অথবা, সংস্কৃতির পরিবর্তন প্রক্রিয়া লিখ।
অথবা, কী কী বিষয়ের ভিত্তিতে সংস্কৃতির পরিবর্তন সাধিত হয়?
অথবা, সংস্কৃতির পরিবর্তন কেন হয়? আলোচনা কর।
অথবা, সংস্কৃতির পরিবর্তনের কারণগুলো লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : সংস্কৃতি সমাজবিজ্ঞানের একটি মৌলিক বিষয় বা ধারণা। সংস্কৃতি মানুষের বিশিষ্ট পরিচয় বহন করে। সকল যুগের ও সকল জায়গার মানবসমাজেরই স্বতন্ত্র সংস্কৃতির সন্ধান পাওয়া যায়। সংস্কৃতি নামক বৈশিষ্ট্যই মানবসমাজকে স্বতন্ত্র মর্যাদায় উন্নীত করেছে।
সংস্কৃতির পরিবর্তনশীলতার কারণ : সংস্কৃতির পরিবর্তনশীলতার পিছনে রয়েছে বহুবিধ কারণ ও সমাজের বিভিন্ন উপাদানের প্রভাব। এসব কারণ বা উপাদান সম্পর্কে নিম্নে আলোকপাত করা হলো :
১. ভৌগোলিক অবস্থান : পৃথিবীর যে কোনো ভূখণ্ডে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যাবলি ভৌগোলিক অবস্থানের দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়ে থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাকৃতিক উপাদানের মধ্যে বিভিন্নতা বিদ্যমান। আর প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যজনিত পার্থক্যের কারণে এক একটি অঞ্চলে সৃষ্টি হয় বিবিধ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত সংস্কৃতির।
৩. প্রাধান্য সৃষ্টিকারী উপাদান : পৃথিবীর প্রত্যেক দেশের সংস্কৃতিরই একটি মুখ্য বা কেন্দ্রীয় বিষয় থাকে। এ মুখ্য বিষয়টি সংস্কৃতির প্রাধান্য সৃষ্টিকারী বিষয় হিসেবে অভিহিত। যেমন- ভারতীয় সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান বিষয় হলো সমাজব্যবস্থায় পুরুষের প্রাধান্য। গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সংস্কৃতির মুখ্য বিষয় হলো মার্কসবাদ। অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংস্কৃতির কেন্দ্রীয় বিষয় হলো ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ। আর যে কোনো সংস্কৃতির এ প্রাধান্য সৃষ্টিকারী বিষয়টি স্থিতিশীল নয়, এটি গতিশীল বা পরিবর্তনশীল। এ কারণে এর প্রভাবে সংস্কৃতিতে পরিবর্তন সূচিত হয়।
৪. জৈব পরিবর্তন : মানবজীবনে জৈব পরিবর্তন ঘটে মূলত অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে। আর মানুষের এ জৈব পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও পরিবর্তন সূচিত হয়। ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য মানুষকে তার গোষ্ঠী, প্রতিবেশী এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে খাপখাইয়ে তথা সম্পর্ক ও সামঞ্জস্য বজায় রেখে চলতে হয়। আর এ প্রচেষ্টা বা উদ্যোগ অব্যাহত গতিতে ধাবিত হতে থাকে। ফলশ্রুতিতে ইতিহাসের বিভিন্ন অধ্যায়ে একই জনগোষ্ঠীর মাঝে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ স্বাতন্ত্র্য বা পার্থক্য প্রতীয়মান হয়।
৫. ব্যক্তি মানুষের আচরণ : কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তির আচরণ বা ব্যবহার কিংবা মর্জিমাফিক চলন সংস্কৃতির বিশেষ কিছু প্রলক্ষণকে প্রভাবিত করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে ফেজ টুপির পরিবর্তে জিন্নাহ্ টুপির ব্যাপক ব্যবহারের প্রবণতা। আবার একইভাবে ভারতে গান্ধী টুপির প্রচলন ঘটেছে। সামাজিক প্রলক্ষণের এরকমের পরিবর্তনের সামাজিক ও রাজনৈতিক তাৎপর্যকে স্বীকার না করে পারা যায় না।
৬. উৎপাদন পদ্ধতির পরিবর্তন: মার্কসবাদীদের মতে, উৎপাদন পদ্ধতিই হচ্ছে যে কোনো জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতির মুখ্য নির্ণায়ক। মার্কসীয় দর্শনের দৃষ্টিতে একটি জনগোষ্ঠীর ন্যায়নীতিবোধ, আইন ব্যবস্থা, প্রথা প্রকরণ, সাহিত্য, ললিতকলা ইত্যাদি কিরূপ হবে তা স্থিরীকৃত হয় সমকালীন উৎপাদন পদ্ধতির প্রেক্ষিতে।
৭. বিভিন্ন আবিষ্কার বা উদ্ভাবন : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মানুষের বিশ্বাস, প্রত্যয়, জ্ঞান, ঐতিহ্য, প্রথা পদ্ধতি ইত্যাদির ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক বা মৌলিক পরিবর্তন আনয়ন করে। প্রকৃত অর্থে, নতুন কিছুর আবিষ্কার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পরিবর্তন সূচিত করে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, পৃথিবীর প্রত্যেকটি জনগোষ্ঠীরই কিছু নিজস্বতা রয়েছে। ফলশ্রুতিতে সংস্কৃত
ি হয় স্বতন্ত্র প্রকৃতির। আর এ স্বাতন্ত্র্য বাস্তব ও সত্য। তাছাড়া ভিন্ন দেশের মানুষের আগমন, সাটেলাইট, রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ইত্যাদি সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের জন্য দায়ী।