উত্তর : ভূমিকা ঃ সামাজিক মূল্যবোধের পরপন্থী ও সমাজরোধী কার্যকলাপই হচ্ছে অপরাধ। বাংলাদেশে ব্যাপক দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও নিরক্ষরতার দরুন যুবক-তরুণ সমাজ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। সমাজ যে কাজ মঙ্গলজনক হিসেবে বিবেচিত তার বিরুদ্ধে কোন কিছু করাকেই অপরাধ বলা যেতে পারে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও বিদেশি সংস্কৃতির ছড়াছড়িই অপরাধের মাত্রাকে তীব্রতর করে দিচ্ছে। সুতরাং, সমাজ বা রাষ্ট্রের আইন ও নৈতিকতাবিরোধী কাজই হচ্ছে অপরাধ। অপরাধ যারা করে স্বার্থগতভাবে তা সম্পাদন করে বলেই অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। সমাজে অপরাধ দমন জরুরি।
→ অপরাধ ঃ প্রাপ্ত বয়স্কদের দ্বারা সংঘটিত কোন কাজ যা দেশের সংবিধানের পরিপন্থী ও জনগণের স্বার্থে বাধাদান করে এবং এর ফলে কার্যকারীকে দণ্ড পেতে হয় তাই অপরাধ। আমদের সমাজে অহরহ সকাল সন্ধ্যা অপরাধ হয়েই চলেছে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, ধর্ষণ, লুট থেকে শুরু করে মারামারি, খুন পর্যন্ত ঘটে যাচ্ছে। তাই বলা হয় সমাজ ও রাষ্ট্রের মূল্যবোধের রীতিনীতির এবং আইনকানুনের পরিপন্থি ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ কাজই অপরাধ।
সাধারণ অর্থে ঃ সাধারণ অর্থে অপরাধ বলতে কাজ ন্যায়সঙ্গত নয়। কতিপয় ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার মানসে যখন জনসমষ্টির স্বার্থে আঘাত হানা হয় এবং এ কাজের জন্য আইন অনুযায়ী শাস্তিও দেয়া যায় তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার অভাবে অনেকেরই চারিত্রিক স্খলন ঘটেছে। আইনের লঙ্ঘন সাধানকারী কাজই মূলত অপরাধ হিসেবে গণ্য।
→ প্রামাণ্য সংজ্ঞা : বিখ্যাত মনীষীদের অপরাধ সম্পর্কে মন্তব্য তুলে ধরা হলো :
অধ্যাপক F.R Khan বলেছেন, “যেসব আচরণ সমাজ ও নৈতিকতা বিরোধী তাকে অপরাধ বলে।” বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী বার্নস ও টিটারস বলেছেন যে, অপরাধ হচ্ছে এমন এক ধরনের সমাজবিরোধী আচরণ, যা জনগণের স্বাভাবিক অনুভূতির বিরুদ্ধে কাজ করে এবং যা দেশের সংবিধান কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে।” প্রখ্যাত মনস্তত্ত্ববিদ ডুব এর ভাষায়, “প্রাপ্ত বয়স্কদের দ্বারা সংঘটিত সামাজিকভাবে নির্ধারিত কোনো কাজে যদি প্রচলিত প্রথানুযায়ী নির্ধারিত আইনের আওতায় আসে তবে তা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।”
→ অপরাধের মর্মকথা ঃ অপরাধ হচ্ছে সমাজবিরোধী কাজ। মানুষের আবেগ অনুভূতি ও স্বার্থকে আহত করে ও সমাজের জন্য অত্যন্ত ধ্বংসাত্মক হিসেবে যা বিবেচিত তা অপরাধ। অপরাধকারীকে তার অপরাধ কর্মের জন্য শাস্তি পেতে হয় ও সংশোধনের চেষ্টা করা লাগে। সমাজে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে মানুষের অধিকার হরণের উদ্দেশ্যেই অপরাধ
হয়ে থাকে। বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অপরাধ দমনের চেষ্টায় তৎপর থাকে। অপরাধের ফল কখনও ভাল হয় না।
উপসংহার। পরিশেষে বলা যায় যে, অপরাধ সমাজের শান্তি বিঘ্নিত কর্ম যা অপরাধীরা করে থাকে। সুদক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অপরাধীরা খুন, রাহাজানি, চাঁদাবাজি প্রভৃতি অপরাধ করেই চলেছে। সমাজের উন্নতি ও সমৃদ্ধি অপরাধের ফলে বাধাপ্রাপ্ত হয়। তাই অতি সহজেই বলা যায় সমাজের রীতিনীতি ও শৃঙ্খলা বিরোধী কার্মকাণ্ডে যা অনভিপ্রেতভাবে স্বীকৃত তা অপরাধ। অপরাধ দেশ ও জাতির কল্যাণে বাধা প্রদান করে।