অথবা, কিশোর আদালত সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, কিশোর আদালত বলতে কী বুঝ?
অথবা, কিশোর আদালতের সংক্ষিপ্ত রূপ বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : অপ্রাপ্তবয়স্কদের সমাজবিরোধী ও আইনবিরোধী কার্যকলাপকেই কিশোর অপরাধ বলা হয়। কোনো অপ্রাপ্তবয়স্ক বালক-বালিকা দেশের প্রচলিত আইন অমান্য অথবা লঙ্ঘন করলে কিংবা কোনো সমাজবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত হলে তাকে কিশোর অপরাধী বলা হয়। কিশোর অপরাধীদের আচরণ সংশোধনের জন্য পরিচালিত আদালতই কিশোর আদালত।
কিশোর আদালত (Juvenile court) : কিশোর আদালত একটা বিশেষ ধরনের আদালত। যেখানে কিশোর অপরাধীদের বিচার করা হয়। এই আদালতে বিচারের পর দোষী কিশোরদের সংশোধনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এসব আদালতে শাস্তি বিধান করা হয় না। বরং কিশোর আদালত অভিভাবকের ভূমিকা গ্রহণ করে। অপরাধের কারণ নির্ণয় এবং
আনুষ্ঠানিক কিছু ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে কিশোর অপরাধীদের সংশোধনের ব্যবস্থা করা এই আদালতের অন্যতম উদ্দেশ্য। আজকের কিশোরদের সংশোধন করতে না পারলে সে ভবিষ্যতে আরো বড় ধরনের অপরাধীতে পরিণত হবে। এই আদালতে অপরাধীর আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য কোনো আইনবিদের প্রয়োজন নেই। অপরাধীকে দোষী বা নির্দোষ
বলে প্রমাণিত করার কোনো অভিপ্রায় এই আদালতের নেই। এক্ষেত্রে কোর্ট একজন প্রভেশন অফিসার নিয়োগ করেন। যার কাজ হচ্ছে কিশোর অপরাধীর আর্থসামাজিক অবস্থা সম্পর্কে আদালতে রিপোর্ট দেওয়া এবং তার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে রিপোর্ট দেওয়া। প্রভেশন অফিসারের রিপোর্টের ভিত্তিতে আদালত ঘরোয়া পরিবেশে শিক্ষক, মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, স্থানীয় জনকল্যাণ অফিসার প্রমুখ ব্যক্তিদেরকে জিজ্ঞাসা করেন তার (কিশোরের) অপরাধ সম্পর্কে। কিশোরকে তার কৃতকর্মের ভুল বুঝার সুযোগ দেওয়া হয় এবং কিশোরকে উপদেশ দেওয়া হয়ে থাকে। বিশেষ বিশেষ আদালত কিশোরদের চারিত্রিক গুণাবলি সংশোধন সংস্থায় পাঠিয়ে দেয়। এই আদালতের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হচ্ছে কিশোর অপরাধীকে পুনর্বাসনে দেওয়া ও চারিত্রিক সংশোধন করা। কিশোর আদালত মনে করে, যারা কিশোর অপরাধী তারা হয়তো অবহেলিত, বঞ্চিত, স্পর্শকাতর। এভাবে কিশোর আদালত কিশোর অপরাধীদের উন্নয়নে কাজ করে থাকে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, কিশোরদের বিচারের জন্য যে আদালত কাজ করে তাকেই কিশোর আদালত বলে। কিশোর আদালত মূলত কিশোরদের জন্য শাস্তি কেন্দ্র নয় এটা এক প্রকার সংশোধন কেন্দ্র। অপরাধীর আচরণ সংশোধনের জন্য এ আদালত পরিচালিত হয়।