আধুনিকীকরণ তত্ত্বের পটভূমি আলোচনা কর।

অথবা, আধুনিকীকরণ তত্ত্বের পটভূমির বিবরণ দাও।
অথবা, আধুনিকীকরণ তত্ত্বের উদ্ভবের পূর্ব ইতিহাস বর্ণনা কর।
অথবা, কোন প্রেক্ষাপটে আধুনিকীকরণ তত্ত্বের উদ্ভব হয়েছে? আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
আধুনিকীকরণ তত্ত্বটি উন্নয়নমূলক সমাজবিজ্ঞানে পঞ্চাশ দশকের মাঝামাঝি সময়ে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছে। এ তত্ত্ব একটা মূল্যবোধ সমন্বিত তত্ত্ব। নির্ভরশীলতার ভিত্তি হিসেবে যে তত্ত্ব উন্নয়নমূলক সমাজবিজ্ঞানে পরিচিতি লাভ করে তাকে আধুনিকীকরণ তত্ত্ব বলে। আধুনিকীকরণ আধুনিক ব্যবস্থাসমূহের মাধ্যমে অর্জিত পরিবর্তনকে বুঝায় ।
আধুনিকীকরণের পটভূমি : উন্নয়ন প্রক্রিয়া একটি বিতর্কিত বিষয়। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো একটা সহজ, আপাত মধুর আকর্ষণে কিছুটা উদ্বেলিত হয়ে অতি শিল্পায়ন করছে। আদি থেকে নগর জীবন যেমন বিকশিত হয়েছে। দেখা যায় সভ্যতা নগর সভ্যতার বিকাশে উচ্চ পর্যায়ে গিয়েছে। আমরা আধুনিককালে দেখেছি নগরী বিকশিত হচ্ছে তার সাথে সাথে এর একটি ভূমিকা থাকে। এখানে এর বিস্তৃতি অনেক তাই এর পরিধি বিকশিত হচ্ছে। নগরীর মধ্যে পশ্চাৎ ভূমি শোষণের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। শিল্প আধুনিক সভ্যতার বৈশিষ্ট্য। শিল্পের বিকাশকে আধুনিকতা প্রাধান্য দিয়েছে। তৃতীয় বিশ্বে উন্নয়নের মূল লক্ষ্য শিল্পের উন্নয়ন। এভাবে নগরায়ণ ও শিল্পায়ন জড়িত। এ শিল্পায়ন ও নগরায়ণ প্রাচীন ও মধ্যযুগের মাত্রা কখনোই আধুনিক যুগের হতে পারে না। প্রাচীন ও বর্তমানের শিল্পের পার্থক্য হলো আধুনিকতার পার্থক্য। গণচীন পঞ্চাশ দশকে বিভিন্ন ক্ষুদ্র শিল্পকে কেন্দ্র করে ব্যাপক রপ্তানিযোগ্য পণ্য তৈরি করে। এখানে তারা একটা ঘরোয়া বিষয়কে ব্যাপক করে তুলেছে এবং উন্নয়নের দিকে নিয়েছে। জনশক্তিকে শিল্পে ব্যবহৃত করেছে। চীনের ঘটনাবল ইতিহাসের পাতায় বিধৃত আছে। সত্তরদশকে চীন সরাসরিভাবে আধুনিকায়ন প্রত্যয়টি ব্যবহার করছে। তাদের ধারণা, আধুনিক কলাকৌশল ব্যবহার ব্যতীত কোনো দেশ উন্নত হতে পারে না। আধুনিকায়ন বিষয়টি চীন যেভাবে গ্রহণ করেছে সেটা তেমন আকর্ষিত নয়।
আধুনিকায়ন বনাম মার্ক্সবাদ : মার্কসীয় সূত্র আধুনিকায়নকে স্বীকার করেনি। Tony Barnet তাঁর “Sociology and Development’ বই এ তুলে ধরেছেন Durkheim ও Max Weber এর যে সমাজবিজ্ঞান এটা একটা আধুনিক প্রত্যয় সৃষ্টি করছে। আধুনিক যুগে দুইটি সমাজ পাশাপাশি রয়েছে। যথা : bimano

  1. আধুনিক,
    ii. গতানুগতিক।
    আধুনিকায়ন তত্ত্বের বিশেষ দিক যখন পাশ্চাত্য জগতের সমাজবিজ্ঞানীরা উপলব্ধি করেন তখন তারা উন্নয়নের দিকে যারা যাচ্ছে তাদের মধ্যে মার্কস এর প্রভাব রয়েছে। এক্ষেত্রে উভয় পক্ষই তাদের কলাকৌশল পরিবর্তন করছে। এক সময় জ্ঞানী ব্যক্তি বলে যারা পরিচিত ছিল তারা দেখল উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় উন্নয়ন করা যাচ্ছে না তখন তারা বুঝে যাচ্ছে মার্কসবাদে সেখানে ধনী দরিদ্রদের সমস্যা সমাধান করেন। আবার যারা উন্নয়নের ক্ষেত্রে মার্কসবাদকে গ্রহণ করে তারা পরবর্তীতে আরাম-আয়েশে থাকার জন্য পাশ্চাত্য সমাজের ধারাকে অনুসরণ করে।
    আধুনিকায়নের বিচার বিশ্লেষণ : Auguste Comte, Durkheim, Max Weber, Tonny Barnet ইত্যাদি অনেকে অনেকভাবে সমাজকে ভাগ করেছেন। এ দ্বি-বিভাজন তত্ত্ব সমাজবিজ্ঞানে বহুভাবে প্রচলিত ছিল। গতানুগতিক ও আধুনিকতার পার্থক্য কোথায় তা কতকগুলো চরিত্রগত বৈশিষ্ট্যের দ্বারা বুঝা যায়। যথা :
    i. Value dominent
    ii. Kinship
    iii. Emotional ties
    iv. Fatalism & Superstition
    i. Value dominent : সমুদ্রে যাত্রা করলে তাকে প্রায়শ্চিত্ত করতে হতো। এটা মূলত Family থেকে এসেছে।
    ii. Kinship : Family থেকে Kinship টা এসেছে। অনেকটা গোত্রজীবন থেকে Kinship টা আসে। Kinship Pattern টা অধিকাংশ অনুন্নত দেশে গুরুত্ব পায়।
    iii. Emotional ties: গতানুগতিক জীবনধারার মধ্যে আবেগের ব্যাপার আছে। আবেগের জন্য অনেকে উগ্র হয়। বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ায় যা ঘটছে তা আবেগের ব্যাপার। এ আবেগ তাদের উন্নয়নকে ব্যাহত করেনি বরং বহু দূরে নিয়ে গেছে।
    iv. Fatalism & Superstition : এটা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে দেখা যায়। এটা সমাজবিজ্ঞানে ইদানিং আবিষ্কৃত হয়েছে । প্রতি দশ বছর অন্তর একটা পরিবর্তন আসবে।
    গতানুগতিক জীবনের চিত্রকে সমাজবিজ্ঞানীরা গুরুত্ব সহকারে বিচার করে আধুনিকায়ন অভিহিত করেন। Persons তিনি বলেন, সমাজবিজ্ঞানের নতুন দিগন্ত আবিষ্কার করেছেন বলে দাবি করেছেন। যা নাকি আগে কখনোই ঘটেনি তা Modern System এ ঘটেছে। হেগেল এর মতে উন্নয়ন সমাজবিজ্ঞানী আধুনিক ও গতানুগতিক জীবনের পার্থক্যকে বুঝিয়েছেন level of innovation এর মাধ্যমে। এটা আধুনিক সভ্যতার প্রধান দিক। যা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জন্য অনুকরণযোগ্য। অধ্যাপক Rostow এর মতে, আধুনিকায়ন ব্যাপারটি পর্যায়ক্রমিক ব্যাপার। তিনি Non Communist Menifesto তে দেখিয়েছেন Society দুই ভাগে বিভক্ত। যথা :
    i. Traditional Society,
    ii. Modern Society.
    এছাড়া দেখিয়েছেন সমাজের উন্নয়ন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাঁচটি স্তর অতিক্রম করে সাধিত হয়। যথা :
    i. traditional Society.
    ii. The pre-conditions for take off.
    iii.The take off.
    iv. The drive to maturity.
    v.The age of high mass consumption.
    উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে পরিশেষে বলা যায় যে, আধুনিকায়ন তাত্ত্বিকেরা সবকিছুর মধ্যে
    আধুনিক উপাদানকে উপস্থাপন করেছে। আধুনিকায়ন বলতে সাম্প্রতিককালে যে বিষয়টির উল্লেখ করেছে তা হলো আধুনিকায়ন বিষয়টি জিজ্ঞাসার চিহ্ন না দিয়ে প্রশ্নবোধক চিহ্ন দিয়েছে।