অথবা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা, সনাতন সম্প্রদায়ের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
অথবা, বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের সংক্ষিপ্ত পরিচয় উল্লেখ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : সেই সুপ্রাচীনকাল থেকে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর লোক বাস করে আসছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা পাশাপাশি বসবাস করে আসছে। প্রতিটি ধর্মের রয়েছে নিজস্ব স্বকীয়তা বা বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিসেবে এ দেশে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সম্প্রদায় উল্লেখযোগ্য।
হিন্দু সম্প্রদায় : বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আলোচনায় হিন্দুরা সর্বাগ্রে চলে আসে। মুসলমানদের পরেই এ দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের স্থান। বহু প্রাচীনকাল থেকে এ দেশে হিন্দুরা বসবাস করে আসছে। এ দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের জীবনে কতকগুলো বিষয় বিদ্যমান। যেমন–
১. সর্ব প্রাচীন সম্প্রদায় : হিন্দুরা এ দেশে প্রাচীনকাল থেকে বসবাস করে আসছে। এ দেশে বসবাসকারী সম্প্রদায় হিসেবে তারা প্রথম ।
২. ভারতীয় হিন্দু সম্প্রদায় : বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় ভারতীয় হিন্দু সম্প্রদায় থেকে কিছু কিছু বিষয়ে ভিন্নতা প্রদর্শন করে। হিন্দুরা মূল ধর্মগ্রন্থ বেদের অনুসারী হলেও এদেশীয় হিন্দুদের জীবনে এর কিছুটা ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে যেমন হিন্দুদের আচার, সংস্কৃতি, বিশ্বাসে বিভিন্নতা দেখা যায় তেমনি বাংলাদেশের সাথে ভারতের
হিন্দুদের আচার, সংস্কৃতি ও বিশ্বাসে ভিন্নতা দেখা যায়।
৩. বর্ণপ্রথা : বাংলাদেশের হিন্দুরা বর্ণপ্রথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে এবং মেনে চলে। হিন্দুধর্মে চারটি প্রধান বর্ণের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এগুলো হলো- ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র। সাধারণভাবে ব্রাহ্মণরা পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করে, ক্ষত্রিয়রা যোদ্ধা হিসেবে পরিচিত, বৈশ্যরা ব্যবসায়ী এবং শূদ্ররা কৃষি ও মজুরের কাজ করে। বর্ণভেদ প্রথা অনুসারে বর্ণ অনুযায়ী পেশা গ্রহণ করা হয়। জন্মের সাথে সাথে বর্ণ নির্ধারিত হয়ে যায় এবং সারাজীবন এটি অপরিবর্তিত থাকে। তবে বর্তমানে এ বর্ণ প্রথার প্রাধান্য অনেক কমে গেছে।
৪. আধুনিক শিক্ষা গ্রহণ : হিন্দুরা প্রাচীনকাল থেকেই জ্ঞান চর্চার সাথে জড়িত। প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে মুসলিম শাসনকাল, ইংরেজ শাসনামলে তারা জ্ঞান চর্চা অব্যাহত রাখে। ইংরেজ শাসনামলে তারা সর্বপ্রথম আধুনিক ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণ করে। আধুনিক ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে তারা চাকরি, ব্যবসায় বাণিজ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি সাধন করে ।
৫. উৎসব : হিন্দুরা সারা বছর বিভিন্ন উৎসবে মেতে থাকে। বলা হয়ে থাকে, ‘বার মাসে তের পার্বণ’। হিন্দুরা প্রতি মাসে কোনো না কোনো উৎসব পালন করে। তারা কতকগুলো সর্বজনীন উৎসব পালনের মাধ্যমে ধর্মীয় সংহতি বজায় রাখে । এসব উৎসবের মধ্যে দুর্গাপূজা, সরস্বতী পূজা, কালীপূজা, লক্ষ্মীপূজা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
৬. বিবাহ : হিন্দুধর্মের বিবাহ বিষয়টি বর্ণ প্রথার সাথে সম্পর্কিত। এখানে যে কেউ ইচ্ছা করলেই কারও সাথে বৈবাহিক সূত্র স্থাপন করতে পারে না। হিন্দুরা নিজ বর্ণের বাইরে বিবাহ করতে পারে না। তবে বর্তমানে আধুনিক শিক্ষার প্রভাবে বর্ণ প্রথা অনেক কমে গেছে। বিবাহের ক্ষেত্রে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বর্ণ প্রথা মেনে চলা হয়।চার হিন্দুধর্মের বিবাহের সাথে আরেকটি বিষয় জড়িত সেটা হলো যৌতুক প্রদান। হিন্দু কন্যারা পিতার সম্পত্তি পায় না। তাই বিবাহের সময় পিতা কন্যাকে কিছু সম্পত্তি বা মূল্যবান সামগ্রী প্রদান করে। এটাই যৌতুক প্রথা নামে পরিচিত। হিন্দুদের দেখাদেখি বর্তমানে এদেশীয় মু
সলমানরাও বিবাহের সময় যৌতুক গ্রহণ করে।
৭. গানবাজনা : বাংলাদেশের হিন্দুরা গানবাজনাকে তাদের ধর্ম ও সংস্কৃতির সাথে একাত্ম করে ফেলেছে। এ দেশের হিন্দুরা গানবাজনার মাধ্যমে আনন্দ উৎসবে মেতে উঠে।
৮. নির্যাতনের শিকার : বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সমূহের মধ্যে হিন্দুরা সবচেয়ে নির্যাতিত। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে তারা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। কিছু মৌলবাদী লোকের ধর্মীয় আক্রোশের কারণে তাদেরকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। কখনও কখনও তারা জীবন পর্যন্ত বিসর্জন দেয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, সংখ্যালঘু বলতে কোনো দেশে বা নির্দিষ্ট এলাকায় প্রধান ধর্মাবলম্বী গোষ্ঠী ব্যতীত অন্যান্য গোষ্ঠীর সদস্যদের বুঝায়। সে হিসেবে বাংলাদেশে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় বাকিরা সংখ্যালঘু বলে বিবেচিত। আমাদের দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠী।