অথবা, বাংলাদেশে কিশোর অপরাধ সংশোধনের জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা উল্লেখ কর।
অথবা, বাংলাদেশে কিশোর অপরাধ সংশোধনের জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার সুপারিশসমূহ বর্ণনা কর।
অথবা, কিশোর অপরাধ সংশোধনে কী কী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় তোমার সুপারিশ তুলে ধর।
উত্তর৷ ভূমিকা : কিশোর অপরাধ মূলত শিল্পবিপ্লবোত্তর মানবসমাজের একটি ভয়ানক সামাজিক ব্যাধি ও সমস্যা। কিশোর অপরাধ মূলত প্রচলিত সমাজব্যবস্থা এবং সমাজে বিদ্যমান বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে সৃষ্ট। কিশোর কর্তৃক যে কোনো প্রকার সামাজিক মূল্যবোধ ও রীতি বিরোধী কাজ যা সমাজের অন্যান্য সদস্যদের অধিকারে হস্ত ক্ষেপ করে এবং যা অপরাধীর নিজের এবং সমাজের মঙ্গলের পথে হুমকিস্বরূপ হয়ে দাঁড়ায় তাই কিশোর অপরাধ। কিশোর অপরাধ সংশোধনের জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা : কিশোর অপরাধীরা সংশোধনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পর আর যাতে অপরাধে জড়িয়ে যেতে না পারে সেজন্য তাদের জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। সামাজিক, আর্থিক, পারিবারিক এবং রাজনৈতিক পরিবেশে যাতে শিশু কিশোরদের সুস্থ সামাজিকীকরণে সহায়ক হয় তার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া দরকার। বাংলাদেশে কিশোর অপরাধ সংশোধন ও মোকাবিলা করার জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার তা নিম্নে তুলে ধরা হলো :
১.স্কুল, কলেজে শিক্ষার পরিবেশ উন্নত করা এবং শিক্ষাঙ্গনকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দেওয়া।
২.সুস্থ পারিবারিক পরিবেশ সৃষ্টি এবং পিতা-মাতার সাহচর্যের মাধ্যমে শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশ ও সামাজিকীকরণে নিশ্চিত করা। কেননা, পরিবারই হলো কিশোর অপরাধ জন্মের প্রধান কেন্দ্রস্থল।
৩.শিশু ও কিশোরদের জন্য তাদের উপযোগী সুস্থ, সৃজনশীল ও গঠনমূলক চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করা।
৪.শারীরিক ও মানসিকভাবে পঙ্গু ও বিকারগ্রস্ত শিশুদের জন্য যথোপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
৫. শিশু কিশোরদের সুস্থ ও সৃজনশীল মানসিকতা ও চরিত্র গঠন করার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে শিশু কিশোর পত্রিকা প্রকাশ করা।
বিভিন্ন বিনোদনমূলক মাধ্যম এবং যৌন সুড়সুড়ি দেওয়া অনুষ্ঠান প্রদর্শন এবং অশ্লীল ম্যাগাজিন ও ব্লুফিল্ম ছায়াছবি কঠোর আইন করে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা।
৭.শহর এলাকার ভাসমান, পরিত্যক্ত, দুঃস্থ, অসহায় শিশু কিশোরদের রক্ষণাবেক্ষণ ও লালনপালনের জন্য অধিক সংখ্যক দুঃস্থ ও পরিত্যক্ত শিশু নিবাস স্থাপন করা।
৮ পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে পরিকল্পিত পরিবার গঠনে গ্রাম্য জনগণকে উৎসাহিত করা।
৯.সুনির্দিষ্ট আইনের অধীনে ন্যূনতম ১৬ বছরের নিচের বয়সের কিশোর ও তরুণদের যে কোনো প্রকারের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা।
১০. শিশু কিশোরদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার নির্দেশনা হিসেবে প্রণীত ১৯৯৪ সালের জাতীয় শিশুনীতি সফলভাবে বাস্তবায়ন করা, যা শিশু কিশোরদের সার্বিক বিকাশের জন্য অত্যাবশ্যক। সুন্দর, স্বাস্থ্যবান, রুচিশীল এবং মেধাবী বংশধর গড়ে তোলার পূর্বশর্ত হলো জাতীয় শিশুনীতির সফল বাস্তবায়ন।
১১. বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রাম এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে পরিচালিত পরিবার কল্যাণ এবং মাদার্স ক্লাবগুলোর মাধ্যমে শিশু কিশোরের সুস্থ ব্যক্তিত্ব গঠন করার জন্য মায়েদের প্রশিক্ষণ প্রদান।
১২. শিশু কিশোরদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে পিতামাতার করণীয় ব্যবহার বিধি জাতীয় প্রচার মাধ্যমে নিয়মিত প্রচার করার ব্যবস্থা করা।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশে একক কোনো কারণে কিশোর অপরাধ সংঘটিত হয় না। কিশোর অপরাধের পিছনে অসংখ্য যুক্তিসঙ্গত কারণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্রিয়াশীল। কিশোর অপরাধের সংখ্যা বর্তমানে বাংলাদেশে বেড়েই
চলেছে। তাই এ সমস্যা মোকাবিলায় সরকারি কার্যক্রমের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের এগিয়ে আসা প্রয়োজন। সাথে সাথে সর্বসাধারণকে কিশোর অপরাধ মোকাবিলায় এগিয়ে আসতে হবে। কেবলমাত্র সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে কিশোর অপরাধের মত একটি বহুল আলোচিত সামাজিক সমস্যার মোকাবিলা করা সম্ভব।