশে থাকবে বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক এবং ডানপাশে থাকবে প্রাতিষ্ঠানিক তত্ত্বাবধায়কের নাম ও পদবী। তত্ত্বাবধায়কের নিম্নে থাকবে উপস্থাপনকারীর (শিক্ষার্থী) নাম।
২. মুখবন্ধ (Preface) : প্রতিবেদনের দ্বিতীয় অংশ হলো মুখবন্ধ। মাঠকর্মের উপর সাধারণ আলোচনায় মুখবন্ধ করা হয়। প্রতিবেদক এখানে প্রতিবেদনে কী আছে তার উপর ধারণা দিয়ে থাকে। তবে এ অংশটি প্রতিবেদনের জন্য
বাধ্যতামূলক নয় । কিন্তু মুখবন্ধের মাধ্যমে প্রতিবেদনের সাধারণ চিত্র ফুটে উঠে।
৩. কৃতজ্ঞতা স্বীকার (Acknowledgement) : প্রতিবেদনের আর একটি অংশ হচ্ছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার।প্রতিবেদন তৈরিতে যে বা যারা সহযোগিতা করছে তাদের এর মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক ও প্রাতিষ্ঠানিক তত্ত্বাবধায়কসহ অন্যান্যদের প্রতি এখানে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। ছাত্র-ছাত্রী, বন্ধু-বান্ধব, সংস্থারকর্মী,প্রতিষ্ঠানের স্টাফ সর্বোপরি এ প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তাকারী সকলেরই এর মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।
৪. সূচিপত্র (Index) : মাঠকর্ম প্রতিবেদনে পরবর্তী অংশ হলো সূচিপত্র। সূচিপত্রে ধারাবাহিকভাবে অধ্যায় সাজানো থাকে। প্রতিটি অধ্যায়ের শিরোনাম ও পাশে পৃষ্ঠা নম্বর দেয়া থাকে।
৫. প্রতিবেদনের মূল অংশ (Main part of report) : প্রতিবেদনের মূল অংশ এর অনেক দূর জুড়ে বিস্তৃত থাকে। প্রতিবেদনের কয়েকটি অধ্যায় এ অংশ জুরে থাকে।প্রতিবেদনের মূল অংশের অধ্যায়গুলো প্রশ্ন অনুসারে উল্লেখ করা হলো :
অধ্যায়- ১. সমাজকর্মের পদ্ধতি ও সমাজকর্ম : এ অংশে সমাজকর্মের মৌলিক ধারণা তুলে ধরা হয়।

.সমাজকর্মের ধারণা, বৈশিষ্ট্য, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, বাংলাদেশে সমাজকর্মের ইতিহাস, সমাজকর্ম পদ্ধতির শ্রেণিবিভাগ।
অধ্যায়- ২. মাঠকর্ম অনুশীলন : এ অংশে মাঠকর্মের পরিচিতি তুলে ধরা হয়।

মাঠকর্ম অনুশীলন কী, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, বাংলাদেশে মাঠকর্ম অনুশীলনের গুরুত্ব :
অধ্যায়- ৩ : প্রতিষ্ঠান পরিচিতি : শিক্ষার্থী যেখানে মাঠকর্ম সম্পন্ন করে, সে সংস্থার ধারণা থাকে।

প্রতিষ্ঠানের ধারণা, পটভূমি, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, প্রশাসনিক কাঠামো, প্রতিষ্ঠানের মূল্যবোধ, নীতিমালা,কর্মসূচিসমূহ, তহবিল ও দাতাগোষ্ঠী।
অধ্যায়- ৪ : মাঠকর্মের মূল বিষয় : যে বিষয়ের উপর সংস্থায় মাঠকর্ম অনুশীলন করে এর বিবরণ থাকে।

দারিদ্র্য, ক্ষুদ্রঋণ ও বস্তি সম্পর্কিত ধারণা, এসব নিয়ে সমস্যা, এসব সমস্যা সমাধানে সংস্থার ভূমিকা।
অধ্যায়- ৫ : ব্যক্তি সমাজকর্ম ও কেস স্টাডি : এ অংশে ব্যক্তি সমাজকর্ম ও কেস স্টাডির ধারণা তুলে ধরা হয়।

ব্যক্তি সমাজকর্মের ধারণা, কেস স্টাডি কী? এর ধাপ, কৌশল, পেশাগত সম্পর্ক স্থাপন।
অধ্যায়- ৬ : কেস স্টাডি : এ অধ্যায়ে মোট ৬টি কেস স্টাডির স্বল্পমেয়াদি ৩টি এবং দীর্ঘমেয়াদি ৩টি বিবরণ তুলে ধরা হয়। এর মাধ্যমে সংস্থার লক্ষ্যভুক্তদের সম্পর্কে জানা যায়।
অধ্যায়- ৭ : মাঠ কর্ম অনুশীলন কার্যাবলি : এ অধ্যায়ে যে সব বিষয় সংযুক্ত থাকে সেগুলো হলো :

আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব (বিভাগ ও সংস্থা)

আমার দ্বারা সম্পাদিত কাজ, আমি যা শিখেছি, আমার সফলতা ও ব্যর্থতা, মাঠকর্ম অনুশীলনে আমি কী কী পদ্ধতি ব্যবহার করছি ইত্যাদি।
অধ্যায়- ৮: সীমাবদ্ধতা ও সুপারিশ : প্রতিবেদনের এ অংশে কর্মক্ষেত্রে কী কী সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে? তার উল্লেখ থাকে। এছাড়া এসব সীমাবদ্ধতা দূরীকরণের জন্য কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়? তার সুপারিশমালা থাকে। ৪৫
অধ্যায়- ৯ : গ্রন্থপুঞ্জি, এটি প্রতিবেদনের শেষ অংশ। এ অংশে প্রতিবেদন তৈরিতে কী কী গ্রন্থ ও ডকুমেন্টের সহায়তা নেয়া হয়েছে? তার তালিকা থাকে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার আলোকে বলা যায় মাঠকর্ম প্রতিবেদন লেখার নিয়মাবলি উপরে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। শিক্ষার্থীদের এজেন্সিতে সংস্থাপন করা, শিক্ষার্থীদের মাঠকর্মে অংশগ্রহণ, কেস স্টাডি করা,প্রতিবেদন লেখা এবং তা জানিয়ে দেয়ার মাধ্যমে মাঠকর্ম সম্পন্ন হয়। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সমাজকর্মের জ্ঞানকে বাস্তবে
প্রয়োগ করে এবং নিজেকে সমাজকর্মী হিসেবে দক্ষ করে তোলে।