বাংলাদেশে দারিদ্র্যের স্বরূপ কী?

অথবা, বাংলাদেশে দারিদ্র্যের প্রকৃতি আলোচনা কর।
অথবা, বাংলাদেশে দারিদ্র্যের প্রকৃতি সম্পর্কে সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
অথবা, বাংলাদেশে কী প্রকৃতির দারিদ্র্য বিদ্যমান?
উত্তর৷ ভূমিকা :
যদিও পঞ্চাশের দশক থেকে আমাদের দেশে পরিকল্পিত উন্নয়ন শুরু হয়েছিল, কিন্তু সমাজের অবহেলিত ও দুর্বল শ্রেণি এ উন্নয়নের সুফল থেকে বঞ্চিত রয়েছে এবং যত দিন যাচ্ছে ধনী ও গরিবের মধ্যকার এ ব্যবধান ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই সমসাময়িককালে দরিদ্রতা একটি বহুল আলোচিত বিষয় হয়ে গেছে, যা মানবতার প্রতি একটি বড় অভিশাপ। আধুনিক মানবসভ্যতার বিকাশে দরিদ্রতা একটি মারাত্মক অন্তরায়। অনুন্নত ও তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশসমূহের বিশেষ করে বাংলাদেশের অনুন্নয়নের অন্যতম কারণ হলো দরিদ্রতা। দারিদ্র্যের সারিতে স্থান পাওয়া ১৩৪ দেশের একটি হচ্ছে বাংলাদেশ। বর্তমান বিশ্বে ‘দারিদ্র্য বিমোচন’ (Poverty Alleviation) একটি সামাজিক আন্দোলনে রূপ নিয়েছে।
দারিদ্র্যের স্বরূপ (বর্তমান) : বর্তমানে পৃথিবীতে এমন লোক রয়েছেন যারা ১ ডলারের কম আয় করেন, তাদের মোট সংখ্যা হচ্ছে প্রায় ১২৮ কোটি। তাদের মধ্যে ৭২ শতাংশ বাস করে এশিয়াতে আবার এশিয়ার ৯৫ কোটি
দরিদ্র মানুষের ৫৩ শতাংশ (৫০ কোটি) লোক বাস করে দক্ষিণ এশিয়াতে। আর বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক বা তার চেয়ে বেশি হচ্ছে এ ধরনের দরিদ্র জনগণ। এদের পরিচয় হচ্ছে এরা মূলত আয়বঞ্চিত, সম্পদবঞ্চিত, শিক্ষাবঞ্চিত, সামাজিক নিরাপত্তাবঞ্চিত, রাজনৈতিক ক্ষমতাবঞ্চিত জনগণ। এরাই অসম আর্থসামাজিক প্রতিযোগিতায় পরাজিত হয়ে ক্রমশ মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত, নিম্নবিত্ত থেকে দরিদ্র এবং দরিদ্র থেকে চরম দরিদ্রে পরিণত হচ্ছেন। যে সমাজে ৫ থেকে ৬ কোটি লোক দরিদ্র, যেখানে সবকিছুই যে ক্রমশ ভেঙে পড়বে তা বুঝতে অর্থনীতি পড়ার প্রয়োজন হয় না। সদ্য প্রকাশিত খসড়া দলিলে, “Bangladesh: A National study for growth & poverty reduction.” বলা হয় । বাংলাদেশের নিম্নোক্ত সাফল্য ও ব্যর্থতাগুলো জনগণ কর্তৃক চিহ্নিত হয়ে উঠে আসছে। যেমন- সাফল্যসমূহ :
১. বাংলাদেশের চরম আয় ও খাদ্য বঞ্চনার পরিস্থিতির উন্নতি,
২.দরিদ্রের জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের সুযোগের প্রসার,
৩. গ্রামাঞ্চলে মজুরি শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি,
৪.অপ্রাতিষ্ঠানিক মহাজনী ব্যবসায় হ্রাস,
৫.বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিট্যান্স বৃদ্ধি ইত্যাদি
ব্যর্থতাসমূহ :
১.আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি,
২. বিশেষভাবে দুর্বল ও দরিদ্রদের নিরাপত্তাহীনতা বৃদ্ধি,
৩.প্রশাসন বিশেষ করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের জবাবদিহিতার অভাব,
৪. দরিদ্র মানুষের অসংগঠিত এবং তাদের অধিকার সচেতনতার অভাব,
৫. শিক্ষাক্ষেত্রে দ্বৈততা ও বৈষম্য,
৬. শহর ও গ্রামের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বৈষম্য,
৭. রাজনীতিতে দ্বন্দ্বমূলক মেরুকরণ,
৮. নীতি প্রণয়নে দরিদ্র জনগণের অংশগ্রহণের অভাব, ইত্যাদি।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে অন্যতম দরিদ্র দেশ। মাথাপিছু সর্বনিম্ন আয়ের পঁচিশটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। আর মোট দারিদ্র্যের সিংহভাগই গ্রামীণ জনগণ। সুতরাং
দারিদ্র্যের স্বরূপ বা প্রকৃতি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত প্রকট।