তৃতীয় অধ্যায়, বাংলাদেশ দর্শনে বৈষ্ণববাদের প্রভাব

ক-বিভাগ

শ্রীচৈতন্যদেব কত সালে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর : ১৪৮৬ খ্রিস্টাব্দে নবদ্বীপে জন্মগ্রহণ করেন।
শ্রীচৈতন্যের পিতা ও মাতার নাম কী?
উত্তর : পিতার নাম জগন্নাথ মিশ্র এবং মাতার নাম শচীদেবী।
শ্রীচৈতন্যদেবের বাল্যনাম কী ছিল?
উত্তর : নিমাই (ডাক নাম) ভালো নাম ছিল বিশ্বম্ভর।
যৌবনে চৈতন্যের নাম কী ছিল?
উত্তর : গৌরাঙ্গ বা গোরা।
সন্ন্যাস গ্রহণের পর তাঁর নাম কী হয়?
উত্তর : শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য বা সংক্ষেপে শ্রীচৈতন্য।
ভক্তরা শ্রীচৈতন্যকে কী নামে ডাকতেন?
উত্তর : গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু।
শ্রীচৈতন্যদেব কত বছর বয়সে সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করেন?
উত্তর : ২৪ বছর।
গৌড়ীয় বৈষ্ণণ ধর্ম ও দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা কে?
উত্তর : শ্রীচৈতন্যদেব।
শ্রীচৈতন্যদেব কয়টি শ্লোকের মাধ্যমে তাঁর ভক্তিধর্ম বা প্রেমাত্মক মানবতাবাদী দর্শন প্রচার করেন?
উত্তর : সংস্কৃত ভাষায় রচিত আটটি শ্লোকের মাধ্যমে।
শ্রীচৈতন্যদেব আবির্ভাবের পূর্বে হিন্দু সমাজের অবস্থা কী ছিল?
উত্তর : শ্রীচৈতন্যদেব আবির্ভাবের পূর্বে হিন্দু সমাজে তন্ত্রধর্ম স্বীকৃতি লাভ করে বহু অনাচারমূলক অনুষ্ঠানে পরিণত
হয়েছিল। বর্ণাশ্রম ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত হিন্দুসমাজ ব্যবস্থায় তখন মানুষে মানুষে রচিত হয়েছিল বিরাট প্রভেদ।
ব্রাহ্মণরাই ছিল সাংস্কৃতিক জীবনের ধারক, বাহক ও সংরক্ষক যেখানে সাধারণ্যের কোনো অধিকার ছিল না।
শ্রীচৈতন্যদেব প্রবর্তিত বৈষ্ণব ধর্ম ও দর্শনের সন্ধান আমরা কোথায় পাই?
উত্তর : শ্রীচৈতন্যদেব তাঁর প্রবর্তিত ধর্ম ও দর্শন সম্পর্কে কোনো গ্রন্থ রচনা করেননি। তাঁর বাণী ও চিন্তাধারাকে অবলম্বন করে তাঁর অনুসারীরা যেসব গ্রন্থ রচনা করেন তা থেকেই আমরা তাঁর ধর্ম ও দর্শনের সন্ধান পাই।
শ্রীচৈতন্যদেবের জীবনী, ধর্মমত ও দর্শন নিয়ে রচিত উল্লেখযোগ্য কয়েটি গ্রন্থের নাম লিখ।
উত্তর : চৈতন্যভাগবত, চৈতন্যমঙ্গল, শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত, গৌরাঙ্গবিজয়, শ্রীশ্রীকৃষ্ণচৈতন্য চরিতামৃত (সংস্কৃত ভাষায়) প্রভৃতি ।
শ্রীচৈতন্যদেব প্রবর্তিত বৈষ্ণবধর্ম কিসের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল?
উত্তর : জীবে দয়া, ঈশ্বরে ভক্তি এবং সে ভক্তি উদ্দীপনের জন্য নাম সংকীর্তন এর উপরই চৈতন্য প্রবর্তিত ধৰ্ম প্রতিষ্ঠিত ছিল ।
শ্রীচৈতন্যদেব প্রবর্তিত গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্ম ও দর্শনের মূল কথা কী?
উত্তর : বৈষ্ণব ধর্ম ও দর্শনের মূল কথা হলো-
“স্বয়ং ভগবান কৃষ্ণ, কৃষ্ণ পরমতত্ত্ব
পূর্ণজ্ঞান পূর্ণানন্দ পরম মহত্ত্ব।”
অর্থাৎ কৃষ্ণই পরমতত্ত্ব, পরম পুরুষ, পরম জ্ঞান, পরম আনন্দ এবং কৃষ্ণই সাক্ষাৎ ভগবান।
বৈষ্ণব ধর্মের প্রধান অনুষ্ঠান কী?
উত্তর : শ্রীবিষ্ণুর (কৃষ্ণের) নামকীর্তন।
বৈষ্ণব দর্শনের ভিত্তি কিসের উপর রচিত?
উত্তর : বিশ্বজনীন প্রেমানুভূতি তথা প্রেমভক্তি ও করুণার উপরই বৈষ্ণব দর্শনের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত।
বৈষ্ণব ধর্ম ও দর্শনের প্রাচীনতম উৎস কী?
উত্তর : ঋক্‌বেদ সংহিতা।
বৈষ্ণব ধর্মের অপর নাম কী?
উত্তর : প্রেমধর্ম।
কিসের মাধ্যমে ভগবানের সাক্ষাৎ উপলব্ধি লাভ করা যায় বলে শ্রীচৈতন্যদেব মনে করতেন?
উত্তর : প্রেম ও ভক্তিমূলক নৃত্যগীতের মাধ্যমে মানুষ এমন এক আনন্দময় স্তরে পৌঁছাতে পারে যেখানে সে ভগবানের সাক্ষাৎ উপলব্ধি করতে পারে।
বৈষ্ণব মতে ভগবান কীরূপ বিশ্বে ব্যাপ্ত হয়ে আছেন?
উত্তর : স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণরূপে বিশ্বে ব্যাপ্ত হয়ে আছেন।
যে শক্তিতে কৃষ্ণ নিজের বহুরূপে প্রতিভাত হন সে শক্তির নাম কী?
উত্তর : বিলাস ‘শক্তি ।
বৈষ্ণব মতে বিলাস কত প্রকার?
উত্তর : দু’প্রকার । যথাঃ প্রভাব বিলাস ও বৈভব বিলাস।
প্রভাব বিলাসে কৃষ্ণ কীরূপে আবির্ভূত হন?
উত্তর : প্রভাব বিলাসে গোপীদের সঙ্গে রাসলীলাকালে কৃষ্ণ বহু কৃষ্ণে পরিণত হন।
বৈভব বিলাসে কৃষ্ণ কীরূপে প্রতিভাত হন?
উত্তর : বৈভব বিলাসে কৃষ্ণ বাসুদেব (বুদ্ধি), সংকর্ষণ (চেতনা), প্রদ্যুম্ন (প্রেম) ও অনিরূদ্ধ (লীলা) এই চতুর্ব্যহ রূপ পরিগ্রহ করেন।
বৈষ্ণব্য প্রেমতত্ত্ব ও দর্শনের মূল কথা কী?
উত্তর : জাতি নয়, শ্রেণি নয়, কুল নয়, ভক্তি ও প্রেমই মানুষের শ্রেষ্ঠ পরিচয়, প্রেমই মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ।
বৈষ্ণব পদাবলীর বা বৈষ্ণব সাহিত্যের বিষয়বস্তু কী?
উত্তর : রাধা-কৃষ্ণের প্রেমকাহিনী।
বৈষ্ণব দর্শনের রাধা ও কৃষ্ণ কিসের প্রতীক?
উত্তর : রাধা হলেন সৃষ্টির প্রতীক আর কৃষ্ণ পরম স্রষ্টা।
রাধা ও কৃষ্ণের মধ্যে কিসের সম্বন্ধ?
উত্তর : রাধা ও কৃষ্ণের সম্বন্ধ জ্ঞানের নয় বরং প্রেমভক্তির অর্থাৎ স্রষ্টা ও সৃষ্টি, কৃষ্ণ ও রাধা দুই হয়েও প্রেমের সম্বন্ধ এক।
বৈষ্ণব মতে প্রেম বা ভাব কত প্রকার?
উত্তর : পাঁচ প্রকার। যথাঃ শান্ত, দাস্য, সখ্য, বাৎসল্য ও মধুর।
বৈষ্ণবীয় পাঁচ প্রকার প্রেমের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট কোনটি?
উত্তর : সর্বোৎকৃষ্ট প্রেম হলো ‘মধুর’। এই প্রেমের সাধক কোনো বিশিষ্ট সুখের প্রত্যাশিত নন, তিনি অনুভব করেন সর্বাত্মক সুখ, উদ্বেলিত হন অনির্বচনীয় আনন্দ লহরীতে।
চৈতন্য দর্শনে মধুরভজন বা গোপীভজন কী?
উত্তর : চৈতন্য মতে, নিষ্ঠাবান ভক্তরা শান্ত, দাস্য, সখ্য ও বাৎসল্য ভাব উত্তীর্ণ হয়ে ক্রমশ বিভোর হয়ে যান মধুর মহাভাবে। এ প্রক্রিয়ায় ভজন করার নামই মধুর ভজন বা গোপীভজন
বৈষ্ণব মতে পরমসত্তার স্বরূপ কী?
উত্তর : সৎ, চিৎ ও আনন্দ এ তিনটি পরমসত্তার (শ্রীকৃষ্ণের) স্বরূপ।
বৈষ্ণব দর্শনে পরমসত্তার শক্তি কী?
উত্তর : হ্লাদিনী, সন্ধিনী ও সৎবিৎ-এ তিনটি পরমসত্তার শক্তি ।
বৈষ্ণব দর্শনে পরমসত্তার কোন শক্তি থেকে প্রেমের উৎপত্তি?
উত্তর : হ্লাদিনী শক্তি থেকে।
বৈষ্ণব দর্শনে পরমসত্তা বা পরমপুরুষ কৃষ্ণ কী গুণে প্রকাশিত?
উত্তর : বৈষ্ণব দর্শনে পরমসত্তা কৃষ্ণ নির্গুণ ব্রহ্ম নন, বরং এমন এক পরমপুরুষ যিনি ভক্তের পরম আত্মীয়। তিনি খণ্ডবুদ্ধি বা জ্ঞানের বস্তু নয় বরং পরম উপাস্য ও প্রেমের বস্তু।
বৈষ্ণব মতে, মানবসত্তা কয়টি বৃত্তি নিয়ে গঠিত এবং এগুলো কী কী?
উত্তর : তিনটি বৃত্তি । যথাঃ জ্ঞান, কর্ম ও প্রেম।
বৈষ্ণব মতে, ঈশ্বর কে এবং তাঁকে লাভ করার উপায় কী?
উত্তর : বৈষ্ণব মতে, শ্রীকৃষ্ণই একমাত্র ঈশ্বর ও আরাধ্য কিন্তু তিনি প্রেমময়, তাঁকে লাভ করতে হলে তিনি যে ঈশ্বর তা ভুলে তাঁকে ভালোবাসতে হবে।
বৈষ্ণব দর্শনের বিধৃত পরম মহাপ্রেম প্রতীকীরূপ লাভ করেছে কিসে?
উত্তর : বৃন্দাবনের পরকীয়া প্রেমে (রাধা-কৃষ্ণের)।
দার্শনিক তত্ত্বের দিক থেকে রাধা-কৃষ্ণের এই পরকীয়া প্রেমের মূলার্থ কী?
উত্তর : রাধাকৃষ্ণের পরকীয়া প্রেমের মূলার্থ হলো সচ্চিদানন্দ শ্রীকৃষ্ণ কর্তৃক আপন আনন্দেরই এক অসাধারণ আস্বাদন যা লোকাতীত অপার্থিব ও অবর্ণনীয়।
“বিশ্বাসে মিলায় কৃষ্ণ তর্কে বহুদূর”-উক্তিটি কাদের?
উত্তর : বৈষ্ণব কবিদের।
বৈষ্ণব দর্শনের মূল দার্শনিক তত্ত্বসমূহ কী কী?
উত্তর : প্রেমতত্ত্ব, অচিন্ত্যভেদাভেদ তত্ত্ব, মানবতাবাদ প্রভৃতি।
বৈষ্ণব দর্শনের পরমাত্মার স্বরূপ কী?
উত্তর : পরমাত্মা স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণেরই জ্যোতির্ময় রূপ। পরমাত্মা প্রত্যেক জীব শরীরে অণু আত্মারূপে প্রবেশ করে শ্রীকৃষ্ণের বহিরাঙ্গ শক্তি মায়া দ্বারা আবৃত হয়ে আবির্ভূত অবস্থায় থাকেন।
বৈষ্ণবীয় মানবতাবাদের কেন্দ্রবিন্দু কী ছিল?
উত্তর : বৈষ্ণবীয় মানবতাবাদের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল মানুষ মানুষের সর্বাধিক কল্যাণ, মানুষে মানুষে সম্প্রীতি বা প্রেমের বিস্তৃতি।
বৈষ্ণব দর্শনে অচিন্ত্যভেদাভেদ তত্ত্ব কী?
উত্তর : বৈষ্ণব দর্শনে নিবিড় প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ স্রষ্টা ও সৃষ্টির যে সম্বন্ধ তা কী ভেদের সম্বন্ধ না অভেদের সম্বন্ধ এর ব্যাখ্যায় যে তত্ত্ব গড়ে উঠেছে তাই অচিন্ত্যভেদাভেদ তত্ত্ব নামে পরিচিত।

খ-বিভাগ

প্রশ্ন॥১॥ বৈষ্ণববাদের উৎস প্রতিপাদন কর।
প্রশ্ন৷২।বৈষ্ণবীয় প্রেমতত্ত্ব সংক্ষেপে আলোচনা কর।
প্রশ্ন॥৩॥ অচিন্ত্য ভেদাভেদ তত্ত্ব সংক্ষেপে আলোচনা কর।
প্রশ্ন॥৪॥শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের লিপিকাল কী?
প্রশ্ন॥৫॥ বৈষ্ণববাদের ঈশ্বরতত্ত্ব বলতে কী বুঝ?
প্রশ্ন॥৬॥ বৈষ্ণব দর্শনের মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা কর।
প্রশ্ন॥৭॥ শ্রীচৈতন্যের আবির্ভাবের প্রেক্ষাপট বর্ণনা কর।
প্ৰশ্ন৷৮৷ বৈষ্ণব দর্শনের বিরুদ্ধে কী ধরনের অভিযোগ উত্থাপিত হতে দেখা যায়? এগুলো কী গ্রহণযোগ্য?
প্রশ্ন॥৯॥ বৈষ্ণব দর্শনের গুরুতত্ত্ব সম্পর্কে যা জান লিখ।
প্ৰশ্ন৷১০৷৷ বৈষ্ণব দর্শনের দেহোত্তীর্ণ মহাপ্রেমের ধারণা ব্যাখ্যা কর।
প্রশ্ন॥১১৷৷ বৈষ্ণব দর্শনের উদারতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা কর।
প্ৰশ্ন৷১২৷ গৌড়ীয় বৈষ্ণব দর্শন বলতে কী বুঝ?

গ-বিভাগ

প্রশ্ন॥১॥বৈষ্ণবতত্ত্বের বিষয়বস্তু আলোচনা কর।
প্রশ্ন।২।বৈষ্ণব দর্শনের মানবতাবাদী আদর্শ বিস্তারিত আলোচনা কর।
প্রশ্ন॥৩॥বৈষ্ণব দর্শনের অচিন্ত্যভেদাভেদ তত্ত্ব বিস্তারিত ব্যাখ্যা কর।
প্রশ্ন ॥৪॥শ্রীচৈতন্যদেব কে ছিলেন? বৈষ্ণব দর্শনে চৈতন্যদেবের অবদান আলোচনা কর।
প্ৰশ্ন॥৫॥ শ্ৰীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের মানবতাবাদী দর্শন চেতনা ব্যাখ্যা কর ।
প্রশ্ন॥৬॥ বৈষ্ণব দর্শনের উৎস ও গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনা কর।
প্রশ্ন॥৭॥ বৈষ্ণব দর্শনের প্রেমতত্ত্ব বিস্তারিত ব্যাখ্যা কর।
প্রশ্ন॥৮॥ বৈষ্ণববাদ বলতে কী বুঝ? বৈষ্ণববাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগসমূহের গ্রহণযোগ্যতা প্রতিপাদন কর।
প্রশ্ন॥৯॥বৈষ্ণব দর্শন বলতে কী বুঝায়? বৈষ্ণব দর্শনে শ্রীচৈতন্যদেবের অবদান আলোচনা কর।
প্রশ্ন॥১০৷৷ বৈষ্ণববাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক পটভূমি ব্যাখ্যা কর। এ প্রসঙ্গে শ্রীচৈতন্যদেবের দর্শন আলোচনা কর।
প্ৰশ্ন৷১১৷ বৈষ্ণবদর্শন ও বাউল দর্শনের পার্থক্য নিরূপণ কর।
প্রশ্ন৷১২।শ্রীচৈতন্যের আবির্ভাব বাঙালির ও বাংলাসাহিত্যের রেনেসাঁসের যুগ-আলোচনা করো।
প্রশ্ন॥১৩৷৷ ‘চৈতন্যভাগবত’ এবং তার গ্রন্থকর্তা সম্বন্ধে আলোচনা কর।