উত্তর: ভূমিকা: বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ হল প্রজাতন্ত্রিক শাসনের প্রধান নিকট প্রতিনিধিত্বী সংস্থা। এটি সংবিধানের অনুযায়ী গঠিত হয়েছে এবং এর মেয়াদ প্রতি ৫ বছরের জন্য নির্ধারিত। এছাড়াও, সংসদ নিজেই নির্বাচন প্রণয়ন ও আইন প্রণয়নের জন্য ক্ষমতা রাখে। জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধান সরকারি পদে বিভিন্ন নেতা বাছাই করা হয়। সংসদের আসন সংখ্যা ৩৫০, যেটি প্রতি ৫ বছরে পুনঃনির্বাচিত হয়। প্রজাতন্ত্রিক পদ্ধতিতে সংসদের কার্যকাল পূর্ণ হলে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সংসদের আইন অনুসারে যুদ্ধে লিপ্ত থাকলে সংসদের কার্যকাল এক বছর বাড়ানো যায়। এছাড়াও, সংসদে নারীদের জন্য নির্ধারিত আসন রয়েছে, যা প্রতি ১০ বছরে নতুন নির্বাচনের সাথে পুনঃনির্বাচিত হয়।
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ক্ষমতা ও কার্যাবলি : বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ক্ষমতা ও কার্যাবলি নিম্নে আলোটনা করা হলো:
১. আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত: বাংলাদেশে আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত সমস্ত ক্ষমতা জাতীয় সংসদের ওপর ন্যান্ত। এটা শাসনতন্ত্রের ‘বিধান অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের সকল প্রকার আইন প্রণয়ন এবং প্রচলিত আইনের পরিবর্তন ও সংশোধন করতে পারে।
২. অর্থ সংক্রান্ত: জাতীয় সংসদ বাংলাদেশের সরকারি অর্থ তহবিলের নিয়ন্ত্রক ও রক্ষক হিসেবে কাজ করে। সংসদ প্রত্যেক অর্থ বছরের শুরুতে সরকারের সম্ভাব্য আয়-ব্যয়ের বাজেট পেশ করে। তবে এর পূর্বে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের প্রয়োজন হয়।
৩. নির্বাহী বিভাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ : জাতীয় সংসদ নিন্দা প্রস্তাব, সংসদ মুলতবী প্রস্তাব, প্রশ্ন জিজ্ঞাসা, বাজেটের ওপর বিস্তত আলোচনা এবং সরকারি কর্মকর্তাদের কার্ধ সম্পর্কে তদন্ত প্রস্তাবের দ্বারা শাসন বিভাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে।
৪. বিচার সংক্রান্ত জাতীয় সংসদের কিছু কিছু বিচার: বিভাগীয় ক্ষমতা রয়েছে। যেমন: সংবিধানের কোন ধারা লঙ্ঘন বা গুরুতর অপরাধ সংক্রান্ত বিচার এবং রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসনের মাধ্যমে অপসারিত করতে পারেন। তবে এর জন্য সং সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন প্রয়োজন।
৫. নির্বাচন সংক্রান্ত ক্ষমতা ও কার্যাবলি জাতীয় সংসদ: বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার ও সংসদের বিভিন্ন কমিটির সদস্য নির্বাচন করে থাকেন। তাছাড়া সংসদের ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনের নারী সদস্যরা সংসদ কর্তৃক নির্বাচিত হয়ে থাকেন।
৬. সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত : বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ সংবিধানের বিধান সাপেক্ষে জাতীয় সংসদ সংবিধান সংশোধন করতে পারে। সংশোধনের জন্য সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার দুই তৃতীয়াংশ ভোটের প্রয়োজন হয়।
৭. বিতর্কসভা : বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ বিতর্কসভা হিসেবে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এটা মহাহিসাব নিরীক্ষক ও সরকারি কর্ম কমিশনের বার্ষিক রিপোর্ট এবং বাজেট নিয়ে বিতর্ক করে থাকে। রাষ্ট্রপতির ভাষণ ও বাণী নিয়েও সংসদ ব্যাপক আলোচনায় রত থাকে।
৮. চাকুরী সংক্রান্ত : প্রজাতন্ত্রের কার্যবিভাগ ও প্রশাসনিক কাঠামোর পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত ক্ষমতাও বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের হাতে ন্যান্ত থাকে। প্রতিরক্ষা ও শৃঙ্খলা বিভাগের লোক নিয়োগ সংসদের হাতে ন্যান্ত থাকে।
৯. অধ্যাদেশ সংক্রান্ত : সংসদ অধিবেশন বন্ধ থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রপতি যেসব অধ্যাদেশ জারি করেন সেগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংসদে পেশ করতে হয়। পেশকৃত অধ্যাদেশ সংসদের অনুমোদন না পেলে কার্ধকারিতা হারায়।
১০. জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা : বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ দেশের জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে উন্মুক্ত আলোচনার আয়োজন করে থাকে। এসব আলোচনায় উপস্থাপিত বিষয়ের আলোচনা, সমস্যা নির্ধারণ, সমাধান প্রস্তাবকরণ এবং কার্যকর করা হয়।
১১. নীতি নির্ধারণ : বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ দেশের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক হিসেবে কাজ করে। জাতীয় সংসদ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বৈদেশিক নীতি ইত্যাদি ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১২. আদালত প্রতিষ্ঠা: জাতীয় সংসদ সুপ্রিম কোর্ট ব্যতীত অন্যান্য অধঃস্তন আদালত প্রতিষ্ঠার জন্য আইন প্রনয়ণ করে থাকে এবং এ সকল আদালতের বিভিন্ন সমস্যা পর্যবেক্ষন করে থাকে ।
১৩. বিবিধ : বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ যুদ্ধা ঘোষণা ও আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুমোদন করে থাকে। এছাড়া স্থানীয় শাসন সংক্রান্ত বিধি ও প্রবিধি প্রণয়ন করা সংসদের এখতিয়ার ভূক্ত।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় ঘে, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ বহুবিধ ক্ষমতা ও বিভিন্ন কার্ধাবলি সম্পাদন করে দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে জাতীয় সংসদের উপরিউক্ত ক্ষমতা ও কার্ধাবলির আলোকে জাতীয় সংসদকে সার্বভৌম ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু বলা ঘায়।