স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্য তুলে ধর।

অথবা, স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের ধরন তুলে ধর।
উত্তর ভূমিকা :
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের স্থপিত। তাঁর দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বাঙালি জাতির মুক্তি ও গণমানুষের কল্যাণে তিনি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। তাঁর অসাম্প্রদায়িক চেতনায় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, অসীম ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞা বাঙালি জাতির মূল প্রেরণা হিসেবে ভূমিকা পালন করে। কাজেই স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের কোনো বিকল্প ছিল না।
স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব : বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি। তাঁর সাহসী নেতৃত্বের উপর ভর করে স্বাধীন বাংলাদেশের পথ চলা। নিচে স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো :
১. দূরদর্শী চেতনা : একজন সফল রাষ্ট্রনায়কের অন্যতম গুণ হলো দূরদর্শিতা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে দূরদর্শী গুণ পরিলক্ষিত হয়। তিনি প্রতিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে পরিস্থিতি, ঘটনা, প্রেক্ষাপট, বাস্তবতা উপলব্ধি করতেন। ফলে তাঁর সিদ্ধান্তে দূরদর্শিতার প্রমাণ মিলে। তাঁর ছয়দফা কর্মসূচি, অসহযোগ আন্দোলন ও স্বাধীনতার ঘোষণা প্রতিটি ক্ষেত্রে দূরদর্শিতার প্রমাণ পাওয়া যায়।
২. অসাম্প্রদায়িক চেতনা : বঙ্গবন্ধু ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার অধিকারী। পূর্ব বাংলার হিন্দু-মুসলিম সকল সম্প্রদায়ের কাছে তিনি সমান জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। ফলশ্রুতিতে বঙ্গবন্ধুর মুক্তিসংগ্রামের ডাকে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
৩. ব্যক্তিত্বসম্পন্ন : বঙ্গবন্ধু ছিলেন প্রখর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। কথাবার্তা, বাচনভঙ্গি, আচার আচরণ বক্তব্য ছিল বস্তুনিষ্ঠ। তিনি যা বলতেন তা পালনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। অসহযোগ আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর ব্যক্তিত্বে এ প্রভাব লক্ষণীয় ছিল।
৪. দৃঢ়প্রতিজ্ঞ : বঙ্গবন্ধু দৃঢ়প্রতিজ্ঞার অধিকারী ছিলেন। কোনো অন্যায় চাপের কাছে তিনি মাথানত করেননি। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হলে পাকিস্তান সরকার বিভিন্নভাবে সমঝোতার জন্য বঙ্গবন্ধুর উপর চাপ সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করেননি।
৫. ন্যায়পরায়ণ : বঙ্গবন্ধু ছিলেন ন্যায়পরায়ণ। তিনি নিজে যেমন অন্যায় করতেন না তেমনি অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতেন না। তিনি বাঙালি জাতির ন্যায্য পাওনা ও দাবি আদায়ে সংগ্রাম করেছেন। তিনি বাঙালি জাতির সাথে কখনো তাদের অধিকার নিয়ে ছলনা প্রতারণার আশ্রয় নেননি ।
৬. অসীম সাহসী : বঙ্গবন্ধু ছিলেন অসীম সাহসী। তিনি শক্তিশালী ও নিষ্ঠুর পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন, কোনো রক্তচক্ষু বা অস্ত্রের মুখে নিজেকে সমর্পণ করেননি। আন্দোলন করতে গিয়ে জীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি জেলে কাটিয়েছেন কিন্তু কখনো পাকিস্তানি সরকারের সাথে আপস করেননি। তার অসীম সাহসিকতার জন্য বাঙালি জাতি মুক্তিসংগ্রামের অনুপ্রেরণা লাভ করে।
৭. মানবতার প্রতীক : বঙ্গবন্ধু ছিলেন মানবতার প্রতীক। যেখানে নিরীহ নিরস্ত্র মানুষের উপর অন্যায়, অবিচার শোষণ, দমন দেখেছেন তার বিরুদ্ধেই বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। বৈষম্য ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন বঙ্গবন্ধু । আর এজন্য তাঁকে বহু ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বঙ্গবন্ধু ছিলেন পূর্ব বাংলার অবিসংবাদিত নেতা। একজন সফল রাষ্ট্রনায়কের যে গুণাবলির প্রয়োজন হয় তার সব গুণাব লিই ছিল বঙ্গবন্ধুর মধ্যে। তার ভিতরে জন্ম নিয়েছিল সম্মোহনী নেতৃত্ব। এ সম্মোহনী নেতৃত্বের গুণেই তিনি সমগ্র বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সৃষ্টি করেছিলেন। জাতিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। তিনি বাঙালি জাতির দিশারি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রাণপুরুষ । স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের ভূমিকা অবিস্মরণীয়।