বাংলাদেশের শহর সমাজের স্তরবিন্যাস লিখ ।

অথবা, বাংলাদশের নগর সমাজের স্তরবিন্যাস তুলে ধর।
অথবা, বাংলাদেশের নগর সমাজের স্তরবিন্যাস সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা, বাংলাদেশের শহর সমাজের শ্রেণিবিন্যাস বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
সামাজিক স্তরবিন্যাস মানবসমাজের একটি অভিন্ন বৈশিষ্ট্য। সমাজের মানুষকে বিভিন্ন শ্রেণি, জাতি ও বর্ণে ভাগ করা যায়। তাই সামাজিক স্তরবিন্যাস বলতে সমাজে ব্যক্তি, গোষ্ঠী এবং শ্রেণির অসম অবস্থান বা অসম মর্যাদার বিন্যাসকে বুঝায় ।
বাংলাদেশের শহর সমাজের স্তরবিন্যাস : বাংলাদেশের নগর সমাজের স্তরবিন্যাসের ক্ষেত্রে সম্পত্তির মালিকানা বা আয়, ক্ষমতা ও শিক্ষাই বিশেষ ভূমিকা পালন করে। নিম্নে এ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো :
সম্পত্তির পরিমাণ ও মালিকানাভেদে নগর সমাজের স্তরায়ন : সম্পত্তির পরিমাণ তথা আয়ভেদে নগর সমাজে যেসব শ্রেণি বর্তমান তাদের ৫টি শ্রেণিতে দেখানো যেতে পারে। যেমন- ক. উচ্চবিত্ত, খ. উচ্চ মধ্যবিত্ত, গ.
মধ্যবিত্ত, ঘ. নিম্ন মধ্যবিত্ত ঙ. নিম্নবিত্ত।
ক. উচ্চবিত্ত : উচ্চবিত্তের মধ্যে পড়ে শিল্পপতি, বড় বড় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মালিক, বাণিজ্যিক লক্ষ্যে গড়ে তোলা বহুতলবিশিষ্ট একাধিক বাড়ির মালিক এবং অনেক ধরনের পরিবহনের মালিকসহ অন্যান্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের অর্থলগ্নীকারক শ্রেণি
খ. উচ্চ মধ্যবিত্ত : উচ্চ মধ্যবিত্তের মধ্যে পড়ে অধিক আয় করেন এমন পেশাদার শ্রেণি। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বা ক্লিনিকের মালিক, আইন ব্যবসায় এর ফার্ম মালিক। প্রকৌশলী বা প্রকৌশল, ফার্ম মালিক, বিদেশি প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী শ্রেণি এবং মাঝারি পুঁজির ব্যবসায়ী ও শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।
গ. মধ্যবিত্ত : মধ্যবিত্ত শ্রেণি বলতে সাধারণত সীমিত আয়ের শিক্ষিত চাকরিজীবী শ্রেণিকে বুঝায় সাধারণ ডাক্তার, প্রকৌশলী, অধ্যাপক, সাংবাদিক আইন ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মচারী, সাহিত্যিক, কবি, শিল্পী প্রমুখ এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।
ঘ. নিম্ন মধ্যবিত্ত : নিম্ন মধ্যবিত্ত বলতে ঐ শ্রেণিকে বুঝায় যারা নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের মাঝে অবস্থান করে। যেমন-নিম্ন চাকরিজীবী, স্বল্প পুঁজি ব্যবসায়ী ।
ঙ. নিম্নবিত্ত : নিম্নবিত্ত বলতে শ্রমিক, রিকশাচালক, দারোয়ান, পিয়ন বা তার চেয়ে কম আয় করে এমন শ্রেণিকে বুঝায় ।
২. ক্ষমতার ভিত্তিতে নগর সমাজের স্তরায়ন : নগর সমাজের কাঠামোর ক্ষমতা তিনটি ক্ষেত্রে অসমভাবে বণ্টিত। যেমন- ক. শাসক এলিট খ. অশাসক এলিট গ. সাধারণ চাপ সৃষ্টি দলসমূহ।
৩. শিক্ষার ভিত্তিতে নগর সমাজের স্তরায়ন : নগর সমাজ স্তরায়নে শিক্ষার ভূমিকা বেশ সুস্পষ্ট। শিক্ষার তারতম্যের ফলে বিভিন্ন ধরনের পেশাদার তথা চাকরিজীবী মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব ঘটে। এখানে বিভিন্ন টেকনিক্যাল ফিল্ডে বিদেশি ডিগ্রিপ্রাপ্তকের মর্যাদা তুলনামূলকভাবে বেশি।
৪. বাসস্থানের ভিত্তিতে নগর সমাজের স্তরায়ন : বাসগৃহের অবস্থান ও এলাকাভেদেও সামাজিক স্তরবিন্যাস করা হয়। যেমন-ঢাকার গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, উত্তরা ইত্যাদি এলাকায় অধিবাসীদের অধিক মর্যাদা সম্পন্ন মনে করা হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, বাংলাদেশের স্তরবিন্যাস অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া। এখানকার গ্রাম ও নগরে বিভিন্ন ধরনের মানুষ বাস করে। যে কারণে তাদের জীবনধারা, মান-মর্যাদা, যোগ্যতা ইত্যাদি বিচিত্র রকম এবং সে প্রেক্ষিতে গ্রাম ও নগর সমাজের সামাজিক স্তরবিন্যাসেও বৈচিত্র্য পরিলক্ষিত হয়।