মনোচিকিৎসা সমাজকর্মীর ভূমিকা বর্ণনা কর।

অথবা, মনোচিকিৎসা সমাজকর্মীর অবদানসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, সাইকিয়াট্রিক সমাজকর্মীর ভূমিকাসমূহ ব্যাখ্যা কর। সাইকিয়াট্রিক সমাজকর্মীর অবদানগুলো কি কি? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর।৷ ভূমিকা :
সমাজকর্মকে বাস্তবে প্রয়োগ করার জন্য সাইকিয়াট্রিক সমাজকর্মীর ভূমিকা অত্যাবশ্যক।কেননা সাইকিয়াট্রিক সমাজকর্মী সমাজকর্মের জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে মানসিক সমস্যাগ্রস্তকে সুস্থ করে তুলতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। বংশগতি সমস্যা, গর্ভকালীন বা প্রসবকালীন জটিলতা, দাম্পত্য বিরোধ, পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা, মাদকাসক্তি প্রভৃতি কারণে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে চলেছে। এ অবস্থায় মনোচিকিৎসা সমাজকর্মীর অপরিহার্যতা অনস্বীকার্য।
মনোচিকিৎসা সমাজকর্মীর ভূমিকা
নিম্নে সাইকিয়াট্রিক সমাজকর্মীর ভূমিকা আলোচনা করা হলো:
১. মানসিক সুস্থতা : মানসিক সমস্যা ব্যক্তির আর্থসামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতেই মূলত সৃষ্টি হয়। সাইকিয়াট্রিক সমাজকর্মী মানসিক অসুস্থ সাহায্যার্থীকে কাউন্সেলিং ও সমাজকর্ম পদ্ধতি প্রয়োগ করে সুস্থ করতে বদ্ধপরিকর।
২. সামাজিক ভূমিকা পালন : মনোচিকিৎসা সমাজকর্মীর অন্যতম কাজ হলো মানসিক দিক থেকে বিপর্যস্ত ব্যক্তিকে সামাজিক ভূমিকা পালনে সক্ষম করে তোলা। এ ক্ষেত্রে তিনি চিকিৎসক ও মনোচিকিৎসককে সর্বতোভাবে সহায়তা করেন।
৩. সমস্যার প্রকৃত কারণ উদঘাটন : মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ব্যক্তির প্রকৃত কারণ উদঘাটন করতে না পাবলে সাহায্যার্থীকে সমস্যা মুক্ত করা সম্ভব নয়। এ অবস্থায় সাইকিয়াট্রিক সমাজকর্মী মানসিক সমস্যাগ্রস্তকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য ব্যক্তির সমস্যার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনের প্রচেষ্টা চালায়।
৪. ব্যক্তিগত, দলগত ও পারিবারিক সেবা প্রদান : মনোচিকিৎসা সমাজকর্মী সাহায্যার্থীকে মানসিক সমস্যা থেকে মুক্ত করার জন্য শুধু ব্যক্তিকেই সেবা দান করে না, পাশাপাশি প্রয়োজনে দলগত ও পারিবারিক সেবা প্রদান ও করে থাকে।কেননা মানসিক সমস্যার পেছনে দল বা পরিবার জড়িত থাকতে পারে।
৫. সাহায্যার্থীকে সেবা কেন্দ্রে প্রেরণ : মানসিক রোগীকে হাসপাতাল পরিবেশে চিকিৎসা দিতে হবে। এজন্য সাহায্যার্থীকে সেবা কেন্দ্রে পাঠানো অতি জরুরি। সাইকিয়াট্রিক সমাজকর্মী তাই প্রথমেই সাহায্যার্থীকে হাসপাতাল সেবা কেন্দ্রে প্রেরণের ব্যবস্থা করেন।
৬. পরামর্শ প্রদান : সমাজকর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়া হলো সাহায্যার্থীকে পরামর্শ প্রদান বা কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা করা। কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে সাহায্যার্থীর মানসিক দিক চাঙ্গা হয় এবং ব্যক্তি সক্ষম হয়ে উঠে।
৭. মনোচিকিৎসককে সহায়তা : মানসিক সমস্যাগ্রস্তদের সুস্থতার জন্য সাইকিয়াট্রিক সমাজকর্মীরা সাধারণত চিকিৎসক ও মনোচিকিৎসককে সহায়তা করে থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে সরাসরি হস্তক্ষেপ করলেও বেশিরভাগই সহায়কের ভূমিকা পালন করেন।
৮. সমর্থনমূলক সাহায্য প্রদান : মানসিক সমস্যা সমাধানে মনোচিকিৎসা সমাজকর্মীর আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ কাজ হলো সমর্থনমূলক সাহায্য প্রদান করা। সাহায্যার্থীকে সক্ষম করে তোলার জন্য ব্যক্তির পক্ষে সমাজকর্মী সবকিছুই সমর্থন দিয়ে থাকে।
৯. থেরাপি প্রদান : সাহায্যার্থীর সামাজিক সমস্যার পিছনে পরিবার দল বা অন্যান্য সংস্থা জড়িত থাকতে পারে।তাই সাইকিয়াট্রিক সমাজকর্মী পারিবারিক ও দলীয় থেরাপির ব্যবস্থা করেন।
১০. সাহায্যার্থীর আচরণ ও সম্পর্কের উন্নয়ন : মানসিক অসুস্থদের সমস্যার পেছনে তাদের আচরণগত ও সম্পর্কের বিচ্ছিন্নতাই মূলত দায়ী।সাইকিয়াট্রিক সমাজকর্মী এক্ষেত্রে সাহায্যার্থীর আচরণ ও সম্পর্কের উন্নয়ণ ঘটাতে তৎপ রতা চালায়।
১১. পেশাগত সম্পর্কের উন্নয়ন : মনোচিকিৎসা সমাজকর্মীর নিকট পেশাগত সম্পর্ক (Rapport) খুবই গুরুত্বপূর্ণ।এর উপর ভিত্তি করে সাহায্যার্থীর সমস্যা সমাধান অনেকাংশেই নির্ভর করে।তাই সাইকিয়াট্রিক সমাজকর্মীর অন্যতম কাজ হলো পেশাগত সম্পর্ক স্থাপন করা।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, দিন দিন যে হারে মানসিক সমস্যা বাড়ছে তাতে সাইকিয়াট্রিক সমাজকর্মীর গুরুত্বও বেড়ে চলেছে। তাই মনোচিকিৎসা সমাজকর্মী সমাজকর্মের জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে মানসিক সমস্যাগ্রস্তদের সুস্থ করে তুলতে বদ্ধপরিকর।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a4%e0%a7%83%e0%a6%a4%e0%a7%80%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%ad%e0%a6%bf%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a8-%e0%a6%95/