দ্বৈত শাসন বলতে কী বুঝ?

উত্তরঃ ভূমিকাঃ দ্বৈত শাসন হল এমন একটি শাসন ব্যবস্থা যেখানে দুটি প্রধান সাম্যেক বা ক্ষমতা সংগ্রহ করে। এটি প্রায়ই রাজনৈতিক বা সামাজিক প্রশাসনের সংক্ষেপে ব্যবহৃত হয়। এই শাসন ব্যবস্থার আওতায় প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, বা ব্যক্তিরা প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিষ্ঠান বা ক্ষমতা সংগ্রহ করে সাম্যেক প্রভাব বা অধিকার অর্জন করে।
দ্বৈত শাসন: দ্বৈত শাসন বলতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং নবাবের যৌথ শাসন ব্যবস্থাকে বোঝায়।
১৭৬৫ সালে ইংরেজ সেনাপতি রবার্ট ক্লাইভ দিল্লিতে মোঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করেন। দেওয়ানি লাভের পর কোম্পানির পক্ষে রবার্ট ক্লাইভ বাংলার নবাব নজম-উদ-দৌলাকে বার্ষিক ৫৩ লক্ষ টাকা দেন। বিনিময়ে ইংরেজ কোম্পানি রাজস্ব আদায়, সামরিক ব্যবস্থা এবং প্রশাসন পরিচালনার দায়িত্ব পায়। যদিও দেশ শাসনের দায়িত্ব আগের মতোই নবাবের হাতে ছিল। এভাবে কোম্পানি লাভ করে দায়িত্বহীন ক্ষমতা আর নবাব পান ক্ষমতাহীন দায়িত্ব। এই অদ্ভুত শাসনব্যবস্থাই দ্বৈত শাসন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই ব্যবস্থায় বাংলার নবাব সামান্য বৃত্তিভোগী কর্মচারীতে পরিণত হলেন । আর প্রচুর অর্থনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ইংরেজ কোম্পানি এদেশের প্রকৃত প্রভু হয়ে বসলেন । নবাব ও কোম্পানির মধ্যে এই ক্ষমতা ভাগাভাগির ফলে দেশশাসন ও প্রজাসাধারনের মঙ্গল বিধানের দায়িত্ব কেউই পালন করত না । ফলে বাংলায় রাজনৈতিক ক্ষেত্রে চরম বিশৃঙ্খলা ও গোলযোগ দেখা দেয় । ক্ষমতাহীন নবাব সেই বিশৃঙ্খলা দমনে ব্যর্থ হন । কোম্পানি নিযুক্ত রাজস্ব বিভাগের দুই সহকারী রেজা খাঁ ও সিতাব রায়ের শোষণ ও অত্যাচারে প্রজাদের দুর্দশার অন্ত ছিল না । পরিণতিতে ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে বা ১১৭৬ বঙ্গাব্দে বাংলায় ব্যাপক দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় । এটি ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিত। অর্থাৎ দ্বৈত শাসন বলতে দুটি সরকার মিলে শাসন করা।
স্বরূপ: দেওয়ানি লাভের আগেই কোম্পানি মিরজাফরের কাছ থেকে ২৪ পরগনা জেলা এবং মিরকাশিমের কাছ থেকে বর্ধমান, মেদিনীপুর ও চট্টগ্রাম জেলা লাভ করেছিল। দেওয়ানি লাভের পর বাংলার অবশিষ্ট অংশে রেজা খানকে কোম্পানি নায়েব দেওয়ান হিসেবে নিযুক্ত করে। রেজা খানকে পরিচালনার জন্য রায়দুর্লভ ও জগৎ শেঠকে তার সহকারী হিসেবে কোম্পানি নিযুক্ত করে। অপরদিকে মুর্শিদাবাদ দরবার তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় ব্রিটিশ রেসিডেন্ট ফ্রান্সিস মাইকাসের ওপর। এইভাবে বাংলায় কোম্পানি ও নবাবের মধ্যে দেওয়ানি ও নিজামিত ক্ষমতার বিভাজন ঘটে।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রভাবের অধীনে নবাবদের অধিকার ও ক্ষমতা সীমিত হতো, যা একটি ধর্মনিরপেক্ষ দ্বৈত শাসনের উদাহরণ হতে পারে।