উন্নয়নশীল দেশে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের কারণসমূহ বিশ্লেষণ কর।

উত্তর : ভূমিকা : উন্নয়নশীল দেশে সামরিক বাহিনী একটি গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ পরিষেবা হিসেবে গণ্য হয়। সামরিক বাহিনীর মূল কাজ সামরিক রক্ষা, রাষ্ট্র সুরক্ষা, অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সুরক্ষা, ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজে সহায়তা করা। এই কাজগুলি সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
উন্নয়নশীল দেশে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ একটি দীর্ঘস্থায়ী এবং জটিল সমস্যা। এর পেছনে একাধিক কারণ কাজ করে, যার মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ নীচে আলোচনা করা হলো:
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা: দুর্বল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, দুর্নীতি, এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধের কারণে অনেক উন্নয়নশীল দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে সামরিক বাহিনী নিজেদেরকে “শান্তিরক্ষী” হিসেবে দাবি করে ক্ষমতা দখল করে নেয়।
অর্থনৈতিক দুর্বলতা: দারিদ্র্য, বেকারত্ব, এবং অসমতা বৃদ্ধি পেলে জনগণের মধ্যে সরকারের প্রতি অসন্তোষ দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে সামরিক বাহিনী নিজেদেরকে “উন্নয়নের বাহক” হিসেবে দাবি করে ক্ষমতা দখল করে নেয়।
দুর্বল আইনশৃঙ্খলা: দুর্বল আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং অপরাধের বৃদ্ধি জনগণের নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি তৈরি করে। এই পরিস্থিতিতে সামরিক বাহিনী নিজেদেরকে “আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী” হিসেবে দাবি করে ক্ষমতা দখল করে নেয়।
বাহ্যিক হস্তক্ষেপ: ঠান্ডা যুদ্ধের সময়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের নিজ নিজ কৌশলগত স্বার্থে অনেক উন্নয়নশীল দেশে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপে সমর্থন দিয়েছে। বর্তমানে, চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব অনেক দেশে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের ঝুঁকি বৃদ্ধি করছে।
সামরিক বাহিনীর প্রভাব: উন্নয়নশীল দেশে সামরিক বাহিনীর প্রভাব প্রায়শই বিপর্যয়কর হয়। সামরিক শাসন গণতন্ত্রের বিকাশ ব্যাহত করে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করে এবং দুর্নীতি বৃদ্ধি করে।
রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা: সামরিক বাহিনী রাষ্ট্রের সুরক্ষা ও সীমান্ত নিরাপত্তা সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি আক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিস্থাপনে ব্যবহৃত হতে পারে।
আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অবস্থা: কোনও দেশে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অবস্থা অস্থিতির সময়ে, সামরিক বাহিনী রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সহায়ক হতে পারে।
অভ্যন্তরীণ সংঘাত: সামরিক বাহিনী দেশের অভ্যন্তরে সংঘাত ও বিভাজনের সময় নিয়ন্ত্রণ ও শান্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে।
উন্নয়ন ও প্রগতির সম্মুখে আন্দোলন: কোনও সময়ে, উন্নয়ন ও প্রগতি কে নিশ্চিত করতে সামরিক বাহিনী দরকার পড়ে যেতে পারে, যেখানে রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা ও সুরক্ষা সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থান হতে পারে।
আইন ও অনুশাসনের শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান: সামরিক বাহিনী আইন ও অনুশাসন সাধারণ মানুষদের সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে পরিচিত করতে সাহায্য করে এবং নিয়ম অনুসরণের জন্য প্রতিষ্ঠানিত একটি মাধ্যম হিসাবে কাজ করতে পারে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা মানবিক মহামারি: প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা মানবিক মহামারির সময়, সামরিক বাহিনী রাষ্ট্রের জনসংখ্যা কে সুরক্ষিত করতে পারে এবং জরুরি সেবা প্রদানে সহায়ক হতে পারে।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, এই সামগ্রিকভাবে, সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ উন্নয়নশীল দেশে সামরিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, এবং সামাজিক মানদণ্ডের প্রতি উদ্দীপ্ত কারণ হতে পারে।