অথবা, বস্তুগত ও অবস্তুগত সংস্কৃতির মধ্যকার সৃদৃশ্য, বৈসাদৃশ্যসমূহ সংক্ষেপে লিখ।
অথবা, বস্তুগত ও অবস্তুগত সংস্কৃতির মধ্যে ইতিবাচক ও নেতিবাচক সম্পর্ক সংক্ষেপে মূল্যায়ন করেন।
অথবা, অবস্তুগত ও বস্তুগত সংস্কৃতির মধ্যকার সম্পর্ক সম্পর্কে যা জান তা সংক্ষেপে উল্লেখ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : আমরা যা তাই আমাদের সংস্কৃতি। সংস্কৃতি বস্তুগত ও অবস্তুগত দুইই হতে পারে। সমাজবিজ্ঞানী গিলিন ও গিলিন এর মতে, সংস্কৃতি বলতে একদিকে যেমন বস্তুগত আবিষ্কারকে বুঝায় অন্যদিকে, ঐ
বস্তুগত আবিষ্কারের পিছনে ক্রিয়াশীল চিন্তা-ভাবনা, কৌশল বা জ্ঞানকে বুঝায়।
বস্তুগত ও অবস্তুগত সংস্কৃতির সম্পর্ক : মানুষের সব বস্তুগত সৃষ্টিকে বস্তুগত সংস্কৃতি এবং অবস্তুগত সৃষ্টিকে অবস্তুগত সংস্কৃতি বলা হয়। বস্তুগত সংস্কৃতি ও অবস্তুগত সংস্কৃতির মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যের সম্পর্ক রয়েছে।
নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
সাদৃশ্যের সম্পর্ক :
১. বস্তুগত ও অবস্তুগত উভয় ধরনের সংস্কৃতি মূলত মানবীয় সৃষ্টি। মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণী সংস্কৃতি সৃষ্টি করতে পারে না। কেবল মানুষই সংস্কৃতিবান প্রাণী এবং বস্তুগত ও অবস্তুগত উভয় ধরনের সংস্কৃতি মানুষের
পরবর্তী উত্তর-পুরুষ দ্বারা সামাজিক উত্তরাধিকার হিসেবে গৃহীত বা রপ্ত হয়।
২. উভয় ধরনের সংস্কৃতি মূলত মানুষের প্রয়োজনের তাগিদে সৃষ্টি হয়। উভয় ধরনের সংস্কৃতি মানুষের বৈষয়িক বা মানসিক প্রয়োজন মেটায়।
৩. উভয়জাতীয় সংস্কৃতিই পরিবর্তনশীল। চিন্তাশীল মানুষ তার সংস্কৃতির মধ্যে রূপান্তর ঘটিয়ে থাকে সাধ-সাধনা পূরণ ও উত্তমভাবে বাঁচার লক্ষ্যে।
বৈসাদৃশ্যের সম্পর্ক :
১. সমাজবিজ্ঞানী নিম্কমের মতে, অবস্তুগত সংস্কৃতির তুলনায় বস্তুগত সংস্কৃতি দ্রুত এগিয়ে চলে। সংস্কৃতির অসম অগ্রগতির ফলে সমাজের বিভিন্ন অনুষ্ঠান-প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হয়।
২. বস্তুগত সংস্কৃতির চাহিদা ও আবেদন অবস্তুগত সংস্কৃতির চাহিদা ও আবেদনের চেয়ে ব্যাপক।
৩. বস্তুগত সংস্কৃতির উপাদানের যে কোনো দেশ বা জাতি দ্বারা গৃহীত হতে পারে কিন্তু অবস্তুগত সংস্কৃতি অন্য দেশ বা জাতি দ্বারা গৃহীত হয় না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আমরা উন্নত কোনো দেশের কলকারখানা বা যন্ত্রপাতি সহজেই গ্রহণ করতে পারি কিন্তু ঐসব দেশের রাজনৈতিক আদর্শ, দর্শন বা মূল্যবোধ সহজেই গ্রহণ করতে পারি না।
৪. বজ্রগত সংস্কৃতির অগ্রগতিকে সহজে পরিমাপ করা যায় কিন্তু অবস্তুগত সংস্কৃতির অগ্রগতিকে সহসা পরিমাপ করা যায় না।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, মানুষের সব ধরনের বস্তুগত আবিষ্কার হচ্ছে তার বস্তুগত সংস্কৃতি এবং সবধরনের অবস্তুগত আবিষ্কার হচ্ছে তার অবস্তুগত সংস্কৃতি।