বাংলাদেশে হাসপাতালে সমাজসেবা কর্মসূচির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো লেখ।

উত্তর : ভূমিকা ঃ বাংলাদেশে বহুসংখ্যক মানুষ পঙ্গু, বধির, অন্ধ, দুর্বল যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। নিজেদের অন্ন সংস্থানেই ব্যর্থ তারা চিকিৎসা খরচ যোগান দিবে কিভাবে। স্বল্প আয়ের মানুষগুলোরও একই অবস্থা যারা দিনের মজুরিতে কোনোমত সংসার চলে। এহেন অবস্থায় হাসপাতাল সমাজনেতা কর্মসূচির আবির্ভাব ঘটে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকল্পে। বর্তমানে বাংলাদেশে ৮৪টি হাসপাতালে এই হাসপাতাল সমাজসেবা কর্মসূচি চালু রয়েছে। এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য রয়েছে। আর এগুলোর ভিত্তিতেই এটি সামনে অগ্রসর হচ্ছে।
→ বাংলাদেশ হাসপাতাল সমাজসেবা কর্মসূচির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো ঃ বাংলাদেশের জনগণের স্বাস্থ্য মানোন্নয়নে
বিভিন্ন জেলা শহরে হাসপাতাল নির্মিত হলেও সেগুলোর কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে হাসপাতাল সমাজসেবা কর্মসূচি অনন্য ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশে হাসপাতাল সমাজসেবা কর্মসূচির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো নিম্নরূপ :
১. রোগীর পারিপার্শ্বিক তথ্য সংগ্রহ ৪ রোগীর সাথে সুসম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে তার পারিপার্শ্বিক অর্থাৎ সামাজিক, অর্থনৈতিক প্রাসঙ্গিক অন্যান্য তথ্যাবলি সংগ্রহ করে রোগ নিরাময়ে চিকিৎসককে সহায়তা প্রদান। এটি হাসপাতাল সমাজসেবা কর্মসূচির অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে গণ্য হয়, যা রোগীকে সুস্থ করে তুলতে সহায়ক করে।
২. দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসা সেবা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্তকরণ : হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আগত রোগীদের মধ্য হতে দরিদ্র রোগী বাছাই করে তাদেরকে চিকিৎসা সেবা কর্মসূচিতে অন্তর্ভূক্তকরণের ব্যবস্থা করা হয়।
৩. মানসিক সুস্থতা ফিরিয়ে আনা : মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন রোগীদের মানসিকভাবে সুস্থ করতে সাইকোথেরাপির ব্যবস্থা করা।
৪. রোগী ও চিকিৎসকের সুসম্পর্ক স্থাপন ঃ হাসপাতাল সমাজসেবা কর্মসূচির অন্যতম লক্ষ্য হলো রোগী ও চিকিৎসকের মাঝে সুসম্পর্ক স্থাপন। যাতে চিকিৎসা প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়।
৫. দরিদ্র রোগীদের সাহায্যদান : হাসপাতাল সমাজসেবা কর্মসূচির অন্যতম উদ্দেশ্য দরিদ্র রোগীদেরকে বিভিন্ন ঔষুধপত্র, রক্ত, কৃত্রিম অঙ্গ, চশমা, ক্রাচ প্রভৃতি চিকিৎসা সরঞ্জাম দিয়ে সহায়তা করা।
৬. পুনর্বাসনের ব্যবস্থা ঃ চিকিৎসা শেষে এতে রোগীদের জন্য আর্থিকভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করা হয়।
৭. রোগীর মনস্তাত্ত্বিক বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্বারোপ ঃ হাসপাতাল সমাজসেবা কর্মসূচিতে রোগীর সব মনস্তাত্ত্বিক
্ বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্বারোপ করে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা।
৮. সংক্রামক রোগ সম্পর্কে পরামর্শদান ঃ দরিদ্র, নিঃস্ব পরিবারগুলোতে যাতে সংক্রামক রোগ ছড়াতে না পারে সেজন্য রোগীর পরিবারের সদস্যদের পরামর্শদানে হাসপাতাল সমাজসেবা কর্মসূচির অন্যতম উদ্দেশ্য হিসেবে বিবেচিত হয়।
৯. শিশুদের উন্নত চিকিৎসাসেবা দান : হাসপাতাল সমাজসেবা কর্মসূচির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য শিশুদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকরণ। এজন্য শিশুদের বেশি যত্ন নেওয়া হয়। আর পরিত্যক্ত শিশুরোগীদেরকে চিকিৎসা শেষে শিশু সদনে ভর্তি করা হয়।
১০. ফলোআপ করা ঃ রোগীর সুস্থতা ও পুনর্বাসনে মাঝে মাঝে হাসপাতাল সমাজসেবা কর্মসূচির কর্তৃপক্ষগণ ফলোআপ করেন।
উপসংহার ঃ পরিশেষে বলা যায়, বাংলাদেশে দরিদ্র রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। স্বল্প আয়ের এসব মানুষ পারছে না নিজেদের মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে আর চিকিৎসা গ্রহণ যেন তাদের কাছে কঠিন কিছু। হাসপাতল সমাজসেবা ব্যথাক্লিষ্ট এসব হতদরিদ্র রোগীদের সঠিকভাবে শিক্ষা প্রদান করছে। মাঝে মাঝে পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও
করছে। তাই, হাসপাতাল সমাজসেবার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো মহান নির্দ্বিধায় বলা যেতে পারে।