বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী কল্যাণের গুরুত্ব বর্ণনা কর।

অথবা, বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী কল্যাণের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর।
অথবা, বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী কল্যাণের তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।
উত্তর।৷ ভূমিকা:
বিশ্বের মোট জনসংখ্যার শতকরা ১০ ভাগ প্রতিবন্ধী। বর্তমানে বাংলাদেশেও মোট জনসংখ্যার শতকরা ১০ ভাগ প্রতিবন্ধী রয়েছে বলে বিভিন্ন পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়।পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০০৪ সাল নাগাদ এদেশের প্রতিবন্ধীর সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৬০ লক্ষে যা ২০০৭ সালে ৭০ লক্ষে দাঁড়িয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।বর্তমান গোটা বিশ্বে মোট প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ৭০ মিলিয়নের কাছাকাছি। এসব প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে বহুমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করা দরকার।
বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী কল্যাণের গুরুত্ব : বাংলাদেশের ১০% লোক প্রতিবন্ধী। এসব প্রতিবন্ধীদের কল্যাণ করার যথেষ্ট প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। নিম্নে এসব প্রয়োজনীয়তা সংক্ষেপে উত্থাপিত হলো :
১. মূলধারা জনগোষ্ঠীর সাথে সম্পৃক্তকরণ : প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে দলের মূলধারার জনগোষ্ঠীর সাথে সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী কল্যাণের গুরুত্ব রয়েছে।
২. দেশের সামগ্রিক কল্যাণ : দেশের ১ কোটি ১৫ লক্ষ প্রতিবন্ধীর কল্যাণ ব্যতীত দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।তাই দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রতিবন্ধী কল্যাণের গুরুত্ব রয়েছে।
৩. মানুষ হিসেবে সমাজে টিকে থাকা : প্রতিবন্ধীরাও মানুষ। তাদেরও মানুষ হিসেবে যথাযথ সম্মান সহকারে সমাজে টিকে থাকার অধিকার রয়েছে আর মানুষ হিসেবে সমাজে তাদের টিকে থাকার জন্য প্রতিবন্ধী কল্যাণের অপরিহার্যতা রয়েছে।
৪. মানবসম্পদে পরিণত করা : প্রতিবন্ধীরা সমাজের বা পরিবারের বোঝা হলে তা পরিবার বা সমাজের উন্নয়ন এমনকি রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের পথেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। তাই তাদেরকে যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানবসম্পদে পরিণত করার মাধ্যমে সমাজ, পরিবার ও রাষ্ট্রীয় কল্যাণের জন্য প্রতিবন্ধী কল্যাণের গুরুত্ব রয়েছে।
৫. আত্মনির্ভরশীলতা : প্রতিবন্ধীদেরকে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে তাদের আত্মনির্ভরশীল ও কর্ম জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রতিবন্ধী কল্যাণ/ প্রতিবন্ধী পুনবার্সনের গুরুত্ব রয়েছে।
৬. ভিক্ষাবৃত্তি রোধ : অনেক প্রতিবন্ধী ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবনধারণ করে। এই ভিক্ষাবৃত্তি রোধ করে প্রতিবন্ধীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য প্রতিবন্ধী কার্যক্রমের গুরুত্ব অপরিসীম।
৭. প্রতিভার বিকাশ : প্রতিবন্ধীরাও মানুষ। এই প্রতিবন্ধী মানুষগুলোকে বিশেষ ধরনের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে
তাদের প্রতিভার বিকাশ ঘটানো যায়।
৮. করুণা থেকে রক্ষা করা : অধিকাংশ প্রতিবন্ধী অন্যের করুণা নিয়ে জীবনধারণ করে। এটা তাদের জীবনের জন্য এক প্রকার অভিশাপ।এই অভিশাপ থেকে তাদেরকে রক্ষার জন্য প্রতিবন্ধী প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনের গুরুত্ব রয়েছে।
৯. সমাজের কল্যাণ : প্রতিবন্ধীদের কল্যাণের মাধ্যমে সমাজের কল্যাণ সাধিত হয়। প্রতিবন্ধীদের বাদ দিয়ে সমাজের সার্বিক কল্যাণসাধন সম্ভব হয়।
১০. উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্তকরণ : দেশের প্রতিবন্ধীদেরকে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত করে তাদের নিজেদের, পরিবারের ও সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধী কল্যাণের গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, আমাদের দেশে প্রতিবন্ধীদের সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা,তাদের প্রতিভার বিকাশ ও তাদেরকে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী কল্যাণের গুরুত্ব রয়েছে।প্রতিবন্ধীরা যথাযথ সুযোগ পেলে তারাও সমাজে অবদান রাখতে পারে। টমাস মিল্টন, এডিসন, হেলেন কেলার প্রতিবন্ধী হলেও সমাজে তাদের অবদান ছিল অনস্বীকার্য। তাই প্রতিবন্ধীদেরকে সেই অবদান রাখার সুযোগ প্রদান ও তাদেরকে
আত্মনির্ভরশীল হয়ে গড়ে তোলার জন্য প্রতিবন্ধী কল্যাণের গুরুত্ব রয়েছে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a4%e0%a7%83%e0%a6%a4%e0%a7%80%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%ad%e0%a6%bf%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a8-%e0%a6%95/