অথবা, বিশ্বায়নের ফলাফল বর্ণনা কর।
অথবা, বিশ্বায়নের ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা, বিশ্বায়নের ফলাফল বিশ্লেষণ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বিশ্বব্যবস্থার অন্যতম ধারণা হলো বিশ্বায়ন (Globalization)। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বিশ্বায়নের এ ধারণা একবিংশ শতাব্দীর ধারণার সাথে অনেক ক্ষেত্রে ব্যবধান সৃষ্টি করেছে। দ্বিতীয় | বিশ্বযুদ্ধোত্তর বিশ্ব রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বিশ্বায়নের প্রয়োজনীয়তা অনেকে উপলব্ধি করেছিলেন। কিন্তু সমকালীন বিশ্বায়ন বিরোধী জোট খুব তৎপর থাকায় তা তেমন ব্যাপকতা লাভ করতে পারেনি। ১৯৯০ এর দশকে এসে বিশ্বায়ন বিরোধী জোট তাসের ঘরের মত ভেঙে গেলে বিশ্বায়নের প্রবক্তাদের তেজ বেড়ে যায়। যার ফলশ্রুতিতে আজ বিশ্বায়নের এ বিস্তৃতি বা ব্যাপকতা লাভ।
বিশ্বায়নের ফলাফল : বিশ্বায়ন ধারণা বর্তমানে বহুল প্রচলিত ধারণা। বিশ্বায়নের প্রভাব বর্তমানে পড়েছে গোটা | বিশ্বের শাসনব্যবস্থায় । নিম্নে বিশ্বায়নের ফলাফল ব্যাখ্যা করা হলো :
১. মুক্তবাজার অর্থনীতির বিকাশ : বিশ্বায়নের ধারণার সাথে মুক্তবাজার অর্থনীতির সম্পর্ক অনেকটা সুদূরপ্রসারী। | মুক্তবাজার অর্থনীতির ফলে সারা বিশ্বের বাজার ব্যবস্থা এখন সকলের কাছে উন্মুক্ত হয়েছে। এ প্রতিযোগিতায় যার পণ্যের | মান ভালো সে টিকে থাকছে আর অন্যরা ছিটকে পড়ছে। আর বিশ্বের বাজার অর্থনীতির এ অবস্থার জন্য লক্ষণীয় বিষয় হলো বিশ্বায়ন ।
২. সাম্রাজ্যবাদীদের শক্তি বৃদ্ধি : বিশ্বায়নের কারণে বিশ্বের প্রতিনিধিত্ব এখন সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে। তারা গোটা | বিশ্বকে নিজের আয়ত্তে আনতে সক্ষম হয়েছে। তারা নিজ স্বার্থে অসাধ্যকেও জয় করতে তোয়াক্কা করছেন না। তবে এর ফলে সমাজব্যবস্থার পরিবর্তন বিপরীতমুখী হতে যাচ্ছে। কারণ, বিশ্ব এখন সাম্রাজ্যবাদীদের হাতের মুঠোয়। তারা নিজ স্বার্থে প্রয়োজনমত তা ব্যবহার করছে।
৩. শিল্প ক্ষেত্রে পরিবর্তন : বিশ্বায়নের বর্তমান অবস্থা লগ্নের শিল্পায়ন প্রক্রিয়া আর কয়েক দশক আগের শিল্পায়ন | প্রক্রিয়ার দিকে লক্ষ করলে বিশ্বায়ন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়। বিশ্বায়নের ক্ষেত্রে গোটা বিশ্বের শিল্প ক্ষেত্রে অবাধ প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে যার শিল্প যত উন্নত সে তত উন্নতি সাধন করতে পারছে। অন্যরা ছিটকে পড়ে যাচ্ছে।
৪. কৃষি ক্ষেত্রে পরিবর্তন : বিশ্বায়নের ফলে শিল্প ক্ষেত্র ছাড়া কৃষি ক্ষেত্রেও পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। কারণ, সারা বিশ্বের কৃষির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণাদি এখন সকলের নাগালের কাছে। তবে এক্ষেত্রে ধনতান্ত্রিক দেশগুলো তুলনামূলক বেশিদূর অগ্রসর হচ্ছে।
৫. বিশ্ব যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি : বিশ্বায়নের ফলে বিশ্ব যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। আমরা এখন তথ্য প্রযুক্তি প্রয়োগ করে বিশ্ব যোগাযোগ ব্যবস্থা যা দুরতিগম্য ছিল তা প্রয়োজন মত ব্যবহার করতে পারছি। ফলে সে ক্ষেত্রে অতীতের যোগাযোগ ব্যবস্থার চেয়ে বর্তমান একবিংশ শতকের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ক্ষেত্রে
মিল অনেকাংশে খুঁজে পাওয়া যায় না।
৬. তথ্য প্রযুক্তির উন্নতি : তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের বিরাট প্রভাব রয়েছে। কারণ, অবাধ তথ্য প্রযুক্তির বিকাশের ফলে যে দেশ যত প্রযুক্তির দিকে অগ্রগামী তারা তত উন্নয়ন করতে সক্ষম হচ্ছেন। তবে এতে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে পিছনে পড়ে থাকছে উন্নয়নশীল দেশগুলো।
৭. সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বৃদ্ধি : বিশ্বায়নের ফলে যদিও অনেকটা সুবিধা হয়েছে তবে বিরূপ প্রভাব যে পড়েনি তা নয়। তথ্য প্রযুক্তির বিকাশের ফলে এখন সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের মাত্রাও বেড়ে গেছে। ফলে গোটা বিশ্
ব সন্ত্রাসের মোকাবিলার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছে।
৮. বিশ্বায়ন বিরোধীদের আন্দোলনের মাত্রা বৃদ্ধি : বিশ্বায়ন একবিংশ শতাব্দীর জন্য আশীর্বাদ হলেও বিশ্বের সাম্যবাদীদের কাছে এর গ্রহণযোগ্যতা নেই। তাই বিশ্বের সাম্যবাদী মানুষগুলো বিশ্বায়নের ধারণার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হচ্ছে। কিন্তু তারা এ সাম্রাজ্যবাদীদের আগ্রাসী নীতির সাথে তেমন তাল মিলিয়ে চলতে পারছেন না।
উপসংহার : অতএব, বিশ্বায়ন হলো বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের যুগের একটি প্রচলিত ও গ্রহণযোগ্য ধারণা। বিশ্বায়নের সুবিধা প্রয়োগ করে উন্নত দেশগুলো নিজেদের অবস্থানকে আরো শক্ত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। তবে বিশ্বায়নের এ সুফল থেকে উন্নয়নশীল দেশের শান্তিকামী মানুষ তেমন উপকৃত হতে পারছে না। কারণ, তাদের পুঁজি খুব কম এবং উৎপাদিত পণ্য মানগত দিক থেকে অনুন্নত। তবে তুলনামূলক বিচারে বিশ্বায়ন আধুনিক সমাজে গ্রহণযোগ্য।